নতুন নামকরণের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১, এখন থেকে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১ (বিএস-১) হিসেবে পরিচিত হবে। সরকারের প্রজ্ঞাপনে সোমবার (৩ মার্চ) জানানো হয়েছে যে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১ রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ধারণা ২০০৮ সালে জন্ম নেয়। টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি স্যাটেলাইট নির্মাণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। ২০০৯ সালে জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালায় এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০১2 সালের মার্চে ‘স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল’ কে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ প্রকল্পের মূল চুক্তি হয় ফ্রান্সের থ্যালাস অ্যালেনিয়া স্পেসের সঙ্গে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য স্যাটেলাইটের ডিজাইন এবং নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়। স্যাটেলাইটের কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনার জন্য বিটিআরসি রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২০১৭ সালে ‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা হয় এবং প্রকল্পটির সার্বিক পরিচালনা শুরু হয়।
এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৪ সালে প্রায় ২ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে আসছে, যা মোট ব্যয়ের প্রায় ৪৪ শতাংশ। বাকি অর্থ সংগ্রহ করা হয় ‘বিডার্স ফাইন্যান্সিং’ এবং সরকারের ঋণচুক্তির মাধ্যমে। ২০১৬ সালে হংক সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) সঙ্গে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি হয়।
২০১৮ সালের ১১ মে বাংলাদেশ-১ স্যাটেলাইট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি ছিল স্পেস এক্সের ফ্যালকন ৯ ব্লক ৫ রকেটের প্রথম উৎক্ষেপণ। উৎক্ষেপণের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। স্যাটেলাইটটির মূল লক্ষ্য ছিল দেশের টেলিযোগাযোগ, সম্প্রচার এবং ইন্টারনেট পরিষেবা সম্প্রসারণ।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১ এ মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি কে-ইউ ব্যান্ড এবং ১৪টি সি ব্যান্ড রয়েছে। এই স্যাটেলাইটের আওতায় রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়া অঞ্চলের অধিকাংশ অংশ।
১. টেলিভিশন সম্প্রচার: বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার সুবিধা পেতে পারে এবং বিদেশী টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও এ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করতে পারে। ২. ইন্টারনেট পরিষেবা: পার্বত্য ও হাওড় অঞ্চলসহ বাংলাদেশের নানা দুর্গম এলাকায় উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা সম্ভব। ৩. মোবাইল নেটওয়ার্কের সহায়তা: বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়লে, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দুর্গত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১ ১১৯.১° পূর্ব দ্রাঘিমাংশের ভূস্থির কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছে, যা সারা দক্ষিণ এশিয়া এবং বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে সেবা প্রদান করে।
এ স্যাটেলাইটের কার্যক্রমের মেয়াদকাল ১৫ বছর হলেও এটি ১৮ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। স্যাটেলাইটের ভূ-কেন্দ্র গাজীপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় স্থাপন করা হয়েছে, যা থেকে স্যাটেলাইটটি নিয়ন্ত্রিত হয়।
নতুন নামকরণ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর জাতীয় চেতনা ও ঐতিহ্যকে আরও মজবুত করবে। সরকার আশা করছে, এটি বাংলাদেশের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন এক যুগের সূচনা করবে এবং দেশের উন্নয়নে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১-এর নাম পরিবর্তন দেশের মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি গর্বের বিষয়। এর মাধ্যমে দেশের টেলিযোগাযোগ, সম্প্রচার, ইন্টারনেট এবং জাতীয় নিরাপত্তা খাতের উন্নতি সাধিত হবে।