সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইমেইল কিংবা ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের যেকোনো অ্যাকাউন্ট আমরা একটি গোপন পাসওয়ার্ড দিয়ে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু দেখা যায়, অনেকের পক্ষেই এতোগুলো অ্যাকাউন্টের আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড মনে রাখা সম্ভব হয়না। তাই তারা সহজ একটি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে থাকেন।
লাখ লাখ মানুষ মনে করছেন, তারা যে 123456 সংখ্যাটিকে পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করছেন এটা কেউ কল্পনাও করতে পারবেন না। হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রে হয়তো একেবারে সহজ বিষয়গুলোই কল্পনা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়, তবে সেটা অন্তত পাসওয়ার্ডের বেলায় না।
ব্রিটেনের সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক সরকারি শীর্ষ সংস্থা ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টার বা এনসিএসসি বলছে- হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়া অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পাসওয়ার্ড ছিল 123456।প্রতিষ্ঠানটির করা এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে মানুষের জ্ঞানের অভাব তাদের ফেলে দিচ্ছে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে।
কেবল সমস্যা নয়, এই ঝুঁকির একটা সহজ সমাধানও পরামর্শ হিসেবে তুলে ধরেছে এনসিএসসি। তাদের মতে, হরদম ব্যবহার করা হয় এবং আপনার মনে থাকবে এমন তিনটি শব্দ মিলিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন আপনার পাসওয়ার্ড।
এনসিএসসি হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়া অ্যাকাউন্টগুলো নিয়ে গবেষণা করেছে। পাবলিক ডেটাবেসের যেসব অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে তার মধ্যে দেখা গেছে দুই কোটি ৩০ লাখ অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড ছিল 123456।এর পরেই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পাসওয়ার্ড ছিল 123456789। এর পরের পাসওয়ার্ড ছিল qwerty- যেটি কিবোর্ডের ওপরের লাইনের ছয়টি বেতামের ক্রম আর পাঁচ নম্বরে আছে 1111111।
নামের বেলায় দেখা গেছে অ্যাশলি, মাইকেল, ড্যনিয়েল, জেসিকা এবং চার্লি ছিল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত।
ফুটবল পাগলদের মধ্যে অবশ্য স্বাভাবিকভাবেই প্রিয় দলের নাম এসেছে পাসওয়ার্ড হিসেবে। এই তালিকায় চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল এর আনার্সআপ হলো চেলসি। আর ব্লিংক-১৮২ ব্যান্ডদলের নামও ব্যবহার করেছেন অনেকে। ধরেই নেওয়া যায়, এরা ওই দলের ভক্ত।
এনসিএসসি’র কারিগরি পরিচালক ড. ইয়ান আইভি বলছেন, যারা পরিচিত নাম বা আন্দাজ করা যায় এমন শব্দকে পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করছেন, তারা নিজেদের আসলে সাইবার ঝুঁকিতে ফেলছেন।
“গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিরাপদে রাখতে কারোই উচিৎ নয় সহযে অনুমান করা যায় এমন কোনো পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা- মেন ধরা যাক নিজের ডাক নাম, পছন্দের খেলার দল বা সঙ্গীতশিল্পীদের দল।”
এনসিএসসি’র জরিপে দেখা গেছে শতকরা ৪২ ভাগ লোকই অনলাইন জালিয়াতিতে অর্থ হারিয়েছেন। এর মধ্যে কেবল ১৫ ভাগ আত্মবিশ্বসী ছিলেন যে, অনলাইনে তারা নিজেদের রক্ষা করতে জানেন।
জরিপে দেখা গেছে, যেসব পাসওয়ার্ডকে কঠিন হিসেবে বিবেচনা করা হয় তেমন পাসওয়ার্ড নিজেদের ইমেইলে ব্যবহার করেননি অর্ধেকের বেশি ব্যক্তি।
নিরাপত্তা গবেষক ট্রয় হান্ট নিজেই হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়া অ্যাকাউন্টগুলোর ডেটাবেইজ ও তথ্যাবলী সংরক্ষণ করেন। তার মতে, একটি ভালো পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারা হতে পারে আপনার নিরাপত্তায় “প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”