বৈশ্বিক ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেদের তৈরি ওয়েব ভার্সন ‘রুনেটে’ পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রা শুরু করেছে রাশিয়া। শুক্রবার থেকে তারা এই নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থায় যুক্ত হয়।
রাশিয়া আপাতত কয়েক বছর নির্দিষ্ট একটি সময়ে বৈশ্বিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে নিজেদের সক্ষমতা যাচাই করবে। ২০২১ সাল পর্যন্ত চলবে এ কার্যক্রম।
তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার এই পরিকল্পনাকে ইন্টারনেট ‘বিপ্লব’ বললেও পশ্চিমা বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘গণতন্ত্রকে রুদ্ধ’ করার ‘ভয়ংকর’ খেলা।
পৃথিবীর ইন্টারনেট ব্যবস্থার মূলত কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান নেই। নেটওয়ার্ক সচল রাখতে একটি দেশকে তার নিজের যন্ত্রপাতির ওপর যেমন নির্ভর করতে হয়, তেমনি বিদেশিদের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হয়। সম্মিলিত এই প্রক্রিয়া সাগরতলের ক্যাবল কিংবা স্যাটেলাইট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যেখানে থাকে না কোনো সীমান্ত। অনলাইনের কল্যাণে পৃথিবীটা হয়ে যায় উন্মুক্ত।
কয়েক মাস আগে কঙ্গো তাদের নির্বাচনের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিল। এখন রাশিয়াও এমনটি করছে। কিন্তু তাদের পরিকল্পনা আরও বড়। নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থার জন্য কঙ্গোর কোনো অবকাঠামো নেই। রাশিয়া কয়েক বছর ধরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে সেই কাঠামো গড়েছে।
নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থা গড়তে রাশিয়া তাদের সংসদে নতুন আইন পাস করেছে। দেশটির নিউজ পোর্টাল দ্য মস্কো টাইমসের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এ আইনের দুটি অংশ। প্রথমত, যেকোনো জরুরি অবস্থায় বৈশ্বিক ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন হতে রাশিয়া ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ) থেকে বের হতে বিকল্প ডোমেইন নেম সিস্টেম (ডিএনএস) গড়বে। দ্বিতীয়ত, রাশিয়ান ইন্টারনেট প্রোভাইডাররা সরকারের ডিপ প্যাকেজ ইন্সপেকশন (ডিপিআই) টুল ক্রয় করতে এবং ইনস্টল করতে বাধ্য থাকবে। এ টুলই সব ইন্টারনেট ব্যবস্থার জন্য ফিল্টারের কাজ করবে। সরকারকে ফাঁকি দিয়ে অনলাইনে কেউ কিছু করতে পারবেন না।
এদিকে নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থায় যাওয়ার পর পুরো প্রক্রিয়া ভেঙে না পড়লেও দেশটির অনেক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ব্যাংক, হাসপাতাল কিংবা বিমান সংস্থাগুলোর ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অধিকাংশ ওয়েব পেজ ভিন্ন ভিন্ন সার্ভারের ওপর নির্ভর করে। এগুলো বিশ্বের অন্য দেশে অদৃশ্য হয়ে যাবে।
রাশিয়ার এমন সিদ্ধান্তে প্রভাবিত হচ্ছে অন্য কয়েকটি দেশও। কয়েক দশক পর দেশে দেশে এ ব্যবস্থা চালু হলে হুমকিতে পড়বে বিশ্বসভ্যতা। এমনটাই মনে করেন রাশিয়ার প্রযুক্তি বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু সুলিভান।