একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইনে যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক করার অভিযোগ উঠেছে ইসরায়েল-ভিত্তিক এনএসও গ্রুপের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে আদালতে অভিযোগও দাখিল করেছে হোয়াটস অ্যাপের মালিক প্রতিষ্ঠান ফেসবুক। যদিও এনএসও গ্রুপ বলছে, তারা কোনো অন্যায় করেনি।
অভিযোগ উঠেছে, এনএসও গ্রুপের বানানো ‘প্যাগাসাস’ নামের হ্যাকিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে হোয়াটস অ্যাপ হ্যাক করা হয়। কিন্তু কীভাবে কাজ করে এই ‘প্যাগাসাস’?
গবেষকরা জানান, এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে মোবাইল ফোন থেকে দূর হতে গোপনে তথ্য হাতিয়ে নেওয়া যায়। এর মাধ্যমে হ্যাকাররা ফোন সেটের সকল কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে।
এনএসও গ্রুপ বিশ্বের ২০টি দেশের সরকারের কাছে এটি বিক্রিও করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
কানাডার টরন্টোর প্রতিষ্ঠান সিটিজেন ল্যাব গত ছয়মাস ধরে ফেসবুকের সঙ্গে একত্রিত হয়ে হোয়াটস্ অ্যাপ হ্যাকিংয়ের বিষয়টি তদন্ত করছে। এর মাধ্যমে তারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে।
গবেষকরা জানান, এই ঘটনায় তদন্তের অংশ হিসেবে সিটিজেন ল্যাব ১০০টির বেশি ঘটনা চিহ্নিত করেছে যেখানে ২০টি দেশের মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিকদের টার্গেট করা হয়েছে।
সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং কূটনীতিকদের ওপর নজরদারির জন্য হ্যাকাররা এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে।
আদালতে দাখিল করা কাগজপত্রে ফেসবুক অভিযোগ করেছে, হোয়াটস্ অ্যাপের অজানা ত্রুটিকে কাজে লাগিয়েছে এনএসও গ্রুপ।
পৃথিবীর ১৮০টি দেশের দেড় বিলিয়ন মানুষ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে। এই অ্যাপটি জনপ্রিয় হওয়ার মূল কারণ ছিল ব্যবহারকারীদের তথ্যের গোপনীয়তার জন্য। একজনের কাছ থেকে যখন অপরজনের কাছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বার্তা যায়, তখন সেটিকে বাধাগ্রস্ত করলেও পড়া সম্ভব হয় না।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, আগে একটি ওয়েব লিংকের মাধ্যমে হ্যাকিং সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করার ফাঁদ পাতা হয়েছিল। আর এখন ব্যবহারকারীদের ফোন সেটে তাদের অজ্ঞাতে এই সফটওয়্যারটি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দাবি, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত এনএসও গ্রুপ বিভিন্ন দেশে রেজিস্ট্রিকৃত ফোন নম্বর ব্যবহার করে হোয়াটস্ অ্যাপ অ্যাকাউন্ট খুলেছে। যেসব দেশের ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে সাইপ্রাস, ইসরায়েল, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, সুইডেন ও নেদারল্যান্ডস। এরপর এপ্রিল ও মে মাসে সে গ্রুপটি তাদের টার্গেট করা ব্যক্তিদের হোয়াটস্ অ্যাপে ফোন করার মাধ্যমে সেগুলোকে হ্যাক করে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আদালতে যে অভিযোগ দাখিল করেছে সেখানে বলা হয়েছে, হোয়াটস্ অ্যাপের ভেতরে থাকা কারিগরি বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এনএসও গ্রুপ এমন এক ধরনের কোড উদ্ভাবন করেছে যেটি ব্যবহার করে হোয়াটঅ্যাপে ফোন করলে মনে হবে যেন এটি সত্যিই অন্য আরেকটি হোয়াটস্ অ্যাপ নম্বর থেকে আসছে। এই কলের মাধ্যমে হ্যাকাররা তাদের টার্গেট করা ফোন সেটটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। যাদের টার্গেট করা হচ্ছে বিষয়টি তাদের কাছে সম্পূর্ণ অজানা থেকে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা শুধু লক্ষ্য করেন যে তাদের হোয়াটস্ অ্যাপ কল লিস্টে কিছু রহস্যজনক মিসডকল জমা হয়েছে।
এনএসও গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির ওপর নজরদারির জন্য তার হত্যাকারীদের স্পাইওয়্যার সরবরাহ করা হয়েছিল। তবে এনএসও গ্রুপ এটি অস্বীকার করে বলেছে, তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর বিষয়ে তারা আদালতে লড়বে।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ‘এনএসও গ্রুপের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে প্রযুক্তি সহায়তা দেয়া যাতে তারা সন্ত্রাস এবং গুরুতর অপরাধের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।