গত বছর ভারতের বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে ফাইভজি প্রযুক্তির যাত্রা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সব কোম্পানি এ পরিষেবা দিতে না পারলেও পরিধি বাড়ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ও স্থিতিশীল ফাইভজি পরিষেবা দিতে তরঙ্গের পরিমাণ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে দেশটির টেলিযোগাযোগ খাতসংশ্লিষ্টরা।
ফাইভজির পাশাপাশি সিক্সজি প্রযুক্তি ব্যবহারে নেতৃস্থানীয় অবস্থান তৈরিতেও ভারত সরকার কাজ করছে। আর এজন্য তরঙ্গ বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে সেলুলার অপারেটরসও অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার (সিওএআই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসপি কোচার বলেন, ‘২০৩০ সাল নাগাদ ফাইভজি বা সিক্সজির ব্যবহার নিশ্চিতে মিড ব্যান্ডে প্রতিটি কোম্পানির ২ গিগাহার্টজ তরঙ্গ প্রয়োজন।’
মিড ব্যান্ডে ফাইভজি ও সিক্সজির জন্য সবচেয়ে কার্যকর স্পেকট্রাম হচ্ছে ৩ দশমিক ৩ থেকে ৪ দশমিক ২ গিগাহার্টজ। সি-ব্যান্ডের মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা গেলে তা টেলিযোগাযোগ খাতের জন্য বেশ কার্যকর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভারতের সামরিকসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ খাতে উন্নত স্পেকট্রাম বা তরঙ্গ ব্যবহৃত হচ্ছে। যে কারণে ফাইভজি ও সিক্সজির জন্য নতুন করে স্পেকট্রাম বরাদ্দ পাওয়া কঠিন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মোবাইল টেলিকমিউনিকেশনের (আইএমটি) জন্য ৬ গিগাহার্টজ স্পেকট্রাম ব্যবহার করা যাবে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
কোচার বলেন, ‘ফাইভজি বা সিক্সজির জন্য ৬ গিগাহার্টজ উপযুক্ত। গত বছর ফাইভজির জন্য ৩ দশমিক ৩ গিগাহার্টজে যে স্পেকট্রাম বিক্রি করা হয়েছে সেটির সঙ্গে মিল রয়েছে।’
সাধারণ ১ থেকে ৬ গিগাহার্টজ পর্যন্ত তরঙ্গকে মিড-ব্যান্ড বলা হয়। বর্তমানে ২ দশমিক ৪ ও ৫ গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সিকে ওয়াইফাইয়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে ৬ গিগাহার্টজ অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ ব্যান্ডকে যদি আইএমটি হিসেবে চিহ্নিত করা হয় তাহলে টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানিগুলো ফাইভজি ও সিক্সজির জন্য নিলামে তা কিনতে পারবে। তবে প্রযুক্তি খাতসংশ্লিষ্টরা ওয়াইফাইয়ের ব্যবহার থেকে এ ব্যান্ডের অনুমোদন বাতিল করতে চাইছে।
টেলিকম কোম্পানিগুলোর মতে, যদি এ ব্যান্ডের অনুমোদন বাতিল করা হয় তাহলে কানেক্টিভিটির জন্য পর্যাপ্ত স্পেকট্রাম থাকবে না। বিশেষ করে ফাইভজির পরিপূর্ণ বিস্তার ও সিক্সজি উন্মোচনের ক্ষেত্রে এটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। কোচার বলেন, ‘সম্মিলিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ফাইভ ও সিক্সজি দুটোর জন্যই একই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা যায়। আইএমটির জন্য ৬ গিগাহার্টজ বরাদ্দ করলে তা টেলিকম কোম্পানিগুলোকে ভালো পরিমাণ স্পেকট্রাম বা তরঙ্গ সরবরাহে সহায়ক হবে। এর মাধ্যমে কানেক্টিভিটিতে বিদ্যমান সমস্যাও দূর হবে।’
স্পেকট্রাম বা তরঙ্গের বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি ভারতের টেলিকম কোম্পানিগুলো পরিষেবা উন্নয়নে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারেও এগিয়েছে। সম্প্রতি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাসেনচারের প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ভারতীয় টেলিকম অপারেটরগুলো বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় প্রযুক্তি পরীক্ষায় এগিয়ে রয়েছে।
অ্যাসেনচারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও গ্লোবাল টেকনোলজি লিড মাথাঙ্গি সান্দিলিয়া জানান, ভারত বৈশ্বিক প্রযুক্তি অনুসরণ করছে না। দেশটির বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ফাইভজি প্রযুক্তির প্রাথমিক গ্রহণকারী হবে, যা ভারতীয় টেলিকম অপারেটরদের ফাইভজি পরিষেবা প্রদানের রাস্তা প্রশস্ত করবে।
সান্দিলিয়া বিশ্বাস করেন, ভারতের টেলিকম কোম্পানিগুলো গ্রাহক থেকে ফাইভজি পরিষেবার জন্য আরো অর্থ উপার্জন করতে পারে। তবে এজন্য ফাইভজি পরিষেবা গ্রহণে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ে গ্রাহকের ইচ্ছা থাকতে হবে।