জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ আজ অনিশ্চয়তার মুখে৷ ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রির (১.৫ ডিগ্রি বাঞ্চনীয়) মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার ব্যাপারে প্রায় দু’শো দেশ চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। অস্বাভাবিক তাপমাত্রার কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের সকল দেশ স্বল্প-কার্বন মডেল অনুসরণের সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।
আর এ পরিপ্রেক্ষিতে, জলবায়ু সঙ্কট মোকাবিলায় অবদান রাখার লক্ষ্যে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস এর ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় টেকসই পদ্ধতি অবলম্বন করছে একুশ শতকের শুরু থেকেই। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি সবার কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে স্যামসাং। ইতোমধ্যে স্যামসাং তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে গ্রহণ করেছে নানাবিধ পদক্ষেপ।
২০২০ সালের মধ্যে স্যামসাং যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপে তাদের সকল ওয়ার্কসাইটে শুধুমাত্র নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার শুরু করে। এছাড়া, কোরিয়ার বিভিন্ন ওয়ার্কসাইটে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে প্রতিষ্ঠানটি সৌর ও জিওথার্মাল সুবিধা স্থাপন করে। বিশ্বের যেসব অঞ্চলে স্যামসাং তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, সেসব অঞ্চলে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যে স্যামসাং অঞ্চল-ভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে রিনিউয়েবল এনার্জি সার্টিফিকেট (আরইসি) ক্রয় এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ক্রয়ের চুক্তি (পিপিএ) উল্লেখযোগ্য।
২০০৮ সালে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস কর্পোরেট ইকো-কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করে এবং শক্তি সাশ্রয়ী পণ্য উৎপাদনে তাদের বিভিন্ন ব্যবসায়িক ইউনিটে নিয়মিত সভা আয়োজন শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন টিম ইতোমধ্যে এমন পণ্য তৈরিতে সক্ষম হয়েছে, যেগুলো একইসাথে সর্বাধিক ক্ষমতাসম্পন্ন এবং শক্তি-সাশ্রয়ী। কার্বন পদচিহ্ন হ্রাস করার লক্ষ্যে স্যামসাং তাদের নিও কিউএলইডি টেলিভিশনের সাথে সৌর সেল চালিত রিমোট সরবরাহ করছে। এই উদ্ভাবন সাত বছরে ব্যবহৃত প্রায় ৯৯ মিলিয়ন এএ ব্যাটারির অপচয় রোধ করতে সহায়তা করবে।
টিভি পণ্যে রিসাইকেল করা প্লাস্টিক ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন হ্রাস করার চেষ্টা করছে স্যামসাং। এই লক্ষ্যে তারা তাদের মনিটর এবং সাইনেজের পিছনের কভারে রিসাইকেলকৃত উপকরণ ব্যবহার করছে। চলতি বছরের স্যামসাংয়ের সকল লাইফস্টাইল টিভি এবং বেশিরভাগ নিও কিউইএলইডি টিভিতে ব্যবহৃত হয়েছে ইকো-প্যাকেজিং ডিজাইন। স্যামসাং ভিজ্যুয়াল ডিসপ্লে ব্যবসার লক্ষ্য বছরে ২৫,০০০ টন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করা।
২০১৬ সাল থেকে স্যামসাং তাদের গ্যালাক্সি স্মার্টফোন এবং ট্যাবে ব্যবহার করছে পলিকিটোন, যা কিনা কার্বন মনোক্সাইড (গ্রিনহাউস গ্যাস) হ্রাসে অবদান রাখে। প্রস্তুত থেকে বিতরণ সকল পর্যায়ে পূর্বের বিভিন্ন মডেলের চেয়ে কম গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ফলে সম্প্রতি বাজারে আসা স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২১ ইতোমধ্যে কার্বন ট্রাস্টের কাছ থেকে ‘রিডিউসিং কার্বন ডাই অক্সাইড’ সার্টিফিকেট অর্জন করেছে। পাশাপাশি, স্যামসাং তাদের সকল স্মার্টফোনের চার্জারে স্ট্যান্ডবাই শক্তি খরচ হ্রাসে কাজ করছে।
স্যামসাং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হোম অ্যাপ্লায়েন্স তৈরি করছে অনেক বছর ধরেই। চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রিত স্যামসাংয়ের দুটি মডেলের ডিশওয়াশার ‘এনার্জি স্টার’স ২০২১ মোস্ট এফিশিয়েন্ট ডিশওয়াশার’ -এর তালিকায় তালিকাভুক্ত হয়েছে। এই ডিশওয়াশারগুলো সাধারন ডিশওয়াশারের তুলনায় বছরে ৩৮৭ গ্যালন পানি সঞ্চয় করতে সক্ষম।
সেমিকন্ডাক্টরের ক্ষেত্রে, স্যামসাংয়ের উল্লেখযোগ্য টেকসই অগ্রগতি হয়েছে। মোট নয়টি কী মেমরি পণ্য – চারটি ডিআরএএম সলিউশন, তিনটি সলিড স্টেট ড্রাইভ (এসএসডি) এবং দুটি এমবেডেড স্টোরেজ (ই-স্টোরেজ) ডিভাইস, কার্বন ট্রাস্টের প্রোডাক্ট কার্বন ফুটপ্রিন্ট (পিসিএফ) স্বীকৃতি অর্জন করেছে। এছাড়া, স্যামসাং এক-তৃতীয়াংশ কম ট্রে প্যাকেজিং ব্যবহার করে, পরিবেশ-বান্ধব উপাদান দ্বারা প্লাস্টিক ট্রে প্রতিস্থাপন করে এবং সম্পূর্ণ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসের মাধ্যমে প্রায় ৮৪ টন কার্বন সাশ্রয় করেছে।
স্যামসাংয়ের ডিজিটাল ইনভার্টর কম্প্রেসর সিঙ্গেল-স্পিড ইনডাকশন মোটর কম্প্রেসরের চাইতে ৩০ শতাংশ কম বিদ্যুৎ খরচ করে। সুদক্ষ কমপ্রেসর, ইনসুলেশনে কম গ্রিনহাউস গ্যাস নিসঃরণকারী উপাদান এবং স্বল্প গ্রিনহাউস গ্যাস রেফ্রিজারেন্টের জন্য বিগত বছর যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রিত স্যামসাংয়ের ৬টি মডেলের রেফ্রিজারেটর যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রোনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সির (ইপিএ) কাছ থেকে ‘এনার্জি স্টার ইমারজিং টেকনোলজি’ পুরস্কার লাভ করেছে।
জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউসের প্রভাব এবং সাম্প্রতিক বছরের জলবায়ু পরিবর্তন সমগ্র মনুষ্যজাতির জন্য হুমকিস্বরূপ। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্যামসাং শক্তি-সাশ্রয়ী পণ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়া অনুসরণ অব্যাহত রাখবে।