টেলিকম খাতের পরিষেবা উন্নয়নে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নয়নে বর্তমানে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে ভারতীয় কোম্পানিগুলো। সম্প্রতি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাসেনচারের প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ভারতীয় টেলিকম অপারেটরগুলো বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় প্রযুক্তি পরীক্ষায় এগিয়ে রয়েছে। অ্যাসেনচারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও গ্লোবাল টেকনোলজি লিড মাথাঙ্গি সান্দিলিয়া জানান, ভারত বৈশ্বিক প্রযুক্তি অনুসরণ করছে না। দেশটির বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ফাইভজি প্রযুক্তির প্রাথমিক গ্রহণকারী হবে, যা ভারতীয় টেলিকম অপারেটরদের ফাইভজি পরিষেবা প্রদানের রাস্তা প্রশস্ত করবে।
সান্দিলিয়া বিশ্বাস করেন, ভারতের টেলিকম কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের থেকে ফাইভজি পরিষেবার জন্য আরো অর্থ উপার্জন করতে পারে। তবে এজন্য ফাইভজি পরিষেবা গ্রহণে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ে গ্রাহকদের ইচ্ছা থাকতে হবে। তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী এমনটাই হচ্ছে। ভারত এখনো বাধ্যতামূলক ফাইভজি ব্যবহারের ব্যবস্থা করেনি, যা ভোক্তাদের আরো বেশি অর্থ প্রদানে বাধ্য করবে। সুতরাং এটি না হওয়া পর্যন্ত টেলিকম কোম্পানিগুলোকে এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে ফাইভজি মনিটাইজেশনে কাজ করতে হবে।
রিলায়েন্স জিও এবং ভারতী এয়ারটেল বর্তমানে ফাইভজি পরিষেবার জন্য অতিরিক্ত কোনো চার্জ নিচ্ছে না। তবে উভয় কোম্পানিই নতুন ফাইভজি ভোক্তা ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে পরিষেবার পরিধি বাড়ানোর ও ব্যবহারের সুযোগ খুঁজছে। এছাড়া তারা যৌথভাবে নতুন ফাইজি অ্যাপ্লিকেশন বিকাশের জন্য অংশীদারত্ব গঠন করেছে।
জিও ও এয়ারটেল অগমেন্টেড রিয়ালিটি/ভার্চুয়াল রিয়ালিটি, এআই, রিমোট মনিটরিং ও ক্লাউড গেমিংয়ের মতো সেবায় ফাইভজি ব্যবহারের উপায় খুঁজছে ও কাজ করছে। এরিকসনের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতীয় ফাইভজি ব্যবহারকারীরা আশা করেন যে প্রযুক্তিটি কেবল আরো শক্তিশালী নেটওয়ার্ক কভারেজ দেবে না, বরং উদ্ভাবনী অ্যাপ ব্যবহারের সুবিধা নিয়ে আসবে। প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব হলে ফাইভজি পরিকল্পনায় নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনে ব্যবহারকারীরা ৪৫ শতাংশ বেশি অর্থ প্রদানে ইচ্ছুক বলেও জানা গেছে।
সান্দিলিয়া আরো জানান, উৎপাদন, খনিজ উত্তোলন, কৃষি ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে ফাইভজির ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘অটো ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে কিছু কারখানায় ফাইভজির পরীক্ষামূলক পর্যায় শেষ হয়েছে। এখন বড় পরিসরে প্রাইভেট ফাইভজি নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ব্যবহার শুরু করেছে।’
এন্টারপ্রাইজ ফাইভজির বিকাশে ভারতীয় টেলিকম কোম্পানিগুলোর মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এটি টেলিকম অপারেটরদের জন্য একটি বড় সুযোগ, তবে তাদের অবশ্যই ফাইভজি পরিষেবাকে শুধু নেটওয়ার্ক সমাধান হিসেবে নয়, বরং ফাইভজি প্রযুক্তির অন্যান্য সুবিধাও সাধারণ গ্রাহকের সামনে তুলে ধরতে হবে। এক্ষেত্রেই মানসিকতার পরিবর্তন খুব জরুরি।
অ্যাসেনচারের মতে, ভারতীয় টেলিকম অপারেটরদের প্রাইভেট ফাইভজি সাফল্যের জন্য টেলিকমকে শুধু কানেক্টিভিটি হিসেবে ধরে রাখা যাবে না। পাশাপাশি এর মাধ্যমে আরো সুবিধা পাওয়ার বিষয়টিকে তুলে ধরতে হবে এবং সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।