ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান ও সমাজের মধ্যে যোগাযোগের একটি প্রধান মাধ্যমে পরিণত হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। ফেসবুক, ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামের মতো প্লাটফর্মগুলো দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া মেটা মালিকানাধীন ফেসবুক। বর্তমানে ৩০৭ কোটির বেশি ব্যবহারকারী নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ সামাজিক নেটওয়ার্ক এটি। ডাটা বিশ্লেষণ প্লাটফর্ম ডিমান্ডসেইজের গত বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গবেষণা অনুযায়ী, বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৬৪ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন প্লাটফর্মে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছে। ব্যবহারকারীরা দিনে গড়ে ২ ঘণ্টা ২১ মিনিট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যয় করে। তাদের মধ্যে অর্ধেকই মূলত বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার জন্য এসব প্লাটফর্ম ব্যবহার করে।
ডিজিটাল মার্কেটিং ও ডাটা অ্যানালিটিকস প্রতিষ্ঠান কেপিওসের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বব্যাপী সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫২২ কোটি, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬৩ দশমিক ৮ শতাংশের সমান। অর্থাৎ পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ব্যবহার করে। গত বছর অক্টোবর পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে অক্টোবরের পর থেকে ২৫ কোটি ৬০ লাখ নতুন ব্যবহারকারী এটি ব্যবহার করতে শুরু করেছে।
প্রযুক্তি জগতে সময়ের সঙ্গে নতুন নতুন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মের আবির্ভাব হচ্ছে। এ তালিকায় সর্বশেষ যোগ দিয়েছে মেটার আরেক প্লাটফর্ম থ্রেডস ও ব্লুস্কাই। এতসব সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যেও ফেসবুক নিজের অবস্থান ও জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। প্রযুক্তিবিদদের মতে, বিশ্বব্যাপী মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে কাজ করে ফেসবুক। এটি বন্ধু, পরিবার ও সহকর্মীদের মধ্যে যোগাযোগকে সহজ করে তুলেছে। ফেসবুক শুধু ব্যক্তিগত যোগাযোগের জন্যই নয়, ব্যবসা, বিপণন ও তথ্য আদান-প্রদানসহ ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের একটি বড় ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া প্লাটফর্মটি নিয়মিত নতুন ফিচার ও আপডেট যোগ করে ব্যবহারকারীদের আকর্ষণ ধরে রাখে।
ফেসবুকের ইতিহাস শুরু হয় ২০০৪ সালে। মার্ক জাকারবার্গ ও তার তিন সহপাঠী হারর্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ফেসম্যাশ’ নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেন। এটি ছাত্রদের ছবি দেখানোর একটি প্লাটফর্ম ছিল, যেখানে ব্যবহারকারীরা তাদের সঙ্গীদের ছবির ওপর রেটিং দিতে পারতেন। তবে এটি কিছু দিন পর বন্ধ হয়ে যায়। এর পর ওই বছরই জাকারবার্গ ও তার দল ‘দ্য ফেসবুক ডটকম’ নামক একটি নতুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তৈরি করেন। এভাবে ফেসম্যাশ হয়ে যায় ফেসবুক। চালু হওয়ার এক বছর পরই দ্য ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ লাখ। এটি প্রথমে হারর্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল। তবে পরের বছর প্লাটফর্মটির নাম পরিবর্তন করে শুধু ‘ফেসবুক’ রাখা হয় এবং ব্যবহারকারীদের জন্য অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দেয়া হয়। তখন থেকেই বিশ্বব্যাপী এর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়।
এর পর এটি বিভিন্ন নতুন ফিচার যোগ করে, যেমন ফটো শেয়ারিং, ভিডিও কলিং, স্টোরি ফিচার ও লাইভ স্ট্রিমিং। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানিটি ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও অকুলাসের মতো প্লাটফর্মকে নিজেদের অধীনে নিয়ে আসে। এরপর ২০ বছর পেরিয়ে সে সময়ের দ্য ফেসবুক হয়ে উঠেছে আজকের মেটা। ২০২১ সালে ফেসবুক পরিচালনাকারী কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে ফেসবুক থেকে মেটা করা হয়। এ পরিবর্তনের মূল কারণ ছিল, কোম্পানিটির নতুন লক্ষ্য মেটাভার্স প্রযুক্তির দিকে মনোনিবেশ করা।
অনলাইন রেফারেন্স লাইব্রেরি ডাটাপেট্রলের তথ্যানুযায়ী, ফেসবুক সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন ২৫-৩৪ বছর বয়সীরা, যা ফেসবুকের মোট ব্যবহারকারীর প্রায় ৩০ শতাংশ।