দেশে ডিজিটাল সেবার পরিধি বাড়ায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেড়েছে বিপুলহারে। তবে ইন্টারনেট সেবার পরিধি বাড়লেও গ্রাহক সেবা তুলনামূলক বাড়েনি। উল্টো কলড্রপ, ইন্টারনেটে ধীরগতি ও নেট ব্যবহারে ব্যয় বেড়েছে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা অপারেটররা। বাজারে ছোট, মাঝারি নানা প্যাকেজ ছেড়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। হাতিয়ে নিচ্ছে শতকোটি টাকা। প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নেট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে টাকা নেই। আবার একটু ব্যবহারের পরই বলা হচ্ছে মেগাবাইট (এমবি) শেষ। কীভাবে শেষ হচ্ছে, এর কোনো জবাব নেই। ফাইভজির যুগে খোদ রাজধানীতেই মিলছে না থ্রিজি। রাজধানীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্পটে চলে টুজি। ৩০ দিনের ৪৯৯ টাকার ইন্টারনেটে ১০ মিনিট ইউটিউব দেখলেই নেট শেষ। ১০০ টাকা খরচ করলেও মেয়াদ শেষে দেখা গেছে বাকি বেঁধে দেওয়া হবে ৪০০ টাকার নেট উধাও। কোথায় গেছে কেউ বলতে পারে না।
তথ্যমতে, আগে গ্রামীণফোনের এক জিবি ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য ছিল ৪৬ টাকা। মেয়াদ ছিল ৩ দিন। বর্তমানে অপারেটরটির এক জিবি ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য ২৩ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ টাকায়। এদিকে ৩ দিন মেয়াদি বাংলালিংকের এক জিবি ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য ছিল ৪২ টাকা। যেটি এখন ২৬ টাকা মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ টাকায়। রবি আজিয়াটার ৩ দিন মেয়াদি ১ জিবি ইন্টারনেটের মূল্য ছিল ৪৮ টাকা। যেটি এখন ২১ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ টাকায়। অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকের ৭ দিন মেয়াদি এক জিবি ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য ছিল ২৭ টাকা, এখন ১৯ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ টাকায়।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বলছে, ফাইভজি চালু হলে ইন্টারনেট সেবার মান আরও বাড়বে। কিন্তু কীভাবে বাড়বে, মাস্টারপ্ল্যান নেই। এরই মধ্যে বহুল ব্যবহৃত ১৫ ও ৩ দিনের দুটি প্যাকেজ বাতিল করেছে সরকার। বলা হচ্ছে, এ দুই প্যাকেজের আড়ালে নেটের ব্যবহার না হলেও শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অপারেটররা। কিন্তু বাতিলের পর দেখা গেছে হিতে বিপরীত হয়েছে গ্রাহকদের। অপারেটররা এই সুযোগে সব প্যাকেজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ, প্রায় সব ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম এখন দ্বিগুণ। গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও রাষ্ট্রায়ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের বিরুদ্ধে উঠেছে এমন অভিযোগ।
গ্রামীণফোনের গ্রাহক মোমিনুল হকের অভিযোগ, তিনি ৮৯ টাকা রিচার্জ করে গ্রামীণফোনের এক জিবির একটি প্যাকেজ নেন। সেখানে শর্ত ছিল এই এক জিবির মেয়াদ হবে ৭ দিন আর বোনাস হিসাবে ফোরজি ইন্টারনেট পাবেন এক জিবি, যার মেয়াদ হবে এক মাস। অথচ তাকে ৫ দিনের মধ্যেই বলা হলো তার সব ইন্টারনেট শেষ। কীভাবে দুই জিবি ইন্টারনেট শেষ হলো, এর কোনো জবাব তিনি পাননি। কোনো ধরনের ডাউনলোড বা আপলোডও তিনি করেননি। মেইল চেক করা, ফেসবুক আর ২-৩টি নিউজ পোর্টাল ব্রাউজ করেছিলেন।
আমিনুল ইসলাম নামে আরেকজনের অভিযোগ, ১৬ টাকা রিচার্জ করে দুই দিন মেয়াদে শুধু ফেসবুক দেখতে এক জিবি ইন্টারনেট কেনেন। এটা কিনতেই তার অ্যাকাউন্ট থেকে ৪ টাকা বেশি। কেটে নিয়েছে। এরপরও তিনি এই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেননি। এর মধ্যেই দুই দিনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে তাকে নতুন প্যাকেজ নিতে হয়েছে। বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ক্রয়ের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একই সময়ে অপারেটরগুলোর ইন্টারনেটের ব্যয় বৃদ্ধি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।
মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাধারণ মানুষের অন্যান্য পণ্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে গেছে। একই সময়ে ইন্টারনেটের দাম বাড়ার বিষয়টি খুবই অযোক্তিক। ইন্টারনেটের দাম বাড়ার ফলে বর্তমানে ৩০ শতাংশ মানুষ এখন অনলাইনবিমুখ। সরকার যেখানে বলছে, প্রান্ত্রিক পর্যায়ে ইন্টারনেট পৌঁছে দেবে, সেখানে দাম বৃদ্ধির ফলে ডিজিটাল সেবাগুলোয় বাধা তৈরি করবে। আমাদের দাবি যেটি ছিল তা হচ্ছে, ইন্টারনেটের গায়ে কোনো মেয়াদ থাকবে না, যতটুকু ব্যবহার করবে ততটুকু এমবি কাটবে। আমাদের প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লেও মনিটরিং বাড়েনি। অপারেটরগুলো বিটিআরসির অনুমোদন ছাড়া কিন্তু অপারেটরগুলো এটি করেনি। দেরিতে হলেও বিটিআরসি বা মন্ত্রী মহোদয় দাম বাড়ার বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন, সে জন্য ধন্যবাদ জানাই।