অধিকার আদায়ে এবার মাঠে নামছে টেলিটক ডিস্ট্রিবিউটররা। এসআরওদের তিন বছর ধরে মার্কেটিং খরচ না দেওয়া, নতুন সেট ও রিচার্জের কমিশন না দেওয়া এবং জামানতের টাকা ফেরত চেয়ে এবার টেলিটক পরিচালনা বোর্ড-কে আল্টিমেটাম দিতে যাচ্ছে টেলিটক ডিস্ট্রিবিউটর এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (টিডিএবি)।
রবিবার ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটের সাগর রুনী হলে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেয়া হবে। এ নিয়ে টিডিএবি সভাপতি রেজাউল করিম জাহাঙ্গীর বলেছেন, বেশি কয়েক মাস ধরেই আমরা বিষয়গুলো নিয়ে টেলিটক পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করছি। আলোচনার মাধ্যমে আমরা ৭ দফা থেকে ২টি মৌলিক দাবিতে নেমে আসি। এ নিয়ে গত সোমবার টেলিটক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর মাবুদ চৌধুরী স্যারের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলাম। এক পর্যায়ে আমরা বিষয়গুলো উপদেষ্টা মহোদয়কে অবহিত করার প্রস্তাব দিলে তিনি আমাদেরকে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে রাগ করে বৈঠক থেকে উঠে যান। ফলে এখন আমরা আন্দলোনে যাওয়া বিষয়টি মনস্থির করছি।
কী ধরনের আন্দোলন করবেন প্রশ্নের জবাবে টিডিএবি সাধারণ সম্পাদক মোঃ নূরুল ইসলাম জানান, রাতে (শনিবার) বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তিনি বলেন, টেলিটক এর জন্মলগ্ন থেকে আমরা ডিস্ট্রিবিউটর। ২০২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসআরওদেরকে টেলিটক বেতন দিতো। কিন্তু পৌনে তিন বছর ধরে দিচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেলিটক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো ডিড নেই। এখন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও নতুন সংযোগ প্রতি পেপার জমা দেয়ার সাপেক্ষে প্রাপ্ত কমিশন এবং তিন মাসের রিচার্জে ইউজেস কমিশন পর্যন্ত দেয়া হয় না। এতে প্রত্যেক ডিলার হাউজের গড়ে বছরে ন্যূনতম নিট ক্ষতি হয় ৬ লাখ টাকা। এমন পরিস্থিতিতে যারা ব্যবসায় ছেড়ে দিয়েছেন
তিন মাস পেরিয়ে গেলেও তাদের জামানতের টাকা ফেরত দেয়া হয়চ্ছে না। এখন আমরা সবাই প্রথমে নেয়া ১ লাখ টাকা বাদে অতিরিক্ত জামানতের সমুদয় অর্থ ফেরত চাই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে টেলিটক সিমে ভিওআইপি’র দায়ে এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি প্রতিষ্ঠানটিকে ছয় কোটি টাকা জরিমানা করেছে। যেহেতু ডিস্ট্রিবিউটরদের মাধ্যমেই এসব সিম বিক্রি হয়েছে তাই ডিলারের জামানত ফেরত দেয়ার বিষয়ে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ব অপারেটরটি। একই সঙ্গে বক্স সিম বিক্রিতেও কড়াকড়ি আরোপ করে। এতে ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে।
টেলিটক বাংলাদেশের মার্কেটিং বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার গোলাম ফজলে রাব্বি , টেলিটকের এখন মোট ডিলার ৯৮ জন। তাদের প্রায় সব দাবিই পূরণ করা হয়েছে। কেবল বেতন সংশ্লিষ্ট মার্কেটিং খরচের দাবিটা বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া পূরণ সম্ভব নয়। কেননা, এ নিয়ে কোনো চুক্তি তাদের সঙ্গে নেই। এভাবে বেতন দেয়ার বিধি টেলিটক আইনে নেই। তাই বিষয়টি বোর্ডে ওঠানো হবে। বোর্ডের সিদ্ধান্ত নিয়ে এর সমাধান করা সম্ভব হবে।
অবশ্য টিডিএবি নেতাদের ভাষ্য, অফিস অর্ডারের মাধ্যমে ডিলার হাউজের মার্কেটিংয়ের জন্য এসআরও এবং ডিস্ট্রিবিউটরদের বেতন দেয়া হঠাৎ করেই ২০২২ সালে বন্ধ করে দেয়া হয়। এ নিয়ে কোনো নোটিশও দেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে দেন-দরবার চলছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে টেলিটক’র মার্কেটিং জিএম বলেছেন, আমি এসে আর এটা দেইনি। কেননা এটা নিয়মে ছিলো না।
এ বিষয়ে মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন মহিউদ্দিন আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে টেলিটক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি জানতে পেরেছি, এ বিষয়ে আগে বোর্ডের অনুমোদন ছিলো না। তাই সহজেই প্রশ্ন জাগে তাহলে এই বাবদ যখন টেলিটক বছরে ৪ কোটি টাকা ব্যয় করেছে সেটা কীভাবে করেছে। ওই ব্যয় তো অবৈধ। অর্থাৎ এখানে বড় ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। তাই বিষয়টির তদন্ত হওয়া দরকার। একইসঙ্গে টেলিটক সিমে ভিওআইপি’র সঙ্গে ডিলার না কর্মকর্তা কারা জড়িতো তারও অবিলম্বে অনুসন্ধান করা দরকার।
এদিকে প্রায় মাস খানেক ধরে বন্ধ থাকা টেলিটক অ্যাপটি গতকাল শুক্রবার থেকে ফের সচল হয়েছে। তবে অ্যাপ বন্ধ থাকায় নতুন ডিলাররা সমস্যায় পড়লেও পুরোনো ডিলার কিংবা অধিকাংশ গ্রাহকই রিচার্য করতে গিয়ে খুব একটা সমস্যায় পড়েননি বলে দাবি করছে অপারেটরটি। এ নিয়ে গোলাম ফজলে রাব্বি বলেছেন, আমাদের ৭৫ শতাংশ গ্রাহকই এমএফএস এ রিচার্জ করেন। ফলে অ্যাপ বন্ধ থাকায় গ্রাহক পর্যায়ে ততটা সমস্যা হয়নি। মূলত আইটি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে মাস খানেক অ্যাপটি বন্ধ রাখতে হয়েছিলো। এখন আবারো সচল হয়েছে।