গেলো বছর ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয়। ১৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যু ঘটে। অবস্থার অবনতি হতে থাকলে ২২ মার্চ সরকার ১০ দিনের সাধারণ ছটি ঘোষণা করে। পরে কয়েক দফায় ছুটি বাড়ে ৩০ মে পর্যন্ত। এরই মধ্যে সারা দেশে জরুরি সেবা, পণ্য পরিবহণ, চিকিৎসা সহ অতি-প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র ছাড়া বাকি সবকিছু লকডাউনের কবলে পড়েছিল। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শিক্ষাখাত, কৃষিখাত সহ অর্থনীতি।
লকডাউনে এক এক করে বন্ধ হয়েছিল সবকিছু। বহু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেতন বন্ধ হয়ে বা চাকরি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় বহু মানুষ। অসম্ভব হয়ে উঠে পরিবারের চাহিদা পূরণ। ঠিক তখনি আয় বাড়তে থাকে দেশি পণ্যের ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের।
২০১৯ সালের গোড়ার দিকে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি রাজিব আহমেদ উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) ফেসবুক গ্রুপে দেশি পণ্যের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করেন। এই চেষ্টার দৃশ্যমান হয় ‘উই কালারফুল ফেস্ট- ২০১৯’ এ। মেলায় পাঁচ লাখ টাকার বেশি দেশি পণ্যের কেনাবেচা হয়।
করোনার লকডাউনে পহেলা বৈশাখের বিক্রি বন্ধ হয়ে এবং ইদের বিক্রি কমে প্রোডাক্ট আটকে যায় দেশি পণ্যের ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের। এ ক্ষতি পোষাতে চাঁদ রাতে ওয়েভ তোলেন ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি রাজিব আহমেদ। দেশি পণ্যের ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের একরাতে বিক্রয় হয় দশ লাখের বেশি।
করোনাকালীন সময়ে দেশি পণ্যের ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে চাঁদ রাতের ওয়েভের ন্যায় সিলেটি ওয়েভ, মিরপুর ওয়েভ, অনলাইন আড্ডা, ডেলিভারি চার্জ ফ্রি সহ বিভিন্ন আইডিয়া বাস্তবায়ন করা হয়। একই সময়ে উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কোর্স ও ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা হয় অনলাইনে। দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি একের পর এক লাখপতি হতে থাকে উদ্যোক্তারা। করোনাকালীন সময়ে সাত’শ এর অধিক লাখপতি উদ্যোক্তা (লাখ টাকা বিক্রি) হয় উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) তে। এ যেন সাপে বর।
করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় প্রতিদিন প্রায় সনাক্ত হচ্ছে ছয় হাজার রোগী। এ ধাক্কা সামলাতে সরকারি লকডাউন ঘোষণা করেছে। সামগ্রিক অর্থনীতি ধাক্কা খেলেও শক্তিশালী হবে দেশি পণ্যের ই-কমার্স বাজার। এমনটাই মনে করে এ খাতে উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞরা। উদ্যোক্তারা মনে করে, স্বস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে ক্রেতারা দোকানে কেনাকাটার পরিবর্তে অনলাইনে কেনাকাটা কেই নিরাপদ মনে করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাকালীন সময়ে আমদানি বন্ধ থাকে এবং ক্রেতারা ঘরে থাকে। এ বিপুল চাহিদা পূরণে দেশি পণ্যের ই-কমার্স ই ভরসা।
এ খাতের উদ্যোক্তা ও কাকলি’স এ্যাটায়ারের স্বত্বাধিকারী কাকলী তালুকদার টেকজুম কে বলেন, ”এই পেন্ডামিক সিচুয়েশনে মানুষ শপিং মলে গিয়ে কেনাকাটা করাটাকে রিস্কি মনে করছেন, তাই অনলাইন মুখী হচ্ছেন। যারা একবার দুইবার বাধ্য হয়ে অনলাইনে কেনাকাটা করছেন তারা যখন ভালো মানের পণ্য এবং ভালো সার্ভিস ঘরে বসে পাচ্ছেন, তখন তারা অনলাইন শপিং এর উপর আস্থা রেখে নিয়মিত ক্রেতা হয়ে যাচ্ছেন।
কাস্টমার এর এই আস্থা ধরে রাখার জন্য আমাদের যেটা করতে হবে তা হলো পণ্যের মান ঠিক রাখতে হবে,কাস্টমার বেজড সার্ভিস দিতে হবে এবং ডেলিভারি সিস্টেম আপডেট করতে হবে।
দ্বিতীয় ধাক্কার লকডাউনে দেশি পণ্যের ই-কমার্স নিয়ে ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি রাজিব আহমেদ বলেন, ”লকডাউন নিয়ে সবাই এখন চিন্তিত। বিশেষ করে উদ্যোক্তারা, কারন সামনে পহেলা বৈশাখ এবং ঈদের সময়। গত বছর এই সময়ে লক ডাউনের কারনে পহেলা বৈশাখে একদম বিক্রি ছিল না। ঈদের বিক্রিও অনেক কম হয়েছে। আশা করবো এবার লকডাউনে কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যক্রম যতটা সম্ভব চালু থাকবে। তাহলে যেসব অর্ডার আসবে সেগুলো পাঠাতে পারবে দেশি পন্যের ই-কমার্স উদ্যোক্তারা।”
উল্লেখ্য, সরকারের পক্ষ থেকে কুরিয়ার বা ডেলিভারি সার্ভিস বন্ধের ব্যপারে কোন নির্দেশনা আসেনি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, ”লকডাউনে জরুরি সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকবে।”