ত্রুটিপূর্ণ অডিটের দাবিকৃত অর্থ আদায়ে বিভিন্নপ্রকার অনুমোদন ও অনাপত্তিপত্র (এনওসি) প্রদান স্থগিতকরণের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের জন্য বিটিআরসি এর জবরদস্তিমূলক কৌশলের প্রতিবাদ জানিয়েছে গ্রামীণফোন।
আজ ঢাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অপারেটরটি জানায় বিটিআরসির এই চরম সিদ্ধান্তটি কোনভাবেই গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনা করে নেয়া হয়নি। বরং এ সিদ্ধান্তে গ্রাহকদের স্বাধীনভাবে সেবা গ্রহণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্নভাবে মানসম্পন্ন ফোন-কল, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ডিজিটাল মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের অধিকারকে খর্ব করছে।
গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি পূনর্ব্যক্ত করেন, “ব্যবসায়িক কোন্দল নিরসনের উপায় হিসেবে কখনই গ্রাহকদের স্বার্থ, জাতীয় অর্থনীতি কিংবা দেশের ভাবমূর্তিকে জিম্মি করা উচিত নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এহেন কর্মকান্ডের মাধ্যমে অন্যান্য পক্ষের উপর যে প্রভাব পরেছে তা সত্যিই দু:খজনক।”
নীতিগতভাবে, পদ্ধতিগতভাবে এবং বস্তনিষ্ঠতার আলোকে এই অডিটের প্রতিবাদ করার আমাদের আইনত অধিকার রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এধরনের বলপূর্বক টাকা আদায়ের কৌশল নজিরবিহীন এবং এইরূপ আচরণ এই বিরোধপূর্ণ অডিটের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে।তিনি আরো জানান যে সেবাকার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন অনুমোদন স্থগিতকরণের ফলে বিনিয়োগ বন্ধ হচ্ছে। এইরূপ সিদ্ধান্তে ইতোমধ্যে গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী নেটওয়ার্ককের বিস্তার কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে এবং দেশের ডিজিটালাইজেশান এর অগ্রযাত্রায় তা বাধাস্বরূপ। একটি সামগ্রিক ব্যবস্থার অংশ হিসাবে এ ধরনের সিদ্ধান্তে টেলিযোগাযোগের অবকাঠামোগত সহযোগী, ডিজিটালসেবার উদ্যোক্তা এবং আইসিটি ফ্রিল্যান্সাররাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
গ্রামীণফোনের ভারপ্রাপ্ত চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত অডিট এর নীতিগত ও পদ্ধতিগত অসংখ্য ত্রুটিবিচ্যুতির মধ্যে অল্পকিছু ত্রুটি তুলে ধরেন, যেগুলো অডিটের ফলাফলকে পরিষ্কারভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। উদাহরন হিসাবে তিনি বলেন, ২০০২ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে যে স্পেকট্রাম ব্যবহারের মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে তা বিটিআরসি এর ডিমান্ড নোটের ভিত্তিতেই করা হয়েছে। তবে অডিটের ফলাফলে এটি উল্লেখ্ করা হয় যে এই ডিমান্ড নোটের নিরূপন পদ্ধতিতে বিটিআরসি নিজেই ভুল করেছে। এক্ষেত্রে এই ভুলের জন্য বিটিআরসি কে দায়ী করার বদলে বিটিআরসি কর্তৃক নিযুক্ত অডিট প্রতিষ্ঠান দাবী করে যে গ্রামীণফোন শুধুমাত্র এই ভুলের মাশুলই দিবে না, এর উপর চক্রবৃদ্ধি হারে সুদও প্রদান করবে। এছাড়াও, ভ্যাট সংক্রান্ত বিষয়সমূহ, যা মাননীয় আদালতে বিচারাধীন, অস্বাভাবিকভাবে সেগুলোও এই বিতর্কিত ও ত্রুটিপূর্ণ অডিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নানারকম অসংগতিপূর্ণ অডিটের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপণ করে গ্রামীণফোনের সিইও অডিট দাবির চিঠির (২ এপ্রিল, ২০১৯) উল্লেখ করে বলেন, চিঠিতে বলা হয় গ্রামীণফোনের আপত্তিগুলো যেটি ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ পর্যন্ত জানানো হয়েছে সেগুলো আমলে নেয়া হয়েছে। কিন্তু গ্রামীণফোন ও বিটিআরসির মধ্যে এ বিষয়ে পরবর্তী আলোচনা বা ২০১৮ সালের সেপ্টম্বরের ৯ ও ১৮ তারিখে দুটি চিঠির মাধ্যমে জানানো বিস্তারিত যুক্তিতর্কের কোন কিছুই দাবিনামা পাঠানোর সময় আমলে নেয়া হয়নি।
মাইকেল ফোলি বলেন, “আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এই কারণে যে এই অডিটে গ্রামীণফোনের উত্থাপিত সকল যুক্তিই উপেক্ষিত হয়েছে এবং বিষয়গুলো অমীমাংসীত রয়েছে। এটি কোনভাবেই একটি নিরপেক্ষ অডিটরের নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না, বরং এইরূপ আচরণ পুরো অডিট প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এইরূপ অযৌক্তিক কার্যকলাপ আমাদের আইনানুগ অধিকার রক্ষার্থে গঠনমুলক সালিশী প্রক্রিয়া অবলম্বনের দাবীকেই সমর্থন করে।