ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে টেলিটককে ধ্বংস ও তৃতীয়পক্ষের কাছে বিক্রি করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন টেলিটকের ডিলাররা। ন্যায্য পাওনা আদায় এবং দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন সংস্কার করে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডকে লাভজনক করার দাবি জানান তারা। পাশাপাশি ২০ কোটি টাকার বেশি বকেয়া কমপেনসেশন বিল ও সিকিউরিটি ডিপোজিট ফেরত দেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবি জানান ডিলাররা।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিলাররা এসব কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, ‘টেলিটক আমাদের ফোন’ এই স্লোগানকে বুকে ধারণ করে আমরা সকল ডিলাররা টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডকে মনেপ্রাণে ভালোবাসি। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটককে ধ্বংস করার লক্ষ্যে বিগত স্বৈরাচার সরকারের আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের আশীর্বাদপুষ্ট বর্তমান সেলস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন ম্যানেজমেন্ট কাজ করে গেছেন। তারা টেলিটককে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছেন। এই গ্রুপের একমাত্র কাজ ছিল টেলিটককে একটি লস প্রজেক্ট হিসেবে দাঁড় করিয়ে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা করে বড় আকারের কমিশন বাণিজ্য করা।
ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরে ডিলাররা বলেন, মার্কেটে সিমের চাহিদা থাকলেও চাহিদা মোতাবেক সিম ডিলারদের কাছে দেওয়া হয় না। রিটেইলারদের টেলিচার্জ ও পল্লী বিদ্যুৎ সেল করার জন্য টেলি-পে অ্যাপ সামস্যার অজুহাতে মাঝে মাঝে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সিম এক্টিভেশন এবং প্রথম রিচার্জ করতে কমপক্ষে ২০ মিনিট সময় লাগে। যাতে করে রিটেলাররা টেলিটকের সিম বিক্রি করতে অনীহা প্রকাশ করে। টেলিটকের টাওয়ারে ব্যাটারি ব্যাকআপের কোনো ব্যবস্থা নেই। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নেটওয়ার্কও চলে যায়। রিটেলারদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সিম প্যাকেজের প্রাপ্য ইউজেস কমিশন অফিস অর্ডার থাকা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এতে সকল ডিলাররা প্রতি মাসে আর্থিক এবং মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।
আর্থিক অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ডিলারদের মাসিক এসআর, সুপারভাইজার এবং বিপিদের বেতন বাবদ কম্পেনমেশনের বিষয়ে বর্তমান জিএম ২০২১ সালের অক্টোবর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে প্রদান করেছেন। কিন্তু ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রেখেছে। টেলিটক প্রত্যেক ডিলারের কাছ থেকে জামানত হিসেবে এক লাখ টাকা করে নেয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে পল্লী বিদ্যুৎ ও টেলিচার্জ বাবদ ডিলার প্রতি ৩ লাখ থেকে ১৫ লাখ পর্যন্ত সিকিউরিটি ডিপোজিট নেয়। কিন্তু বছরখানেক পর কিছু অসাধু কর্মকর্তা পল্লী বিদ্যুৎ বিল ও টেলিচার্জ ব্যবসা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওয়ার বাই টেলিটক হিসেবে চুক্তি করে। যাতে ডিলারদের বিদ্যুৎ বিল ও টেলিচার্জ ব্যবসা কমতে শুরু করে ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। তাদের এই কর্মকাণ্ড দেখে আমরা টেলিটককে বাঁচাতে এর মার্কেট আরও গতিশীল করতে কয়েকবার ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করি। কিন্তু তারা আমাদের বিষয়গুলো আমলে নেয়নি। অনেক ডিলার তাদের স্বেচ্ছাচারিতা সহ্য করতে না পেরে ব্যবসা ছেড়ে চলে গেছেন বা অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় ম্যানেজমেন্ট তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে।
এ সময় ম্যানেজমেন্টের স্বেচ্ছাচারিতায় ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া প্রতিবাদ করায় অব্যহাতি পাওয়া ডিলাররা তাদের জমা করা আমানতের টাকা, বকেয়া কমপেনসেশন, বিভিন্ন সময় পাওনা সিম কমিশনের টাকা চাওয়া হলে টেলিটক ম্যানেজমেন্ট তাদের দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ করেন ডিলাররা।
সংবাদ সম্মেলনে ডিলারদের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি ও সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এগুলো হলো:
১. স্মারক নাম্বার TBL/MKT/Dealers/২০০৯/২৮ (০১/০৪/২০১৬) অনুযায়ী ডিলার হাউজের এস আর, সুপারভাইজার এবং বিপিদের বেতন বাবদ কম্পেনসেশন ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২৪ সালের চলতি মাস পর্যন্ত অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে। যা আনুমানিক ১৩ কোটি টাকা।
২. প্রত্যেক ডিলারের থেকে নেওয়া পল্লী বিদ্যুৎ বা টেলিচার্জ বাবদ অতিরিক্ত সিকিউরিটি ডিপোজিট অবিলম্বে ফেরত দিতে হবে। যা আনুমানিক সাড় সাত কোটি টাকা।
৩. ডিলার ও রিটেলারদের পাওনা শতবর্ষ, বর্ণমালা স্বাগতম এবং অপরাজিতা প্যাকেজের ইউজেস কমিশন অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে এবং অপরাজিতা প্যাকেজের SAF কমিশন দিতে হবে।
৪. টেলিটক থেকে অব্যাহতি নেওয়া সকল ডিলারদের সিকিউরিটি ডিপোজিটসহ সকল পাওনা অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে।
৫. কতিপয় কিছু অসাধু কর্মকর্তা অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে কমপেনসেশন দেওয়ার আগেই ৩০ শতাংশ টাকা অগ্রিম নিয়েষ কম্পেনসেশন দেওয়া হতো। সেই ৩০ শাতংশ টাকা অবিলম্বে ফেরত দিতে হবে।