ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্যার এএফ রহমান হলের ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ১৭ লাখ ৮৯ হাজার টাকার বাকি খেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) হল ক্যান্টিনে ছাত্রলীগ নেতাদের বাকির একটি তালিকা প্রকাশ করেন ক্যান্টিন মালিক বাবুল মিয়া। এতে তিনি দাবি করেছেন, গত ৫ বছরে এই টাকা বাকি খেয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
তালিকা অনুযায়ী, ১৭ লাখ ৮৯ হাজার টাকার মধ্যে হল ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক মুনেম শাহরিয়ার মুনই খেয়েছেন ৫ লাখ টাকারও বেশি। তার মধ্যে সভাপতির ৩ লাখ ৬০ হাজার এবং সাধারণ সম্পাদক ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা।
হলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও আরও ৪৬ জন ফাউ খেয়েছেন অর্থাৎ খেয়ে বিল দেননি। তারা প্রত্যেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
অন্য ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে ৩১৬নং রুমের উচ্ছল ৮৫ হাজার, ৪০৯নং রুমের রবি এক লাখ ১৮ হাজার, ৩১৭নং রুমের সাজু ১২ হাজার, ৩০৬নং রুমের নাহিদ এক লাখ ১৫ হাজার, ২২০নং রুমের জুয়েল এক লাখ ১৫ হাজার এবং একই রুমের ছাত্রলীগ নেতা কাজল ৭০ হাজার, ২২২নং রুমের শুভ ১৭ হাজার, ২১৮নং রুমের ইমরান তিন হাজার, ৪০৫নং রুমের লালন চার হাজার ৫০০, ২১৬নং রুমের আলিফ ১২ হাজার, ২২১নং রুমের বাপ্পি ১৮ হাজার টাকা, ২১২নং রুমের হৃদয় তিন হাজার, ২১০নং রুমের হারুন ৭০ হাজার, ২০৫নং রুমের হাবির তিন হাজার, ৩১৯নং রুমের নুহাশ তিন হাজার, ৩২১নং রুমের রাহিম সরকার ৫৫ হাজার, ৩১৪নং রুমের আবদুল আলীম ৬০ হাজার, ৩২০নং রুমের জাওয়াদ ১০ হাজার, ৪০২নং রুমের তানজিদ আলামিন পাঁচ হাজার, ৩২২নং রুমের সিফাত ২ হাজার টাকা, ৩০৮নং রুমের এমরান ২৫০০, ২০৭নং রুমের লাভলু তিন হাজার, ৩১৫নং রুমের আফসার ৪৫ হাজার টাকা এবং শাহাদাত ৩০০০, ৫১৫নং রুমের শাহাদাত ১৫ হাজার, ৫১৬নং রুমের জাহিদ ৩ হাজার, ৩১৪নং রুমে সাব্বির ৩ হাজার, ৩১১নং রুমের বায়জিদ ৪৫ হাজার, ৩২২নং রুমের বায়জিদ ২০০০, ৫১৪নং রুমের নাজমুল ৩৫ হাজার, ৩১৪নং রুমের আসিফ ৩ হাজার, ৪১৭নং রুমের সিরাজ ৪ হাজার এবং রাজু ৬১ হাজার, ৩১৪নং রুমের অটল ৪ হাজার, ৫২১নং রুমের লাভলু ৪৮ হাজার টাকা, ৫০১নং রুমের ২৫০০ টাকা, ৩১৮নং রুমের মেহেদী ৩৫০০ টাকা, ২২২নং রুমের বাঁধন আট হাজার, ৩১৯নং রুমের শ্যামল ৩০০০, ৫১৬নং রুমের হাতিম পাঁচ হাজার, ২১৯নং রুমের কাব্য ২০০০ এবং সৌরভ পাঁচ হাজার, ৪১৯নং রুমের হাসান ৪০০০ এবং ৩১৮নং রুমের মিজান ৩০০০ টাকা বাকি খেয়েছেন বলে জানা গেছে।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, তারা সবাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়, ঢাবি এবং হল ছাত্রলীগের নেতা এবং কয়েকজন হল ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী এবং বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী।
ক্যান্টিন মালিক বাবুল মিয়া বলেন, ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার ক্যান্টিন থেকে ১৭ লাখ ৮৯ হাজার টাকার বেশি বাকি খেয়েছে। আমাকে একদম পথে বসিয়ে দিয়েছেন তারা। আমরা গরিব মানুষ, এক লাখ টাকাও তো অনেক বেশি। যেভাবে হোক আমার এ টাকা ফেরত চাই।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিনই হলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের খাবার তাদের রুমে দিয়ে আসা লাগত। তারা খাতায় বাকি লিখতে দিতে চাইত না। তাদের কারণেই আমরা চাইলেও খাবারের মান ভালো করতে পারিনি।
স্যার এএফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. রফিক শাহরিয়ার বলেন, হলে প্রভোস্ট হিসেবে অল্প কিছুদিন হলো আমি দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি ক্যান্টিন মালিককে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, ক্যান্টিনের খাবারের মান খারাপ হওয়ার কারণ কী? আর এর পেছনে কারো কোনো বাকি খাওয়ার বিষয় জড়িত কিনা। তখন তিনি বলেছিলেন যে, কেউ নাকি বাকি খায় না। কিন্তু তার কিছুদিন পরই হঠাৎ ১৭ লাখ ৮৯ হাজার টাকা বাকির বিষয়টি জানাচ্ছেন। যাইহোক, বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে হল প্রশাসনের যতটুকু কাজ করা প্রয়োজন সেটা করা হবে।