বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেডের কোম্পানি সচিব এ.কে.এম লতিফুল কবির। অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া এই কর্মকর্তা ডাটা সেন্টারে লুটপাটের প্রধান কারিগর। তিনি পলকের ফাইন্যান্সার হিসেবেও পরিচিত।
ডাটা সেন্টার প্রকল্প কালীন সময়ে লতিফুল কবির সিস্টেম এনালিস্ট পদে দ্বায়িত্ব পালন কালে প্রতিমন্ত্রীর নজর কাড়েন। সেই থেকে ফোর টায়ার ডাটা সেন্টারের কর্তাব্যক্তিতে পরিণত হন কবির।
প্রকল্পের যাবতীয় অবৈধ কর্মকাণ্ডের সাথে ওতোপ্রোতভাবে মিশে আছে কবিরের নাম। প্রকল্পের সকল ঠিকাদার, সাপ্লায়ার, সাব-কন্ট্রাক্টর হতে প্রশাসনিক ক্ষমতা বলে নিয়ম করে টাকা আদায় করতেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, আইসিটি বিভাগের একাধিক সূত্রে জানা যায় প্রকল্পের অবৈধ আয়ের একটা অংশ প্রতিমন্ত্রী পলকের কাছে চলে যেতো বলেই সকল অপকর্ম আড়াল হয়ে যেতো।
সামান্য সিস্টেম এনালিস্ট পদে থাকা অবস্থায় ঢাকার অভিজাত এলাকায় একাধিক নিজস্ব ফ্ল্যাট, গাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক বনে যান তিনি। বর্তমানে তিনি মোহাম্মদীয়া হাউসিং সোসাইটির নিজস্ব ফ্ল্যাটে থাকেন।
প্রকল্প সমাপ্তির পরে ডাটা সেন্টার কোম্পানিতে ব্যবস্থাপক জেনারেশন সিস্টেম পদে পদায়ন হন। সেই থেকে তার দূর্নীতির নতুন মাত্রা যোগ হয়। কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ সকল ভেন্ডর ও সাপ্লায়ার নিয়োগের ক্ষেত্রে তার সরাসরি হস্তক্ষেপ রয়েছে বলে জানা যায়।
ডাটা সেন্টারের ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান Level -3 হতে অপ্রয়োজনীয় ভাবে ৪০ জিবি ইন্টারনেট ক্রয়ের চুক্তি করা হয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় ৩ গুণ বেশি। যার ফলে এই ৪০ জিবি ইন্টারনেট সরবরাহের চুক্তি অনুযায়ী বিডিসিসিএল এর পক্ষ থেকে মাসে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা বিল পরিশোধ করা হয়ে থাকে যার একটি বড় অংশ নিয়ে থাকেন এই লতিফুল কবির। অতিসম্প্রতি ডাটা সেন্টারে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নামে বড় অংকের অর্থ আত্মসাৎ করার প্রচেষ্টা চালানো হলে তা কতৃর্পক্ষের হস্তক্ষেপে স্থগিত করা হয়েছে।
এছাড়াও কোম্পানির বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি (AMC) এর আওতায় নিযুক্ত র্যানপাওয়ার-কাইজেন-রেনিডেন্স (JV) কোম্পানির সাথেও রয়েছে কবিরের যোগসাযশ। র্যানপাওয়ার কোম্পানিটির মূল কর্তাব্যক্তিরাই বলেছেন যে, তাদের কোম্পানিটি কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে কবিরের হস্তক্ষেপ ছিল। উল্লেখ্য যে, উক্ত র্যানপাওয়ার কোম্পানি ডাটা সেন্টারের সহিত রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির সকল শর্তাবলী লংঘন করে তাদের বিল আদায় করে যাচ্ছে। এ যেনো এক স্বেচ্ছাচারী প্রতি যা লতিফুল কবিরের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় সম্ভব হয়েছে।
কোম্পানির মূল দুজন মালিক হচ্ছেন জুয়েল আহমেদ শাকিল, যিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা এবং মোঃ ইমরান ছিলেন যুবলীগের নেতা সেই সাথে লতিফুল কবিরের রাজনৈতিক বড় ভাই। এখানে জেনে রাখা দরকার যে, লতিফুল কবির আহসানুল্লাহ ইউনিভার্সিটির ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং বংগবন্ধু পরিষদের সদস্যও ছিলেন বলে জানা যায়। যা কোটা বিরোধী আন্দলোনে শিক্ষার্থীদের বিপরীতে অবস্থান নেয়।
কোম্পানির সকল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রয়েছে কবিরের ঘনিষ্ঠজনদের নিয়োগের অভিযোগ। অতিসম্প্রতি বিডিসিসিএল এর নিয়োগ কমিটির সদস্য হওয়ায় এসব নিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের রেফারেন্স দিয়ে পদ ভেদে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।
এই অবৈধ আয়ের উৎস থেকে পলকের গত নির্বাচনে ইনভেস্টর হিসেবে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন বলে জানা যায়।
তার এসব অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেলে তাকে তার কোম্পানি সচিবের অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব হতে অপসারণ করা হয়।
উল্লেখ্য, এ.কে.এম লতিফুল কবিরের বিরুদ্ধে উপর্যুক্ত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে গত ২২আগস্ট,২০২৪ তারিখে তাকে নিজ পদ হতে দ্বায়িত্ব পালনে বিরত থাকতে বলা হয়। আইসিটি ডিভিশনের উপ-সচিব জনাব জিল্লুর রহমান এর স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে উক্ত নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সুবিধা ভোগীদের আরেকজন হচ্ছেন ইরেশ সারোয়ার যিনি ফোর টায়ার জাতীয় ডাটা সেন্টার প্রকল্প কালীন সময়ে সিস্টেম এনালিস্ট পদে থাকা অবস্থায় লতিফুল কবিরের সকল অপকর্মের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। দুজনেই একই পদবীধারী হওয়ায় সম্মিলিত ভাবে পলকের আস্থাভাজন হয়ে উঠেন। অবৈধ ভাবে নিয়োগ পাওয়া এই ইরেশ সারোয়ারের রয়েছে শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে নানা প্রশ্ন।
আইসিটি মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানা যায় যে, ব্যবস্থাপক ইরেশ সারোয়ার একাধিক দেশের (বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া) পাসপোর্ট সংরক্ষণ করছেন অর্থাৎ দ্বৈতনাগরিকত্ব নিয়েছেন। যা ডাটা সেন্টারের মত এমন একটি স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই ঝুকিপূর্ণ।
এমনকি অস্ট্রেলিয়াতে রয়েছে ইরেশ সারোয়ারের নিজ নামে লাইসেন্সকৃত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যা বিডিসিসিএল এর নিয়োগ বিধির সু-স্পষ্ট লংঘন। প্রতিমন্ত্রী পলক গ্রেফতার হলেও আজও ধরা পড়েনি তার সুবিধা ভোগীদের একটি বিশাল অংশ। যার মধ্যে উল্লিখিত ইরেশ সারোয়ার অন্যতম। ইরেশ সারোয়ার বিডিসিসিএল এর বোর্ড মেম্বার রকিব আহমদের ঘনিষ্ঠজন রকিব আহমদ স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে বিডিসিসিএলে বোর্ড মেম্বার হিসেবে আছেন। যিনি তথাকথিত কে.জে.এস এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড পরিচালক বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় যে, এই রকিব আহমদ পঅলকের পক্ষে ডাটা সেন্টারের সকল আর্থিক অনিয়মের মধ্যস্ততাকারী হিসেবে কাজ করে থাকেন। অর্থাৎ ইরেশ সারোয়ার এই রকিব আহমদকে দিয়েই তার আর্থিক স্বার্থ আদায় করে থাকেন। কোনো প্রকার যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা বিবেচনায় না নিয়ে শুধুমাত্র পলকের নির্দেশে এই রকিব আহমদকে বোর্ড ডিরেক্টর করা হয়। হাসিনা সরকারের পতন এবং প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের গ্রেফতারের পরে তথাকথিত বোর্ড মেম্বার রকিব আহমদ পলাতক আছেন বলে জানা যায়।