বাংলাদেশের উত্তরে রাজশাহী জেলায় অবস্থিত একটি ছোট্ট মফস্বল শহর নাটোর। এ ছোট্ট শহরটির একসময় জৌলুস ও নাম ডাক ছিল প্রচুর। কাঁচাগোল্লা, বনলতা সেন, রানী ভবানী, দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি, উত্তরা গণভবন ইত্যাদির জন্য বিখ্যাত নাটোর জেলা। বলা হয়ে থাকে, ঢাকা ব্যতীত রাজধানীর যদি কখনো অন্যত্র স্থানান্তর করা হয় তাহলে সেটা হবে নাটোর জেলা।
অথচ সেই নাটোর জেলা নিয়ে কিছুদিন আগেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটা দীর্ঘ সময় ধরে বেশ বড় কেলেঙ্কারি ঘটে চলেছিল৷ যা প্রথমদিকে কারো নজরে পড়েনি৷ তবে সম্প্রতিক সময়ে ব্যাপারটা অনেকের নজরে পড়ে ৷
কি সে ব্যাপার? সেটা জানার জন্য আমাদের যেতে হবে মেক্সিকোতে ৷
উত্তর আমেরিকার একটি দেশ মেক্সিকো । উত্তর আটলান্টিকের পাশে অবস্থিত এই দেশে ছবির মত একটি শহরের নাম সনেরা। এবং সেই সনেরা শহরের পাশেই অবস্থিত ছবির মতো একটি ছোট্ট গ্রাম ন্যাঠোরা৷ইংরেজিতে যার উচ্চারণ Natore ।
গ্রামটিতে মোটে ৩০০ থেকে ৪০০ জন মানুষ৷ অথচ ফেসবুক এর তথ্য অনুসারে গ্রামে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজারের কাছাকাছি । এমনটা কেন? সেটি জানার জন্য আমাদের ফিরে আসতে হবে বাংলাদেশ।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একাউন্ট খোলার সময় ফেসবুকের কাছে বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করতে হয়৷ কিন্তু নাটোরে বসবাসরত মানুষ ফেসবুকে সরাসরী “natore” নামের কোনো অপশন পাননা৷ যার ফলে অনেকেই অজান্তেই Natore,Sonora,Mexico লোকেশন নির্বাচন করেন৷
আর এভাবেই ফেসবুকের তথ্য মতে Natore,Sonora,Mexico এর বসবাসরত মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩৫০০০ এর বেশি৷
ব্যাপারটা সাম্প্রতিককালে অনেকের নজরে আসে। আসলে ফেসবুকে কিছুদিন আগেও নাটোরের সরাসরী কোনো লোকেশন ছিলো না। অনেকেই ভুল বশত যে লোকেশনটি সেলেক্ট করত সেটি মেক্সিকোতে অবস্থিত সোনেরা নামক শহরের একটি ছোট্ট গ্রাম। যার নাম ন্যাঠোরা(natore) ইংরেজি বানান “নাটোর” এর সাথে সামঞ্জস্য থাকার ফলে অনেকেই ভুলবশত সেই লোকেশন নির্বাচন করেন৷ তবে সম্প্রতি সময় “Natore”নামের একটি লোকেশন ফেসবুকে যুক্ত করা হয়েছে। যার ফলে এখন আর ব্যাবহারকারীদের বিভ্রান্তির মুখে পড়তে হবে না।
শুধু নাটোর নয়। তারপাশাপাশি “গুরুদাসপুর” এবং “গুরদাসপুর” (ভারতে অবস্থিত) এই দুই লোকেশন নিয়েও বিভ্রান্তির মুখে পড়েন অনেকেই। উল্লেখ্য এই যে গুরুদাসপুর, নাটোরের একটি উপজেলা। অপরদিকে গুরদাসপুর ভারতের পাঞ্জাব রাজ্য অবস্থিত একটি শহর।
ইদানিং তো আবহাওয়ার পরিস্থিতি জানতে গেল আমাদের গুরদাসপুর( পাঞ্জাবের শহর) এর আবহাওয়া পরিস্থিতি দেখিয়ে দেয়। শুধু গুরুদাসপুর এবং নাটোর নয় তার পাশাপাশি ভারতে অবস্থিত সিলেট নিয়েও মাঝেমধ্যে মানুষকে বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়৷ এছাড়াও এপার বাংলা ও ওপার বাংলা উভয় বাংলাতে অবস্থিত দিনাজপুর নিয়েও বিভ্রান্তিতে পড়তে হয় অনেক সময়।
যাহোক নাটোর এবং ন্যাঠোরা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে উভয়ই এলাকার মানুষ। ব্যাপারটি যে ন্যাঠোরাতে অবস্থানরত ফেসবুক ব্যবহারকারীদের চোখে পড়েনি ব্যাপারটা তাও নয়। উন্নত দেশ বলে সেখানে প্রায় কমবেশি সবাই ফেসবুক ব্যবহার করে । তবে ন্যাঠোরা গ্রামে ৩৫০০০ জনসংখ্যা দেখে প্রথমে সবাই অবাক হয়ে যায়৷
ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের কৌতূহল কাজ। করে আচ্ছা ফেসবুক তাদের সাথে মজা করছে না তো?
ব্যাপারটি এক পর্যায়ে দেশটির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের চোখে পড়ে। অবশ্য তাঁর বেশ কিছুদিন আগেই বাংলাদেশের টনক নড়েছিল।
এরকম লোকেশন কেলেঙ্কারি প্রায় মাঝেমধ্যে দেখা যায়। মূলত দু’টি ভিন্ন দেশে একই নামের অনেকগুলো জায়গা রয়েছে।
এ সম্পর্কে অবশ্যই জায়গাগুলোর বসবাসরত মানুষকে সচেতন হতে হবে তার পাশাপাশি দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগকে সজাগ হতে হবে যাতে এমন বিভ্রান্তিতে না পড়তে হয়৷