ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, ঘরে ঘরে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌছে দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। ইতোমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় দেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যন্ত উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ পৌছে দেয়া সহ দেশের সাড়ে তিন লাখ কিলোমিটার এলাকা অপটিক্যাল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় আনা হয়েছে। ২০০৬ সালে দেশে অপটিক্যাল ফাইভার সংযোগ ছিল মাত্র ৫০ হাজার কিলোমিটার। ইন্টারনেট সাধারণের জন্য ব্যয় সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য করতে প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেটের দাম ৬০ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে ২০০৬ সালে প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেটের দাম ছিল ৭৮ হাজার টাকা বলে উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী।
জুনাইদ আহমেদ পলক আজ সোমবার রাজধানীর বনানীতে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি’র নিজস্ব কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো: মহিউদ্দিন আহমেদ এবং আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগেই নগর থেকে ইন্টারনেটের ঝুলন্ত তার মাটির তলদেশে নিয়ে যেতে আইএসপি উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের শহরকে বিপদমুক্ত করতে সকল অভারহেড ক্যাবল মাটির নীচ দিয়ে নিতে চাই। এ ব্যাপারে আইএসপিএবি, এনটিটিএনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আর্কিটেক্ট অব ডিজিটাল বাংলাদেশ সজীব ওয়াজেদ জয় এর পরামর্শে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অভাবনীয় সফলতা বিশ্বের অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অত্যন্ত পরিতাপের সাথে বলতে হয় দেশের তথ্য পাচার হয়ে যাবে এই অজুহাতে ১৯৯২ সালে বিনা টাকায় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ গ্রহণ থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করে তৎকালিন সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের পর ভি-স্যাটের মাধ্যমে ইন্টারনেটের অভিযাত্রা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের ৯৮ ভাগ অঞ্চল ৪জি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের মেরুদণ্ড হবে ইন্টারনেট। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে ইন্টারনেট বিপ্লবে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে আইএসপিএবি’র ৩ হাজার উদ্যোক্তা। করোনায় তাদের প্রত্যেকে যোদ্ধার ভূমিকা রেখেছে। সেবা পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ও এর কারিগরি বিষয় সমূহ নিয়ে গ্রাহকদের সচেনতার দায়িত্ব রয়েছে আপনাদের। প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। আপনি আজ যা শিখছেন আগামীকাল তা কাজে নাও লাগতে পারে। এজন্য প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে সাথে আপনাকেও এ পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে হবে। এজন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।
সদস্যদের স্মার্ট প্রশিক্ষণের জন্য জুনাইদ আহমেদ পলক আইএসপিএবি কার্যালয়ে একটি ডিজিটাল ল্যাব স্থাপনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ১৭ কোটি মানুষকে ব্রডব্যন্ড ইন্টারনেটের আওতায় আনতে চাই। পাবলিক প্রাইভেট অংশীদারিত্বে আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে এক লাখ সংযোগ দেয়া হবে। এজন্য আপনাদের আরো দক্ষ হতে হবে। বিটিআরসি অভিভাবক হিসেবে আইএসপি ব্যবসাকে টেকসই করবে। তাদের মাধ্যমে ঘরে ঘরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে ইন্টারনেট প্রযুক্তির প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। ইন্টারনেট প্রযুক্তি দেশে নতুন অর্থনীতির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। কৃষক- শ্রমিক, প্রবাসী এবং গার্মেন্টেসের নারী কর্মীদের বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে আইটি তরুণ –তরণী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আইএসপি ডিশ ব্যবসা নয়। এখানে দক্ষ ও মেধাবী হতে হবে। তাই পেশাদারিত্বে আপনাদের স্মার্ট হতে হবে। নীতিমালা ও গাইড লাইন সময়োপযোগী করতে হবে।
পরে প্রতিমন্ত্রী আইএসপিএবির স্থায়ী কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন।