হোন্ডার সঙ্গে জোট বেঁধে ১৯৮৪ সালে ভারতে মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে হিরো। ‘হিরো হোন্ডা’ ব্র্যান্ডে বাজারে আসে নতুন বাইক। জাপানি হোন্ডার যাবতীয় কৌশল রপ্ত করে হিরো। ২০১০ সালে হিরো ও হোন্ডা আলাদা হয়ে যায়। আত্মপ্রকাশ করে হিরো মোটরসাইকেল।
ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশেও সমান জনপ্রিয় হিরো। মূলত সাশ্রয়ী দাম, টেকসই চেসিস এবং কমিউটার ইঞ্জিনের কারণে হিরোর টু হুইলার জনপ্রিয়তা পায়। এরই ধারাবাহিতায় হিরো বাংলাদেশের বাজারে সম্প্রতি থ্রিলার নামে একটি বাইক উন্মুক্ত করেছে। বলা হচ্ছে হিরোর অলরাউন্ডার বাইক এটি।
থ্রিলারকে অলরাউন্ডার বাইক এজন্য বলা হচ্ছে-মডেলটি অত্যাধুনিক সাজে সেজেছে। ১৬০ সিসির শক্তিশালী ইঞ্জিনের বাইকটিতে রয়েছে স্পোর্টি লুক। দেয়া হয়েছে ফুয়েড ইনজেক্টেড সিস্টেম বা এফআই। নিরাপত্তার জন্য রয়েছে অ্যান্টি লক ব্রেকিং সিস্টেম। এসব ফিচারের কারণেই বাইকটি অনন্যতা পেয়েছে।
থিরো থ্রিলারের মিটার কনসোল সম্পূর্ণ ডিজিটাল। মনোক্রোম ডিসপ্লেতে বাইকের প্রায় সব তথ্যই প্রদর্শিত হয়।
বাইকটিতে রয়েছে ২ ভালবের ৪ স্ট্রোক সিঙ্গেল সিলিন্ডার ওএইচসি ইঞ্জিন। এর সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৬৩। এই ইঞ্জিন ১৫ বিএইচপি শক্তি উৎপাদন করতে পারে। টর্ক উৎপাদন করবে ১৪ নিউটন মিটার। যা ১৬০ সিসি বাইকের জন্য যথেষ্ট।
বাইকটিতে চালু করতে সেলফ রয়েছে। দেয়া হয়েছে কিক স্টার্টারও। ফলে ব্যাটারি ডাউন হলো চিন্তা থাকবে না। এখনকার বেশিরভাগ বাইকেই কিক স্টার্টার দেয়া হয় না। এই দিক থেকে এগিয়ে আছে থ্রিলার।
থ্রিলারে রয়েছে অ্যাডভান্সড প্রোগ্রামড ফুয়েল ইনজেশন সিস্টেম। যা একে প্রিমিয়াম সেগমেন্টের তকমা দিয়েছে।
টুবুলার ডায়মন্ড চেসিসের এই বাইকের হুইল ব্যাস কিছুটা কম। তবে কমিউটার হিসেবে ঠিকই আছে। নগরের যানজটে সামলানো সহজ হবে। বাইকটিতে রয়েছে মাল্টি প্লেট ওয়েট ক্ল্যাচ। যা গিয়ার শিফটিংকে সহজ করবে। এয়ার গিয়ার বক্স ৫ স্পিড কনস্ট্যান্ট মেস। অর্থাৎ বাইকটি ৫টি গিয়ার দেয়া হয়েছে।
চালক ও আরোহীকে নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণের নিশ্চয়তা দিতে সামনের চাকায় রয়েছে অ্যান্টি ফ্রিকশন বুশ সম্বলিত টেলিস্কোপিক সাসপেনশন। পেছনে রয়েছে ৭ স্টেপ রাইডার অ্যাডজাস্টেবল মনোশক অ্যাবসর্ভার। মনোশক অ্যাবসর্ভারের কারণে কর্নারিং করতে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস পাওয়া যাবে।
বাইকটির উভয় চাকায় ডিস্ক ব্রেক দেয়া হয়েছে। সামনের চাকায় রয়েছে সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস সম্বলিত ২৭৬ মিলিমিটারের পেটাল ডিস্ক।
বাইকটি ডাবল ডিস্ক ও সিঙ্গেল ডিস্ক ভার্সনে পাওয়া যাচ্ছে। ডাবল ডিস্ক ভার্সনের পেছনের চাকায় রয়েছে ২২০ মিলিমিটারের পেটাল ডিস্ক। ড্রাম ব্রেক ভার্সনের পেছনের চাকায় ১৩০ মিলিমিটারের ড্রাম দেয়া হয়েছে। হিরো চাইলে বাইকটিতে ডাবল চ্যানেল এবিএস দিতে পারতো। খরচ কমানোর জন্যই সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস দিয়েছে বলাই যায়। তারপরও বলতে হয় যারা ডাবল চ্যানেল এবিএস চান তাদের কথা চিন্তা করে কিছুটা দাম বাড়িয়ে ডাবল চ্যানেল এবিএস ভার্সনও বাজারে ছাড়া যেতো।
সামনের চাকার আয়তন ১০০/৮০-১৭ । পেছনের চাকা ১৩০/৭০-১৭। উভয় চাকাই টিউবলেস রেডিয়াল। বাইকটির চেসিস ডিজাইন, ওজন ও লুক চিন্তা করলে চাকার সাইজ ঠিকই আছে।
এর হেডল্যাম্প ফুল এলইডি। সঙ্গে আছে এক এক জোড়া এলইডি ডিআরএল। এই দিক দিয়ে কমতি রাখেনি হিরো।
১৬৫ মিলিমিটার গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সের এই বাইকের ওজন ১৩৯.৫ কিলোগ্রাম। বলা যায় যথেষ্ট কম ওজন। অন্যদিকে এর সিটের উচ্চতা ৭৯৫ মিলিমিটার। ফলে অপেক্ষাকৃত কম উচ্চতার মানুষও এটি চালাতে পারবে। এর জ্বালানির ধারণ ক্ষমতা ১২ লিটার।
‘এক্স সেন্স’ প্রযুক্তির এই বাইকে ১০ টি সেন্সর রয়েছে। ০ থেকে ৬০ কিলোমিটার গতি তুলতে থ্রিলারের সময় লাগবে মাত্র ৪.৭ সেকেন্ড।
তিনটি আলাদা রঙে বাংলাদেশের বাজারে হিরো থ্রিলার পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশে সিঙ্গেল ডিস্ক ভার্সনের থ্রিলার পাওয়া যাচ্ছে এক লাখ ৮৯ হাজার ৯৯০ টাকায়।