ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের মধ্যে চলমান প্রযুক্তি যুদ্ধের সর্বশেষ দৃশ্যমান পদক্ষেপ হলো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনভিত্তিক শর্ট ভিডিও তৈরির সোস্যাল মিডিয়া অ্যাপ টিকটক ও মেসেজিং অ্যাপ উইচ্যাটের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিশোধ হিসেবে চীনও এখন বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার কথা ভাবছে। তাদের ভাষায় সেসব বিদেশী প্রতিষ্ঠান চীনের জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হবে, এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হবে। সম্প্রতি চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এমন পদক্ষেপের কথা জানানো হয়েছে। খবর এএফপি।
প্রযুক্তি বিশ্বে চীনের ক্রমাগত আধিপত্যের লাগাম টেনে ধরতে দীর্ঘদিন ধরে জোরেশোরে কাজ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর প্রযুক্তি নিয়ে এ যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা ঘনীভূত হতে শুরু করে চীনা জায়ান্ট হুয়াওয়ের ওপর মার্কিন বাজার ও মিত্র দেশগুলোতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্য দিয়ে। এর পরই একের পর এক হুয়াওয়েসহ চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর পথে প্রতিবন্ধকতার দেয়াল তুলতে রীতিমতো উঠেপড়ে লাগতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। এরই অংশ হিসেবে নিরাপত্তার অভিযোগ তুলে গত মাসেই চীনভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানি বাইটডান্স নিয়ন্ত্রিত শর্ট ভিডিও তৈরির সোস্যাল মিডিয়া অ্যাপ টিকটক ও টেনসেন্ট নিয়ন্ত্রিত টেক্সট ও ভয়েস মেসেজিং অ্যাপ উইচ্যাটকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করতে নির্বাহী আদেশে সই করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর গত রোববার থেকে টিকটক ও উইচ্যাট অ্যাপের ডাউনলোড বন্ধ করা হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে নতুন করে এ দুই অ্যাপ আর কেউ অ্যাপ স্টোর ও প্লে স্টোরের পাশাপাশি অন্য কোনো প্লাটফর্ম থেকেও ডাউনলোড করতে পারবেন না।
এদিকে অ্যাপ দুটি নিষিদ্ধ করার আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা আক্রমণ হিসেবে চীন বিদেশী ফার্মগুলোকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার এমন হুমকি দিয়েছে। যদিও এ হুমকি অ্যাপ দুটোকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিষিদ্ধ করা থেকে শেষ রক্ষা করতে পারেনি। তবে সে সুযোগ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। অ্যাপ দুটির বিষয়ে শেষ মুহূর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিদ্ধান্ত বদল করলে ভিন্ন কিছু ঘটতে পারে। আর সম্ভবত এ সুযোগকে কাজে লাগাতেই বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার এমন হুমকির কথা জানিয়েছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কারণ দীর্ঘদিন ধরে বেশকিছু বিদেশী কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করার কথা ভাবছে বেইজিং। আর যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপের ফলে এখন দেশটি সেসব প্রতিষ্ঠানকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনতে পারে। ফলে চীনের এ অবস্থান বিশ্বের শীর্ষ দেশ দুটোর মধ্যে দরকষাকষি বা প্রতিশোধের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যদিও চীনের তরফ থেকে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা এলেও ঠিক কোন কোন বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করা হবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো তথ্য দেয়নি দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে তারা বলছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হবে, যাদের চীনের জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হিসেবে মনে হবে। একই সঙ্গে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও বাণিজ্য নীতিমালা ভঙ্গ করবে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো চীনের এ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রও চীনের বিরোধে পদক্ষেপ নিতে এমন অভিযোগ উত্থাপন করেছিল। এরই অংশ হিসেবে চীনভিত্তিক বাইটডান্স নিয়ন্ত্রিত টিকটক এবং ইন্টারনেট কোম্পানি টেনসেন্ট হোল্ডিংস নিয়ন্ত্রিত উইচ্যাটকে দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করে আসছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। দেশটির আশঙ্কা উভয় অ্যাপ মার্কিনিদের তথ্য সরাসরি চীন সরকারের কাছে পাচার করছে এবং নজরদারির সুযোগ করে দিচ্ছে। অবশ্য টিকটক ও উইচ্যাটের পাশাপাশি চীন সরকার বরাবরই এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। একই সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে নিন্দা জানিয়ে আসছে চীন।
তবে এবার দেশটি তাদের সুর পাল্টিয়েছে। সত্যিই যদি পাল্টা আক্রমণ হিসেবে দেশটি বিদেশী কোম্পানিগুলোকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনে, তাহলে সেই তালিকায় অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান এবং তাদের স্বার্থ রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠান যে অগ্রাধিকার পাবে সেটি সহজেই অনুমেয়। আর সেটি হলে এসব বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা, চীনে ব্যবসা পরিচালনা ও বিনিয়োগ বন্ধ করা, ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আনার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা এবং আমদানি-রফতানি নিষেধাজ্ঞার মতো এমন আরো অনেক নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো।