২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের আওতায় ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস ‘একশপ’ যাত্রা করে। গত বছর অক্টোবরে প্লাটফর্মটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এরই মধ্যে দেশের সব ই-কমার্স সাইট প্লাটফর্মটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। দেশব্যাপী পাঁচ হাজারের বেশি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ই-কমার্স সেবার আওতায় এনে সাড়া ফেলেছে একশপ।
এটুআই প্রকল্প সূত্রমতে, একশপে যুক্ত ডিজিটাল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে গ্রামের মানুষ পণ্য অর্ডার করে শহর থেকে তা বাড়িতে বসে সরবরাহ নিতে পারছেন। অন্যদিকে গ্রামের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য একশপের মাধ্যমে শহরের পাশাপাশি বৈশ্বিক বাজারে বিক্রি করতে পারছেন।
এটুআই বিভাগের আওতায় কর্মরত এক কর্মকর্তা জানান, একশপের মাধ্যমে মূলত দুই ধরনের সেবা দেয়া হয়। প্রথমত, গ্রামের সাধারণ জনগণ কোনো পণ্য কিনতে চাইলে একশপের মাধ্যমে কিনতে পারছেন। অন্যদিকে গ্রামের ক্ষুদ্র ও আকর্ষণীয় (হস্তশিল্প) পণ্যগুলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে নিয়ে শহরে বিক্রি করা হচ্ছে।
সরকারের আইসিটি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইন ব্যবসা করছেন এক লাখ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। যারা অনলাইন ই-কমার্স সাইটগুলো ব্যবহার করতে পারেন না। এছাড়া গ্রামে ইন্টারনেট সুবিধা ভালো না থাকায় ফেসবুকের মাধ্যমে অল্প পরিসরে ব্যবসা করতে বাধ্য হচ্ছেন। এসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার আগামী জুনের মধ্যে একশপের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
এমনই একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা লক্ষ্মীপুরের কামরুল হাসান। লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় কম্পিউটার ট্রেনিং এবং প্রিন্টিংয়ের কাজ করতেন বছর দুয়েক আগে। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকার যুবকদের অনলাইন ইনকামে উৎসাহিত করতেন। ওই কাজ করতে গিয়ে সরকারের এটুআই প্রকল্পের আওতায় ইউনিয়ন ডিজিটাল সেবার কথা জানতে পারেন। পরে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ পৌরসভায় ডিজিটাল সেন্টারে একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে যোগ দেন। এটুআই প্রোগ্রামের আওতায় পরবর্তীতে ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস একশপ চালু হলে সেখানেও কাজ করা শুরু করেন তিনি। এরপর একশপ থেকে অর্ডার হওয়া পণ্যগুলো গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। তার ভাষ্যে, একশপ আসার পর প্রতি মাসে আড়াই লাখ টাকার মতো ব্যবসা হয়। একশপে যুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানের বিক্রীত পণ্য থেকে কমিশন বাবদ প্রতি মাসে তিনি ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করছেন।
একশপে যুক্ত হয়ে ব্যবসা প্রসারিত হয়েছে যশোরের সাগরদাঁড়ি উপজেলার মো. আবু হানিফের। গ্রামের গাছে গাছে থাকা মৌচাক সংগ্রহ করে তা যথাযথ প্রক্রিয়াজাত করে মফস্বল শহরে বিক্রি করেন। মধু সংগ্রহের জন্য বেশকিছু লোকও রয়েছে তার। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে এসব মধুর ভালো দাম না পাওয়ায় ব্যবসা বাড়েনি হানিফের। গত বছরের জুলাইয়ে একশপের কথা জানতে পারেন গ্রামের এক যুবকের মাধ্যমে। এরপর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের সহায়তায় এখন নিজের পণ্য দেশব্যাপী বিক্রি করছেন। রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে হানিফের মধু যাচ্ছে। প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকার মতো মধু বিক্রি হচ্ছে তার।
একশপে যুক্ত হয়ে কামরুল ও হানিফের মতো জীবনের গল্পও পাল্টে গেছে হাজারো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার। একশপের মাধ্যমে গ্রাম থেকে বিন্নি চাল, আম, গুড়, মধু, চিড়া, তেল ইত্যাদি পণ্য শহরে যাচ্ছে। অন্যদিকে গ্রামে দুষ্পাপ্য ওষুধ, বিভিন্ন সরঞ্জাম শহর থেকে গ্রামে যাচ্ছে।
এটুআই সূত্রমতে, ২০২০ সালের মধ্যে এক লাখ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার পণ্য দেশ ও দেশের বাইরে বিক্রি হবে। এরই মধ্যে তুরস্ক, মালয়েশিয়া, নেপাল, সিঙ্গাপুর ও উগান্ডায় একশপের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির কাজ শুরু হয়েছে।
এটুআই প্রকল্পের হেড অব ই-কমার্স রেজওয়ানুল হক জামী বলেন, একশপ বর্তমানে ইউনিয়ন পর্যায়ে চালু রয়েছে। সেবাটি গ্রাম পর্যায়ে কীভাবে নিয়ে যাওয়া যায়, সেটা নিয়ে কাজ চলছে। একই সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে একশপকে নিয়ে যাওয়ার