দিন দিন মানুষের জীবন ইন্টারনেটের সঙ্গে আরও বেশি জুড়ে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে ‘ ’ বা ‘৫জি’ শব্দগুলোর ব্যবহার। এগুলোর ঘন ঘন ব্যবহার সত্ত্বেও অনেকেই ওয়্যারলেস ইন্টারনেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এসব শব্দের আসল মানের সঙ্গে সম্ভবত পরিচিত নন।
এ বিষয়ে একটি ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট হাও-টু গিক। চলুন জেনে নেওয়া যাক এর বিস্তারিত।
মোবাইল ডেটা বনাম ওয়াই-ফাই
মোবাইল ডেটা এবং ওয়াই-ফাই উভয়ই ইন্টারনেটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ডিভাইসগুলো যুক্ত করতে রেডিও ওয়েভ বা বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে। কাজ ও ক্ষমতার বেলায় উভয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ভেরাইজন, এটিঅ্যান্ডটি, বাংলাদেশের গ্রামীণফোনের মতো সেলুলার পরিষেবা কোম্পানিগুলো দেশজুড়ে সেল ফোন, স্মার্ট ডিভাইস এবং অন্যান্য মোবাইল ডিভাইসে ডেটা দিয়ে থাকে বড় সেলুলার টাওয়ার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। যেহেতু এটি এনক্রিপ্টেড সংযোগ, মোবাইল ডেটাকে তথ্য সুরক্ষার দিক থেকে ওয়াই-ফাইয়ের তুলনায় নিরাপদ মনে করা হয় বলে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে৷
অন্যদিকে ওয়াই-ফাই ব্যবহার করতে, ইন্টারনেট পরিষেবা কোম্পানিগুলো একটি নির্দিষ্ট বিল্ডিংয়ের মধ্যে তারযুক্ত নেটওয়ার্ক তৈরি করতে একটি মডেম ব্যবহার করে, যেমন কোনো বাড়ি বা স্থানীয় লাইব্রেরি। এরপরে একটি রাউটারের সঙ্গে তারযুক্ত বা তারবিহীনভাবে মডেম থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ ডিভাইসগুলিতে সংকেত পাঠাতে ব্যবহৃত হয়। অনেক সময় মডেম ও রাউটারকে ব্যবহারের সুবিধার জন্য একটিই ডিভাইসে একত্রিত করা হতে পারে।
৫জি কী জিনিস?
১৯৮০ দশকের গোড়ার দিকে আত্মপ্রকাশ করে ৫জি প্রযুক্তি; এটি ওয়্যারলেস সেলুলার নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির ৫ম প্রজন্ম। ৫জি মিলিমিটার ওয়েভ (এমএমওয়েভ) স্পেকট্রাম ব্যবহার করে, যেখানে এর পূর্বসূরি ৪জিতে ব্যবহার হত মিড ও লো ব্যান্ড স্পেকট্রাম।
আগের তুলনায় বাড়তি গতি ও কম বাধা পাওয়ার জন্য এমএমওয়েভ ব্যবহার করা দারুণ উপায় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে হাও-টু গিক। বাস্তব জীবনের পরিস্থিতে ৪জি প্রযুক্তির সেরা ডাউনলোডের গতি ৫০এমবিপিএস। অন্যদিকে ৫জি ৫০এমবিপিএস থেকে ৩জিবিপিএস পর্যন্ত গতিতে ডাউনলোড করতে পারে।
গতি ও বাধা মোকাবেলায় উন্নয়নের পাশাপাশি ৫জি আরও দক্ষ এবং একইসঙ্গে অনেক ডিভাইসে ডেটা পাঠাতে পারে। ফলে, সেলুলার পরিষেবা কোম্পানিগুলো ফাইবার অপটিক ও তারের বিকল্প হিসাবে ‘৫জি হোম ইন্টারনেট’ পরিষেবা দিতে শুরু করেছে।
তবে, ৫জি প্রযুক্তির বিপত্তি হল, এমএমওয়েভ নেটওয়ার্কে বাইরের হস্তক্ষেপের ঝুঁকি থাকে। এটি মোকাবেলা করে সরাসরি সেলুলার কোম্পানিগুলো বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে যেমন ‘স্মল সেল’ নামে পরিচিতি ছোট বেইজ স্টেশন এবং ম্যাসিভ এমআইএমও (মাল্টি-ইনপুট, মাল্টি-আউটপুট)।
ওয়াই-ফাই ৫ কী?
ওয়াই-ফাই ৫ এর ‘আইইইই স্ট্যান্ডার্ড ৮০২.১১এসি’র জন্য পরিচিত। ১৯৯০-এর শেষ নাগাদ প্রকাশ পায় এর প্রাথমিক সংস্করণ, যাকে ‘ওয়াইফাই লিগ্যাসি’ বা ‘ওয়াইফাই ০’ বলা হয়। ওয়াই-ফাই ৫ হল এর ষষ্ঠ প্রজন্ম।
এ ছাড়া, ওয়াই-ফাই ৫ হল ইন্টারনেট প্রযুক্তির দ্বিতীয় প্রজন্ম যা দুই দশমিক চার গিগাহার্টজ ও পাঁচ গিগাহার্টস উভয় মাত্রার ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করতে পারে।
একই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা সত্ত্বেও ওয়াই-ফাই ৪-এর তুলনায় দ্রুততর গতি ও কম বাধা রয়েছে ওয়াই-ফাই ৫-এ।
কাগজে কলমে, ওয়াইফাই ৫-এ ১৩০০ এমবিপিএস পর্যন্ত গতি উঠতে পারে, যা ওয়াইফাই ৪ এর ৬০০ এমবিপিএসের দ্বিগুণেরও বেশি।
তবে, ওয়াইফাইয়ের প্রকৃত গতি নির্ভর করে হার্ডওয়্যার, ব্যবহারকারীর ভৌগলিক অবস্থানসহ নানা বিষয়ের ওপর। এ ছাড়া, ওয়াই-ফাই ৪-এর একক ব্যবহারকারী এমআইএমও’র বিপরীতে ওয়াই-ফাই ৫-এর রয়েছে একাধিক ব্যবহারকারীর এমআইএমও সমর্থন।
৫জি হোম ইন্টারনেট বনাম ওয়াই-ফাই ৫
৫জি রাউটারগুলো, ওয়াই-ফাই ৫-এর মডেম ও রাউটারগুলোর থেকে একেবারে আলাদা প্রযুক্তি ব্যবহার করে, তাই কেউ চাইলেও ইচ্ছামত দুটির মধ্যে অদল বদল করতে পারবেন না। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, তারযুক্ত ওয়াইফাই মডেলগুলো বিভিন্ন ডিভাইসে ওয়্যারলেস বা তারবিহীনভাবে ইন্টারনেট সংযোগ দিতে বাহ্যিক বা সমন্বিত রাউটার ব্যবহার করে।
অন্যদিকে, ৫জি রাউটারগুলোয় অভ্যন্তরীণ মডেম রয়েছে যা সেল টাওয়ার থেকে আসা ৫জি সংকেত ধারণ করে ইন্টারনেট সংযোগ করে।
এ কারণেই, ওয়াইফাই সংযোগ আসে ইন্টারনেট পরিষেবা বা আইএসপি কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে। অন্যদিকে ৫জি ইন্টারনেট পরিষেবা দিয়ে থাকে সেলুলার বা মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো।