আবারও ৩ দিন মেয়াদি মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু হবে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়েছেন, গ্রাহকদের পছন্দের সব ডাটা প্যাকেজ পুনর্বহালে এরইমধ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই মোতাবেক কাজ শুরু করেছে কমিশন।
গত বছরের ১৫ অক্টোবর বিটিআরসি’র নির্দেশে ৩ ও ১৫ দিনের ডাটা প্যাকেজ উঠিয়ে দেয় মোবাইল অপারেটররা। ৭ দিন, ৩০ দিন ও আনলিমিটেড-এই তিন মেয়াদের ৯৫টির পরিবর্তে প্যাকেজ সংখ্যা নামিয়ে আনা হয় ৪০টিতে।
যদিও সেই সময় খোদ বিটিআরসি’র জরিপেই উঠে আসে প্রায় ৭০ শতাংশ গ্রাহক ব্যবহার করেন তিন দিনের ডাটা প্যাকেজ। তাই নতুন নির্দেশনা নিয়ে তীব্র আপত্তি তোলেন গ্রাহক ও মোবাইল অপারেটররা, যদিও তা ধোপে টেকেনি। নতুন ডাটা প্যাকেজ চালুর পর অক্টোবর থেকে জানুয়ারি- টানা চার মাসে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক কমে যায় প্রায় ৩১ লাখ।
শাকিল হোসেন নামের একজন গ্রাহক বলেন, এতো বেশি টাকা দিয়ে একবারে এতো ইন্টারনেট প্রয়োজন পড়ে না। সাধারণত বাসা-বাড়িতে থাকলে এই মোবাইল ডাটার প্রয়োজন পড়ে না। তাই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে মোবাইল ডাটা আর কেনা হয় না।
ইয়াশফি নামের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, একবারে এতো বেশি পরিমাণ ডাটা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে প্রয়োজন স্বার্থে অল্প পরিমাণ ডাটা কিনতেই পছন্দ করে সবাই। যখন প্রয়োজন পড়বে, তখন কেনা হয় এইসব ডাটা। ১৫ দিনের জন্য বা ১ মাসের জন্য পুরো ডাটা কিনতে বাধ্য করার কোনো যৌক্তিকতা দেখছি না।
এদিকে কমেছে মোবাইল অপারেটরদের আয়ও। ২০২৩ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক অর্থাৎ এপ্রিল-জুনে জিপি, রবি ও বাংলালিংকের বিক্রিত সেবার আয় ছিল ৭ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। সেইসঙ্গে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। চতুর্থ প্রান্তিক অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বরে আয় বাড়লেও, প্রবৃদ্ধির হার ছিল ঋণাত্মক ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এই ঋণাত্মক ধারা অব্যাহত আছে চলতি বছরেও।
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, ‘আমাদের অধিকাংশ গ্রাহকই তিনদিনের প্যাকেজটা বেশি পছন্দ করে থাকে। তাই এ প্যাকেজটা বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে মোবাইল অপারেটরদের আয়ের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।’
একই ধরনের কথা জানিয়েছেন রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার সাহেদ আলম। তিনি বলেন, গ্রাহকদের পছন্দ অনুযায়ী সেবা দিতে হবে। তাদেরকে কোনো কিছুতে বাধ্য করে বা তাদের ইচ্ছার বাইরের কোনো প্যাকেজ চাপিয়ে দেওয়া হলে, মোবাইল অপারেটরদের ক্ষতি হবে। এতে সরকারও রাজস্ব হারাবে।
এঅবস্থায় জনপ্রিয় সব ডাটা প্যাকেজ আবারো চালু করতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছেন তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, গ্রাহকদের যেটা পছন্দ, সেখানে অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা যদি ছোট প্যাকেজগুলো পছন্দ করে থাকেন, সেক্ষেত্রে এ ব্যাপারে যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিটিআরসির সর্বশেষ তথ্যমতে— দেশে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১২ কোটি ৫১ লাখ গ্রাহক। তবে টানা চার মাসে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক কমে যায় প্রায় ৩১ লাখ।