তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে সেলফোন অপারেটরদের ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বড় অংকের ঋণের বোঝায় জর্জরিত অপারেটরগুলোর ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের বকেয়া অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউ (এজিআর) পরিশোধের নির্দেশ। যত দিন যাচ্ছে, অধিকাংশ সেলফোন অপারেটরের লোকসানের অংক তত বাড়ছে। এখন সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে ভারতের দ্বিতীয় বৃহৎ সেলফোন অপারেটর ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেড। ধুঁকতে থাকা অপারেটরটির কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা থেকে ক্রমে সরে দাঁড়াচ্ছে মালয়েশিয়াভিত্তিক আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ। গত দেড় বছরে ভোডাফোন আইডিয়ায় আজিয়াটার মালিকানা কমে ১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, অপারেটরটির মালিকানা পুরোপুরি ছেড়ে দেয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে আজিয়াটা গ্রুপ। সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ইটি টেলিকম।
২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট ভোডাফোন ইন্ডিয়া ও আইডিয়া সেলুলার লিমিটেড একীভূত হয়ে ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেড নামে কার্যক্রম শুরু করে। ওই সময় ভারতের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহৎ সেলফোন অপারেটরের একীভূতকরণের মাধ্যমে সৃষ্ট নতুন কোম্পানি ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেডে আজিয়াটা গ্রুপ ৮ দশমিক ১৫ শতাংশের মালিকানায় ছিল। এর আর্থিক মূল্য ছিল প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি রুপি। একীভূতকরণের সময় ভোডাফোন আইডিয়ার বাজারমূল্য ছিল ৪৩ হাজার ২০০ কোটি রুপি, যা এখন কমে ১০ হাজার ৯৭৭ কোটি রুপিতে দাঁড়িয়েছে। টানা লোকসানে থাকা প্রতিষ্ঠানটিতে আজিয়াটার মালিকানা কমে ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ১১৫ কোটি রুপি। এ পরিস্থিতিতে যেকোনো সময় ভোডাফোন আইডিয়ার বাকি মালিকানা ছেড়ে দিতে পারে আজিয়াটা গ্রুপ। এমন হলে তা ভারতের দ্বিতীয় বৃহৎ সেলফোন অপারেটরটির জন্য বড় একটি ধাক্কা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ভোডাফোন আইডিয়ার সংকট ক্রমেই বাড়ছে। দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে মোট ৫৩ হাজার কোটি রুপি বকেয়া এজিআরের মধ্যে ২ হাজার ৫০০ কোটি কোটি রুপি পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি বকেয়া এজিআরের আংশিক পরিশোধের পর থেকে অপারেটরটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
ভারতের সেলফোন অপারেটরগুলোর লাইসেন্স ফি ও স্পেকট্রাম চার্জ বাবদ যে বকেয়া রয়েছে, দেশটির টেলিকম বিভাগকে (ডিওটি) অপারেটরগুলোর কাছ থেকে তা আদায়ের নির্দেশ দেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। নির্দেশনা মেনে এরই মধ্যে মোট বকেয়ার ১০ হাজার কোটি রুপি পরিশোধ করেছে ভারতী এয়ারটেল। ভোডাফোন আইডিয়া শুরু থেকে বলে আসছিল যে এ বিপুল পরিমাণ বকেয়া পরিশোধ করার মতো পরিস্থিতিতে তারা নেই। বকেয়া এজিআর পরিশোধে বাধ্য করা হলে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যে কারণে মোট বকেয়ার প্রায় অর্ধেক পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতসংশ্লিষ্টদের দাবি, ভোডাফোন আইডিয়ার কার্যক্রম বন্ধ হলে প্রায় ১৫ হাজার কর্মী চাকরি হারাবেন। একই সঙ্গে বিপদে পড়বেন প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকরাও। দেশটিতে ৩৩ কোটির বেশি গ্রাহক রয়েছে ভোডাফোন আইডিয়ার। এ বিপুলসংখ্যক গ্রাহক তো বিপদে পড়বেনই, সেসঙ্গে কাজ হারাবেন ভোডাফোনের ওপর নির্ভরশীল অসংখ্য ব্যবসায়ী। দ্বিতীয় বৃহৎ সেলফোন অপারেটর ভোডাফোনের কার্যক্রম বন্ধ হলে ভারতের টেলিযোগাযোগ ব্যবসা খাতও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। এছাড়া প্রতিযোগিতা কমে যাওয়ায় গ্রাহকদের ওপরও চাপ বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত বছরের ডিসেম্বরেই ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান কুমার মঙ্গলম বিড়লা জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য ছাড়া তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ভারতে ব্যবসা চালানো সম্ভব নয়। এর পরে গত কয়েক মাসে সেই পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। লোকসানের অংকও বেড়েছে। ভোডাফোন আইডিয়ার পক্ষ থেকে সরাসরি কিছু বলা না হলেও শিগগিরই অপারেটরটির কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা আসতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
উল্লেখ্য, ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেডের ৪৫ দশমিক ১ শতাংশের মালিকানা রয়েছে ভোডাফোন গ্রুপের হাতে। আদিত্য বিড়লা গ্রুপের হাতে রয়েছে ২৬ শতাংশ মালিকানা। শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির ৮ দশমিক ১৫ শতাংশের মালিকানায় ছিল আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ। এছাড়া ২০ দশমিক ৭৫ শতাংশের মালিকানায় ছিল একাধিক প্রাইভেট ইকুইটি ফার্ম।