শুধু আইপিও আবেদনের জন্য নতুন বিও এ্যাকাউন্ট খুলেছেন অনেকেই। পুরোনো নিস্ক্রিয় এ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিয়ে সচল করেছেন কেউ কেউ। নতুন করে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ফেলেছে ব্যাপক সাড়া। আর এসব হয়েছে ওয়ালটনের আইপিও আবেদনকে ঘিরে।
জানা গেছে, পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন পর ওয়ালটনের মতো ভালো কোম্পানির আইপিও আসায় বিনিয়োগকারীরা বেশ উৎফুল্ল ও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া ক্ষুদ্র ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পেয়েছেন। গত ৯ আগস্ট থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের আইপিও আবেদন গ্রহণের সময় বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ওই সময় রাজধানীতে ইবিএল সিকিউরিটিজ, প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ, জয়তুন সিকিউরিটিজ, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ ও বানকো সিকিউরিটিজসহ বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ ঘুরে দেখা গেছে, ওয়ালটন আইপিওতে আবেদনের জন্য করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে ভিড় করেছেন বিনিয়োগকারীরা। আবেদনের শেষ দিনেও বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকেই ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
স্টেক হোল্ডারদের মতে, দেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির পাশাপাশি ওয়ালটনের শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) ও নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) ভালো অবস্থানে থাকায় কোম্পানিটির আইপিও আবেদনে আগ্রহী বিনিয়োগকারীরা।
ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কর্তৃপক্ষ জানায়, দীর্ঘদিন বাজার খারাপ থাকায় ও ভালো কোন কোম্পানির আইপিও না আসায় অনেক বিনিয়োগকারীর বিও অ্যাকাউন্ট নিস্ক্রিয় ছিল। তবে তারা ওয়ালটনের আইপিও উপলক্ষে সেই সকল নিস্ক্রিয় বিও অ্যাকাউন্ট সচল করে আইপিওতে আবেদন করছেন। ওয়ালটন আইপিও’কে ঘিরে নতুন অনেক বিনিয়োগকারী বিও অ্যাকাউন্ট করেছেন।
জয়তুন সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী আতাউর রহমান বলেন, ‘আমি সেকেন্ডারি মার্কেটের পাশাপাশি আইপিও’তে বিনিয়োগ করে থাকি। দীর্ঘ দিন ধরেই পুঁজিবাজারে ভালো মানের কোম্পানির আইপিও না আসায় বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। তবে ওয়ালটনের মতো ভালো কোম্পানির আইপিও আসায় বিনিয়োগে আগ্রহ ফিরে পেয়েছি।
ইবিএল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ওয়ালটনকে নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই বিনিয়োগকারীদের বেশ আগ্রহ রয়েছে। ফলে কোম্পানিটির আইপিওতে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক সাড়া লক্ষ্য করা গেছে।
গত ২ থেকে ৫ মার্চ দেশে সর্বপ্রথম ডাচ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত ওয়ালটনের নিলাম (বিডিং) প্রক্রিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্য বিনিয়োগকারী কর্তৃক প্রস্তাবিত শেয়ার প্রতি দরের ভিত্তিতে কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ করা হয় ৩১৫ টাকা। নিয়ম অনুয়ায়ী, বিডিং এ অংশ নেয়া প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কাট-অফ প্রাইসের সমান বা তার চেয়ে বেশি শেয়ার দর প্রস্তাবকারীরাই আইপিওতে আবেদন করতে পারবেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, ওয়ালটনের আইপিও আবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্য বিনিয়োগকারী নির্বাচিত হয়েছেন ২৩৩ জন। এর মধ্যে ১৬৭ জন কাট অব প্রাইস ৩১৫ টাকায় আইপিওতে আবেদন করেছেন। বাকি ৬৬ জন ৩১৫ টাকার চেয়ে বেশি দর প্রস্তাব করে যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন।
আইন অনুসারে, কাট-অফ প্রাইসের ১০ শতাংশ কমে (ডিসকাউন্ট) আইপিওতে শেয়ার ইস্যুর বিধান থাকলেও সাধারণ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর স্বার্থ এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে আইপিওতে ২০ শতাংশ কমে প্রতিটি শেয়ার ২৫২ টাকায় ইস্যু করবে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।
তথ্য মতে, ওয়ালটন আইপিওতে আইপিও’তে প্রতি লটে রয়েছে ২০টি করে শেয়ার। প্রতি শেয়ারের দাম ২৫২ টাকা। সে হিসেবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা একটি বিও অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ৫ হাজার ৪০ টাকায় সর্বোচ্চ এক লটের জন্য আইপিওতে আবেদন করতে পেরেছেন।
চলতি বছরের ২৩ জুন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ৭২৯তম কমিশন সভায় ওয়ালটন হাই-টেককে আইপিওর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের অনুমোদন দেওয়া হয়।
বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। এর মধ্যে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৬০ কোটি ৯৬ লাখ ৫৭ হাজার ৮০৫ টাকা এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৩৯ কোটি ৩ লাখ ৪২ হাজার ১৯৫ টাকা সংগ্রহ করবে। সংগৃহীত টাকা থেকে ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যবসা সম্প্রসারণ, ৩৩ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ ও ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা আইপিও পরিচালনাবাবদ ব্যয় করবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
ওয়ালটন হাই-টেকের ইস্যু ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে রয়েছে এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট।