বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের মাধ্যমে তিন দশক আগে বাংলাদেশে টেলিকম খাতের ব্যবসার গোড়াপত্তন। এরপর থেকে গ্রাহকসংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর আয় ও মুনাফাও বাড়তে থাকে, যার সুবাদে টেলিকম খাতের ব্যবসা হয়ে ওঠে বেশ আকর্ষণীয়। কোভিড-১৯ চলাকালে মোবাইল ফোন খাতকে জরুরি ক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ব্যবসার পাশাপাশি এ খাতটি অর্থনীতি পরিচালনায় গ্রাহকদের সংযোগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। তবে কয়েক বছর ধরেই চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে এ খাতের কোম্পানিগুলো। প্রত্যাশিত মাত্রায় আয় ও মুনাফা করতে পারছে না তারা। টানা দুই প্রান্তিক ধরে টেলিকম খাতের ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক। বর্তমানে টেলিকম অপারেটররা নতুন করে ইকুইটি বিনিয়োগ হিসেবে আর ডলার আনছে না। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের উচ্চ করহার ও আর্থিক নীতিসংক্রান্ত বিষয়গুলো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করছে।
৬ জুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। নতুন এ বাজেটে মোবাইল ফোনে কথা বলা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর আরও ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করেন তিনি, যা ওই দিন মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হয়েছে। ফলে খরচ বেড়েছে টকটাইম ও ইন্টারনেট সেবায়। এর ফলে এ শিল্পটি দ্রুত অগ্রসর হওয়ার পরিবর্তে আরও কঠিন সময় অতিক্রম করবে, যা সার্বিকভাবে দেশের ডিজিটালাইজেশনের গতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শুক্রবার সময়ের আলো থেকে জানা যায়, এর আগে টকটাইম ও ইন্টারনেট সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা ছিল। তার সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক কার্যকর করা হয়েছে। আগে একজন ভোক্তা মোবাইলে ১০০ টাকা রিচার্জ করলে ৭৩ টাকার কথা বলতে পারতেন। বাকি ২৭ টাকা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক হিসেবে কেটে নেওয়া হতো। আর এখন মোবাইল সেবার ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ফলে ভোক্তারা ১০০ টাকা রিচার্জ করলে ৬৮ টাকার কথা বলতে পারছেন।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাতের যে অবদান এবং এই খাতে যে কর ব্যবস্থা বিদ্যমান, তার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা খুব জরুরি। দেশ যখন উন্নততর প্রযুক্তিতে যুক্ত হওয়ার জন্য কাজ করছে তখন বর্তমান কর কাঠামো ডিজিটাল প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং বিদেশি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য মোবাইল খাতের করকে যৌক্তিক করা উচিত। এক্ষেত্রে অবশ্যই গ্রাহক স্বার্থকে সবচেয়ে আগে বিবেচনায় নিতে হবে।আমরা মনে করি, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের টেলিকম খাতকে গ্রাহক ও বিনিয়োগবান্ধব করার লক্ষ্যে নীতিনির্ধারকদের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দক্ষতার সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।