মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিনিয়তই গ্রাহকদের নানান রকম অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন সংস্থা (বিটিআরসি)তে। এর প্রেক্ষিতে ডাটা স্প্রিড ও ভলিউম নিয়ে গত এক বছরে অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগ জমা পড়েছে প্রায় ২৯৫ টি অর্থাৎ প্রায় ৩০০ টি অভিযোগ। এর মধ্যে এখনও ঝুঁলে আছে প্রায় ১৬ জন গ্রাহকের অভিযোগ।
বিটিআরসি’র প্রাপ্ত তথ্যমতে, গেলো বছরের ১ মে থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগ জমা পড়েছে প্রায় ২৯৫টি। এর মধ্যে ডাটা স্প্রীড ও ডাটা ভলিউম নিয়ে গ্রাহকদের ভোগান্তির শীর্ষে রয়েছে রবি আজিয়াটা। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগ জমা পড়েছে প্রায় ১৫৬টি। এর মধ্যে ডাটা স্প্রিড নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ৩১টি যার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২৯ টি এছাড়া ভলিউম ইস্যু নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ৪৬টি যার মধ্যে নিষ্পত্তি রয়েছে ৪৩টি। অর্থাৎ ডাটা স্প্রিড ও ভলিউম নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এক বছরে অভিযোগ জমা পড়েছে ১৫৬টি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিটিআরসিতে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে যে পরিমান অভিযোগ করছে প্রকৃত অর্থে অভিযোগকারী অনেক বেশি। শুধুামাত্র যে গ্রাহকগুলো খুব বেশি সচেতন বা শহরে বাস করে কেবল তাদের মধ্যে থেকে কিছু কিছু গ্রাহক অভিযোগ করে থাকেন। মফস্বলে বিপুল সংখ্যক গ্রাহক নানাভাবে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছে- যারা প্রতারণা বা হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ করতে পারছে না। কেননা ভোগান্তির শিকার হলে সংশ্লিষ্ট জায়গায় অভিযোগ করা সেটিও অনেক গ্রাহক জানে না।
তারা আরও জানায়, দেশে উন্নত প্রযুক্তি ফোরজি সেবা চালু হলেও মানসম্মত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। বরং নেটওয়ার্ক অসক্ষমতা ও কল ড্রপ বাড়ছে। ঢাকার বাইরে অনেক এলাকায় এখন নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক থাকে না। গ্রামের অনেক গ্রাহক প্রযুক্তির সম্পর্কে জ্ঞানহীন, তারা প্রতারণার শিকার হলেও বুঝতে পারেন না। আবার কেউ বুঝলেও সংশ্লিষ্ট জায়গায় অভিযোগ করতে পারেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলালিংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ইউজার বেশি হলে সাধারণত নেটওয়ার্কের সমস্যা হয়। দেশ এখন প্রযুক্তিগত ট্রানজিশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে কিছু কিছু জায়গায় গ্রাহক নেটওয়ার্কজনিত সমস্যায় পড়ছেন। টেক নিউট্রালিটিও (প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা) করা হচ্ছে। ফোরজি’র সেবা শুধু স্পেকট্রামের ওপরই নির্ভর করে না, টোটাল ইকো সিস্টেমের ওপর এর গতি নির্ভর করে।’
সম্প্রতি মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সেবার মান নিয়ে রাজধানীসহ দেশের ১৮টি জেলায় নিরিক্ষা পরিচালনার করলেও সেখানে ডাটা স্প্রিড ও ডাটা ভলিউমের নিয়ে অসন্তোষ প্রকাক করে বিটিআরসি। কোয়ালিটি অব সার্ভিসের বে মার্ক অনুযায়ি, থ্রিজিতে ডাউনলোডের সর্বনি¤œ গতি ২ মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ড (এমবিপিএস) আর ফোরজিতে ডাউনলোডের সর্বনি¤œ গতি হওয়ার কথা ৭ মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ডে (এমবিপিএস)। থ্রিজিতে টেলিটক ছাড়া অন্য তিন অপারেটরের গতি ৩ এমবিপিএসের ওপরে হলেও টেলিটকের গতি ১ দশমিক ৬৩ এমবিপিএস। অন্যদিকে ফোরজিতে কোন অপারেটরই নির্ধারিত এই মান পূরণ করতে পারেনি। রাজধানীতে ফোরজিতে গ্রামীণফোনের ডাউনলোড স্পিড ৫ দশমিক ৮৮ এমবিপিএস, রবির ৫ দশমিক ৯১ এমবিপিএস ও বাংলালিংকের ৫ দশমিক ১৮ এমবিপিএস। তবে ফোরজিতে আপলোড গতি জিপির ২ দশমিক ৫৫, রবির ২ দশমিক ৫০ এবং বাংলালিংকের ২ দশমিক ৩৩ এমবিপিএস। অর্থাৎ ফোরজির মান সম্মত সেবা প্রদানে ব্যর্থ মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো।
রাজধানী ছাড়াও চার বিভাগের ১৮ জেলায় মোবাইল ফোন অপারেটরদের সেবার মান নিয়ে পরিক্ষা চালায় বিটিআরসি। খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় ড্রাইভ টেস্ট পরিচালনা করে বিটিআরসি। ফোরজি’র জন্যে সর্বনি¤œ সাত এমবিপিএস গতিতে সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে দেখা গেছে, বাংলালিংক ফোরজিতে তিন দশমিক ৫৬ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। বাকি দুই অপারেটর গ্রামীণফোনের ফোরজি ইন্টারনেটের গতি ৫ দশমিক ১ এমবিপিএস এবং রবি’র আছে ৪ দশমিক ৮৯ এমবিপিএস গতি। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত্ব অপারেটর টেলিটক যেহেতু ঢাকার বাইরে এখনো ফোরজি নিয়ে যেতে পারেনি, তাই ড্রাইভ টেস্টের এই অংশটিতে তারা হিসাবের মধ্যে আসেনি।