পরিবেশবান্ধব পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে চীন। বিদ্যুৎ উৎপাদনে জৈব জ্বালানীর ব্যবহার থেকে সৃষ্ট দূষণ কমাতে বিকল্প হিসেবে পারমাণবিক চুল্লির ব্যবহার বিবেচনা করা হয় থাকে ক্ষেত্র বিশেষে। কিন্তু এই প্রযুক্তিরও আছে নানা ঝুঁকি ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব। চীনের নতুন পরিকল্পনা সেই ঝুঁকি ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাবকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার আশা দেখাচ্ছে।
এই প্রযুক্তি সফল হলে তা শুধু বৈশ্বিক পরিবেশের উপরই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না, বরং জ্বালানী খাতে রাজনৈতিক বিতর্কের একটি বড় অংশের সমাধান হবে বলে জানিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট এনগ্যাজেট। প্রচলিত ইউরেনিয়াম নির্ভর পারমাণবিক চুল্লি থেকে যে বর্জ্য তৈরি হয়, তা ১০ হাজার বছর পর্যন্ত তেজস্ক্রিয় থাকে। বাইরের পরিবেশে যেন ওই বর্জ্য না ছড়ায় সে জন্য ব্যবহার করতে হয় লেড কন্টেইনার এবং বিশেষায়িত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ইউরেনিয়াম নির্ভর পারমাণবিক চুল্লি থেকে সৃষ্ট বর্জ্যে আরও থাকে প্লুটোনিয়াম-২৩৯ আইসোটোপ, যা পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই ধরনের চুল্লি কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হলে অথবা ফাটল ধরলে বিপজ্জনক হারে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায় এবং চেরনোবিলের মতো বিপর্যয়ের আশংকা থাকে। চুল্লি ঠাণ্ডা রাখতেও প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন হয় যা পরিবেশ দূষণে ভূমিকা রাখে।
তবে লাইভসায়েন্স জানিয়েছে, ইউরোনিয়ামের বদলে তরল থোরিয়াম ও গলিত লবণ নির্ভর পারমাণবিক চুল্লি বানাতে চায় চীন। থোরিয়াম নির্ভর চুল্লির মূল উপাদানগুলো ফ্লোরাইড লবণ হিসেবে বের হয়ে আসে এবং এর বর্জ্য থেকে যে ইউরেনিয়াম-২৩৩ আইসোটোপ পাওয়া যায়, সেটিও পরিশোধনযোগ্য। অন্যান্য বর্জ্য উপাদান তেজস্ত্রিয় থাকে পাঁচ’শ বছর পর্যন্ত। চুল্লিতে ফাটল ধরলে গলিত লবণ ঠাণ্ডা হয়ে জমাট বেঁধে থোরিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর পথ বন্ধ করে দেয়। থোরিয়াম নির্ভর চুল্লিতে পানির প্রয়োজন হয় না বলে মরুভূমির মতো জনশূন্য স্থানেও এটি নির্মাণ সম্ভব। এ ছাড়া এই ধরনের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণেও ব্যবহার করা সম্ভব নয়।
এনগ্যাজেট জানিয়েছে, চীন থোরিয়াম নির্ভর পারমাণবিক চুল্লির প্রটোটাইপ নির্মাণের কাজ শেষ করবে চলতি বছরের আগস্ট মাসে। সেপ্টেম্বরে এর কার্যক্ষমতা নিয়ে পরীক্ষা শুরু হবে। সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নির্মিত থোরিয়াম নির্ভর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চালু হবে ২০৩০ সালে।
তবে এই প্রযুক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও এর বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর জন্য মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশংকা করছে এনগ্যাজেট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত ‘নাট্রিয়াম রিয়্যাক্টর’ নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। অন্যদিকে চীনের বিদ্যুৎ উৎপাদন খাত এখনও কয়লা নির্ভর। তবে থোরিয়াম নির্ভর প্রযুুক্তি থেকে সাফল্য পেলে, চীনের ২০৬০ সাল নাগাদ ‘কার্বন নিউট্রাল’ দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের পথ সহজ হবে বলে মন্তব্য করেছে সাইটটি।