ই-কমার্সের বিপুল সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে রবি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, পণ্য-সেবা লেনদেনের ৭০ শতাংশ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে হতে পারে যা বর্তমানে ৫ শতাংশের মতো। সম্ভাবনাময় এই খাততে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার।
গতকাল রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ই-ক্যাব ও রবি’র উদ্যোগে আয়োজিত ‘অর্থনৈতিক অগ্রগতির লক্ষ্যে প্রয়োজন সমৃদ্ধ ই-কমার্স’ শীর্ষক ওয়েবইনারে এ কথা বলেন তিনি।
রবির সিইও বলেন, গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে হলে ই-কমার্সে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডাটা, মেশিন লার্নিং ম্যাকানিজম, ভিআর, এআর ইত্যাদি প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরী। এক্ষেত্রে বহির্বিশ্ব থেকে আমাদের পিছিয়ে থাকলে হবেনা, বরং আমাদের থাকতে হবে অগ্রণী ভূমিকায়।
ডিজিটাল পেমেন্টের ওপর গ্রাহকদের আস্থা বাড়ানোর লক্ষ্যে পণ্যের মান নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন মাহতাব। এক্ষেত্রে আলীবাবা, ইবে’র উদাহরণ টেনে ভিজ্যুয়াল চ্যাট সহায়ক হতে পারে বলে মত দেন তিনি।
রবি’র সিইও আরেকটি বিষয়ের ওপর জোর দেন, পণ্যের বৈচিত্রে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো যে পণ্য বিক্রি করে তার ৮০-৮৫% হচ্ছে গ্যাজেট, বাকী ১৫-২০% হচ্ছে ফ্যাশন সম্পর্কিত পণ্য। অথচ বহির্বিশ্বে সব কিছু বিক্রি হয় ই-কমার্সে। আমাদের ধীরে ধীরে ওই লক্ষ্যের দিকে এগুতে হবে। আবার শুধু ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের ৮৫ শতাংশ পণ্য বিক্রি হয়। এক্ষেত্রে সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনা আরো উন্নত করে পুরো দেশকে ই-কমার্সের আওতায় আনার সুযোগ রয়েছে।
ডিজিটাল কমার্স পলিসি ২০১৮-কে সাধুবাদ জানিয়ে এর বাস্তবায়নের উপর জোর দেয়ার আহ্বান জানান বহুজাতিক টেলিকম কোম্পানির এই দেশীয় সিইও। পাশাপাশি ই-কমার্সের বিকাশে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ভ্যাট-ট্যাক্স-শুল্ক ইত্যাদি ক্ষেত্রে ছাড় এবং প্রণোদনা দেয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।
রবি’র উদোগে ডিজিটাল উদ্যোক্তা গড়ে তোলার প্ল্যাটফর্ম আর-ভেঞ্চারের পরবর্তী পর্বে ই-ক্যাবকে যুক্ত করার আশাবাদও জানিয়েছেন রবি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও।
ওয়েবইনারে ই-ক্যাব’র প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার বলেন, করোনা মাহামারীর ফলে ই-কমার্সের প্রয়োজন ও চাহিদা বেড়েছে। এ পরিস্থিতি কবে শেষ হবে তা অনিশ্চিত। তাই আমাদের অর্থনীতিকে সচল রাখতে ই-কমার্সকে চাঙ্গা রাখতে হবে। এতে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা এমএফএস’র জন্যও একটা বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আগামী বছর আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করব। তখন আমরা আমাদের দেশের ই-কমার্সের সাফল্য ও অগ্রগতি তুলে ধরতে চাই। ই-কমার্সের মাধ্যমে শুধু অর্থনৈতিক অগ্রগতি হচ্ছে তা নয়; নারীর আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
ই-ক্যাব’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন বলেন, করেনা মহামারীতে ই-কমার্সের চাহিদা বেড়েছে। কার্যত লকডাউনের সময় খাদ্য ও ঔষধ সরবরাহের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো। আমের মৌসুমে গ্রাহকের হাতে পণ্য পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে এই ই-কমার্স। ঈদের সময় কোরবানির গরুও গ্রাহকরা কিনেছেন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে। এর ফলে গ্রামের মানুষও কিন্তু ই-কমার্সে যুক্ত হয়েছেন। সম্প্রতি পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় টিসিবি’র সাথে চুক্তির মাধ্যম আমরা ন্যায্য মূল্যে পণ্যটি গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আজকের পৃথিবীতে অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য দরকার ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশ। এ লক্ষ্যে আমাদের দেশের ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নেয়ার বিকল্প নেই।