গুগলের বিরুদ্ধে গত বছর দায়ের করা অ্যান্টিট্রাস্ট মামলায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে সহায়তা দিয়ে আসছিল মাইক্রোসফট। কিন্তু আদালতের পর্যবেক্ষণ, মামলায় জরুরি তথ্য-প্রমাণাদি পেশ করতে উত্সাহী নয় সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। বাদী-বিবাদীর যুক্তি-তর্ক শেষে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণাদি নিয়ে হাজির হতে মাইক্রোসফটের প্রতি সমন জারি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত।
মার্কিন প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম দ্য ভার্জের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার সকালে একটি শুনানিতে গুগল ও মাইক্রোসফটের আরজি শোনেন বিচারক অমিত মেহতা। কিন্তু আদালতের নজরে আসে যে মামলাটি শক্তিশালী করতে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণাদি প্রয়োজন।
সার্চ ইঞ্জিনে অনুসন্ধান ও বিজ্ঞাপনে গুগল প্রতিযোগিতা নীতি লঙ্ঘন করছে—এ অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে গুগলের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস (ডিওজে)। এতে আরো যে অভিযোগ তোলা হয় তাতে বলা হয়, অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএসের সঙ্গে গুগল যে এক্সক্লুসিভ চুক্তি করেছে তাতে প্রতিদ্বন্দ্বী সার্চ ইঞ্জিনগুলোর টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে প্রতারণামূলক নীতি অনুসরণেরও অভিযোগ তোলা হয়।
মার্কিন আইন বিভাগের মামলা দায়েরের আগে তাদের চার লাখের মতো বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণাদি শেয়ার করে মাইক্রোসফট। শুক্রবার শুনানির আগে গুগল যুক্তি দেখায়, অভিযোগের সপক্ষে আদালতেও যেন সমপরিমাণ তথ্য-প্রমাণাদি পেশ করে মাইক্রোসফট।
গুগলের আরজিতে বলা হয়, মাইক্রোসফটের মতো অন্য কোনো থার্ড পার্টি এ মামলাটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। ডিওজে ও কলোরাডো কর্তৃপক্ষের মামলায় মাইক্রোসফটের কথা কয়েক ডজনবার ব্যবহার করেছে। মামলা দায়েরের সময় চাপ প্রয়োগে পাশে থাকলেও আদালতে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণাদি পেশে তেমন গরজ দেখাচ্ছে না মাইক্রোসফট।
গত এপ্রিলে মাইক্রোসফটের প্রতি প্রথম সমন জারি করেছিল গুগল। সেখানে মাইক্রোসফটের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, সার্চ ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে গুগলের বিপরীতে হিমশিম খাচ্ছিল নাকি লড়াইয়ে কুলিয়ে উঠতে পারে নাই। এ বিষয়টি অনুসন্ধানে তাদের ২৭ নির্বাহীর মাত্র আটজনের বিরুদ্ধে তল্লাশি করতে দেয় মাইক্রোসফট কর্তৃপক্ষ। মাইক্রোসফটের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণাদি উপস্থাপনে আরো শক্তিশালী আদালত বসানোর দাবি তুলেছেন গুগলের কৌঁসুলিরা।
সর্বশেষ আরজিতে গুগল ১৯ জন সাবেক ও বর্তমান মাইক্রোসফট নির্বাহীর নাম উল্লেখ করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন উইন্ডোজ ফোনের প্রধান অ্যান্ড্রু লিজ ও সাবেক উইন্ডোজ প্রধান টেরি মিয়ারসন। আদালতে চলমান অ্যান্টিট্রাস্ট মামলায় তাদের কাছে থাকা তথ্যাদি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি গুগলের। কারণ এ নির্বাহীদের ওপর তল্লাশি চালালে দেখা যাবে কীভাবে বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে মাইক্রোসফট। কিংবা সার্চ অ্যাডভার্টাইজিং বিজনেসে কেন সাফল্য পায়নি পল অ্যালেন ও বিল গেটস প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি। মাইক্রোসফটের ওই নির্বাহীদের অন্তত দুদশকের তথ্য-প্রমাণাদি আদালতে পেশের আরজি করেছে গুগল।
গুগলের যুক্তি-তর্ক পেশের পর প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণাদি নিয়ে উপস্থিত হতে মাইক্রোসফটের প্রতি এ সমন জারি করলেন বিচারক অমিত মেহতার আদালত।