রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ এলাকার রাতুল সরকার। তিনি গাজিপুর ভাওয়াল কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করেছেন। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কাজে লাগিয়ে রাতুল ২০২০ সালের ১১ ই জুলাই Ratul’s World নামে একটি অনলাইন পেজ খুলেন। শুরুর দিকটা মোটেও মসৃণ ছিলো না। বিনা পুঁজি অনলাইন পেজের ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকেন। সোশ্যাল মিডিয়া পেজনির্ভর উদ্যোগের মাধ্যমে শুরু করেছেন নতুন জীবন। মুনাফা লাভ উদ্যোগের মূল বিষয় নয় দেশি পণ্যের প্রচারণা ও বিশ্বের বুকে দেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে চাই। রাতুল সরকারের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প নিয়ে টেকজুমের এবারের আয়োজন।
টেকজুম: উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরু কিভাবে?
রাতুল সরকার : উদ্যোক্তা হিসেবে আমার যাত্রা শুরু মূলত ২০১৮ সালে। যদিও এর আগে উদ্যোক্তা হওয়ার কোনো ইচ্ছেই আমার ছিলনা। গতানুগতিক সবার মত পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করার ইচ্ছা ছিলো। তবে বাস্তবতা উপলব্ধি করতে খুব বেশি সময় লাগে নি।বুঝলাম এদেশে পড়াশোনা শেষ করে আমাকে চাকরির পেছনে ছুটতে হবে অনেক সময়। ভাবলাম চাকরিটা বরং তোলা থাক। উদ্যোক্তা হই। নিজের কর্মসংস্থান করবো পাশাপাশি অন্যদের ও অনুপ্রেরণা দিব। আমার মাধ্যমে কর্মসংস্থান হবে আরো অনেকের। সেই চিন্তা থেকেই আমার উদ্যোক্তা হওয়া। ২০১৮ সালের শেষের দিক থেকে আমি ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু শুরুর দুই বছর আমার জন্য খুব একটা পজিটিভ ছিলো না। কিন্তু আমি হাল ছাড়ি নি কখনোই। লেগে থাকার মানসিকতা নিয়েই ২০২০ সালের ১১ জুলাই Ratul’s World পেজ খুলে নতুন উদ্যোমে নতুন ভাবে যাত্রা শুরু করি। এর পরেই মূলত উদ্যোক্তা হিসেবে ঘুরে দাড়ানোর গল্প শুরু। বর্তমানে আমার সাথে আরো ২-৩ জন কাজ করছে। আমার দেখাদেখি আমার এলাকার আরো ১০-১২ জন তরুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। যা আমার জন্য আনন্দের।
টেকজুম: ক্যারিয়ারে ই- কমার্স কেন বেছে নিলেন?
রাতুল সরকার : বর্তমানে ই- কমার্স অনেক সম্ভাবনাময়। কারো অধীনে না থেকে স্বাধীন পেশা হিসেবে ই- কমার্স বেছে নিয়েছি।এই পেশার মাধ্যমে আমি গ্রামে থেকে আমার পরিবারকে সময় দিয়ে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবো।এই জন্যই মূলত ই- কমার্স বেছে নিয়েছি।
টেকজুম: Ratul’s World কে নিয়ে কি স্বপ্ন দেখেন?
রাতুল সরকার : কোনো রকম মূলধন ছাড়া ই Ratul’s World এর যাত্রা শুরু হয়।সেখান থেজে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ মাসে আমাদের সেল আপডেট ১০লক্ষ+। যার মধ্যে গত এক মাসে গুড় সেল করা হয়েছে ৪ লক্ষ+। প্রায় ২৬০০ কেজির মতো গুড় সেল হয়েছে একমাসে আলহামদুলিল্লাহ। আমার ইচ্ছা Ratul’s World একটি সফল ই- কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক। যেটি একদিকে যেমন অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিবে, অন্যদিকে আরো অনেককে উদ্যোক্তা হতে অনুপ্রেরণিত করবে।
টেকজুম: আপনার কি কি পণ্য রয়েছে।
রাতুল সরকার : Ratul’s World এর শুরুর দিকের পণ্য হিসেবে পণ্য হিসেবে ছিলো নকশিকাঁথা,মাটির তৈজসপত্র, খাঁটি মধু,নারকেলের নাড়ু,আচার ইত্যাদি।পরবর্তীতে শাড়ি,থ্রি পিস এগুলা যুক্ত হয়।শীত পড়ার পর থেকে খেজুরের গুড় নিয়েই বেশি কাজ করছি। খেজুরের গুড়ের চাপ বেশি থাকায় অন্যান্য কিছুর তেমন প্রচার করা হচ্ছে না।
টেকজুম: উদ্যোক্তা হিসেবে কি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি?
রাতুল সরকার : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একদিকে চাকরি পাওয়া যেমন চ্যালেঞ্জিং। তেমনি উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হওয়াও খুব একটা সহজ না। এই পথটাও অনেক প্রতিযোগিতার। অনেক প্রতারক শ্রেণির জন্য মানুষ অনলাইনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলো। এখন আস্তে আস্তে মানুষ আবার অনলাইন কেনাকাটার দিকে ঝুকছে।
মূলধন না থাকা আমার জন্য আরেকটা বড় প্রতিবন্ধকতা ছিলো। যে কারনে আমি পেমেন্ট ফাস্ট সিস্টেম চালু করি। আমি যেটা করেছি সবথেকে ভালো পণ্যের নির্ভরযোগ্য সোর্স বের করেছি। আর সেটার অনলাইন মার্কেটিং করেছি। কোন কাস্টমার যখন কিছু কেনার জন্য পেমেন্ট করেছে সেই টাকা দিয়েই আমাকে বেস্ট পণ্য টা নিয়ে পাঠাতে হয়েছে। তবে আমার যদি মূলধন থাকতো সেটা আমার জন্য অনেক সহজ হতো। অনেক বেকার তরুনরাই উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা রাখে কিন্তু মূলধনের অভাবে আগাতে পারেনা। সরকার যদি সুদ ছাড়া তাদের ঋণ প্রদান করে তাহলে সেটা নিশ্চয়ই অনেক ভালো একটা ব্যাপার হবে। মূলধন ছাড়া বিজনেস করাটা চ্যালেঞ্জিং সেটা আমি বেশ ভালো মতোই বুঝেছি।
টেকজুম: উই কিভাবে আপনার উদ্যোগে ভূমিকা রেখেছে?
রাতুল সরকার : আমার পেজ খোলার পরদিন ই আমি তে যুক্ত হই। একটা পেজ কিভাবে চালাতে হয়,কিভাবে সব কিছু এড করতে হয়,কি করলে পেজের রীচ ভালো হয় যাবতীয় সব কিছু উই থেকেই আমি শিখেছি এবং সে অনুযায়ী পেজ সাজিয়েছি। শুরুর দিকে উই এর নিয়ম অনুযায়ী আমি প্রথমে শুধু লাইক, কমেন্ট করতাম আর প্রচুর পোস্ট পড়তাম।মোটামুটি ৩০ দিন পর উই তে প্রথম পোস্ট করি। আমি আমার উদ্যোক্তা জীবনের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা উই থেকেই পাই। উই তে পোস্ট করার পর আমি বেশ পজিটিভ রেসপন্স পাই। আমার পেজের লাইক এবং সেল বৃদ্ধি পায় উই এর বদৌলতে। আমার পেজে এখন ৮ হাজার লাইক যার অন্তত ৩ হাজার লাইক উই থেকেই এসেছে।তাছাড়া আমার মোট কাস্টমার এবং সেলের ৪০% ই উই থেকে এসেছে। তো বলতে পারি উই এর জন্য আমার উদ্যোক্তা জীবনের পথচলা অনেকটা সহজ হয়েছে।