প্রত্যেক সফল মানুষেরই জীবনে একটি গল্প থাকে। তাকে ঐ সফলতার জন্য অনেক কষ্ট ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হয়েছে। পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক কঠিন পথ। যাদের পরিশ্রমের ফল আমরা দেখতে পাই। কিন্তু হয়তো আমরা অনেকেই তাদেরকে জানিনা। আজ তেমনি কয়েক জন সফল মানুষ সম্পর্কে জানবো। নিজের কিছু করার ইচ্ছে থেকে উদ্যোক্তা হিসাবে তৈরি করতে থাকেন নিজেকে । কাদাম্বরী নামে অনলাইন উদ্যোগ দিয়ে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন রজবি তাসনিম ।
টেকজুম: উদ্যোক্তা হিসাবে কাজ শুরু কিভাবে?
রজবি তাসনিম : পড়াশোনা বিবিএ এবং এমবিএ শেষ হবার পর- নতুন কিছু করার ইচ্ছেটা থেকেই গিয়েছিল। আর সেই সুযোগটা আসে,যখন আমি নিজের শাড়ির ডিজাইন করতে যেয়ে, গ্রামীণ মেয়েদের অসাধারণ হাতের কাজের প্রতিভা দেখে। ছোটবেলা থেকেই আমার ছবি আঁকার প্রবল ঝোঁক ছিল। তখনই আসলে আমার ছবি আঁকার সাথে গ্রামীণ মেয়েদের সুনিপুণ কারুকাজের সমন্বয় করার চিন্তা থেকেই উদ্যোক্তা হিসাবে কাজ করা শুরু।
টেকজুম: ই- কমার্স কেন বেছে নিলেন?
রজবি তাসনিম : ই-কমার্স প্লাটফর্মটা আমার মতো যাদের পুজি স্বল্পতা রয়েছে তাদের জন্য খুবই সময়োপযোগী। এখন ই- কমার্সে খুবই ভালোভাবে প্রতিটা মানুষের কাছে পৌছানো যাচ্ছে এবং খুবই সহজও এটা। তাই দেশীয় সংস্কৃতি শুধুমাত্র দেশে নয় দেশের গন্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরে ছড়িয়ে দেয়ার জন্যই ই- কমার্স বেছে নেয়া।
টেকজুম: কি কি পণ্য বিক্রি করেন?
রজবি তাসনিম : আপাতত দেশিয় শাড়িতে – হাতের কাজের নকশা নিয়ে কাজ করছি।নির্দ্বিধায় বলতে পারি- কোন ই- কমার্স প্রতিষ্ঠান এতো রকম ডিজাইন এর ভিন্নতা নিয়ে আসেনি এখন অব্দি।আমরাই প্রথম আমাদের দেশিয় সব ধরনের শাড়িতে গ্রাম বাংলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য থেকে শুরু করে বাংলার প্রতিটি প্রান্তে থাকা দৃশ্যগুলো আধুনিকতার মিশেলে আমাদের শাড়িতে তোলে ধরার চেষ্টা করেছি।ধীরে ধীরে আমরা ফ্যাশনের অন্যান্য শাখাতেও এই অন্যান্য কাজ নিয়ে পদার্পণ করার ইচ্ছে আছে।
টেকজুম:কাদাম্বরী কে নিয়ে কি স্বপ্ন দেখেন।
রজবি তাসনিম : কাদম্বরী” – দলগত প্রচেষ্টার এক অসাধারণ উদাহরণ । গ্রামীণ যে মেয়েরগুলো আমার সাথে কাজ করে, তাদের সাথে নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই।আমি শুরু করেছিলাম অল্প কিছু সংখ্যক মেয়েদের নিয়ে। এখন প্রায় ৬০/৭০ জন আমার কাজের সাথে জড়িত। তারা শত ব্যস্ততার মাঝে খানিকটা সময় বের করে আর্থিক স্বচ্ছতার জন্য কাজ করছে।উপার্জনক্ষমতা অর্জনের ফলে পারিবারিকভাবে তাদের মর্যাদা যেরকম বাড়ছে তেমনিভাবে পরিবারে মত প্রকাশের স্বাধীনতাও পাচ্ছে। আমি স্বপ্নদেখি তাদের এই অন্যান্য সৃষ্টি মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌছে যাবে। তারা পাবে তাদের শিল্পকর্মের ন্যায্য মূল্য এবং সম্মান। তারি সাথে গতবাধা ডিজাইনের বাইরে যেয়ে দেশীয় সংস্কৃতিকে নতুনভাবে পুরো বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করা।
টেকজুম:নারী উদ্যোক্তা নিয়ে কি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন?
রজবি তাসনিম : সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল – সংসার সামলিয়ে কাজের জন্য সময় বের করা।উদ্যাক্তার আগে আমি একজন “মা”। শিশুর পূর্ণ বিকাশে মায়ের যে বন্ধুত্বপূর্ণ সহচর্য দরকার তা পূরণ করে কাজের জন্য সময় বের করাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।
টেকজুম:সম্প্রতি কি ধরনের ডিজাইনের নতুনত্ব নিয়ে এসেছেন?
রজবি তাসনিম : আমাদের হাতে এখন বসন্ত বরন করার জন্য খুবই সুন্দর ডিজাইন এর কালেকশন আছে।আমরা ইউনিক ডিজাইনের সাথে দেশে প্রথমবারের মতো জামদানী শাড়িতে হাতের কাজের সংযোজন ঘটিয়ে অসাধারণ এক কাজ নিয়ে এসেছি। সামনে একুশে এবং বৈশাখের জন্যও ক্রেতা চাদিহার কথা মাথায় রেখে নতুন কালেকশন আনছি। বিশেষ করে ঈদে সুতির পাশাপাশি ক্রেতাদের আগ্রহের উপর ভিত্তি করে বৃহদাকারে সিল্কের উপরও হাতের কাজ নিয়ে আসছি।
টেকজুম:”উই” কিভাবে আপনার উদ্যোগে ভুমিকা রেখেছে?
রজবি তাসনিম : উই এর অবদান যতটা না বাহ্যিক তারচেয়ে বেশি অন্তর্নিহিত। সবসময় অনুপ্রাণিত হয়েছি উই কে দেখে। যখনই আত্নবিশ্বাসে ঘাটতি হয়েছে তা আবার ফিরে পেয়েছি উই এর কাছ থেকেই। তাছাড়া নাসিমা আপুর মনোবল যেকোনো নারীকেই এগিয়ে যাওয়ার মনোবল দেয়। রাজীব স্যারের জন্য আজ দেশের প্রতিটি জায়গা থেকে নারীশক্তিগুলোর আত্নপ্রকাশ হচ্ছে। উনার মেধা ও মননশীলতায় উনি খুবই সুন্দরভাবে আয়োজন করে আমাদের মতো উদ্যোক্তাদের সুযোগ করে দিচ্ছেন। উই শুধু ব্যবসায়িক প্লাটফর্ম নয় আমার কাছে দেশপ্রেমীদের স্বপ্ন বুননের প্রধান কারিগর।