সময় বাঁচাতে এবং শখ পূরণের জন্য বেশিরভাগ মানুষ গাড়ি ক্রয়ের পরিকল্পনা করেন। কারণ গাড়ি কেনা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ। শুরুতেই ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি কিনতে না পারলে একটি সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনে ফেলতে পারেন। পুরনো গাড়ি কেনা বরং অনেক বেশি জটিল প্রক্রিয়া কারন আপনাকে অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা করতে হবে যদি আপনি বড় কোন লোকসানের মুখোমুখি না হতে চান।
ব্যবহৃত গাড়ি ক্রয় করার আগে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কেনার আগে গাড়ির সম্পূর্ণ ডেটা সঠিকভাবে পরীক্ষা করা খুবই জরুরি। ব্যবহৃত গাড়ি গাড়ির প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে বেশিরভাগ অটোমোবাইল কোম্পানি ব্যবহৃত গাড়ির শোরুমও খুলেছে। ব্যবহৃত গাড়ি গাড়ি কেনার আগে শুধু টেস্ট ড্রাইভই যথেষ্ট নয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক ব্যবহৃত গাড়ি কেনার সময় কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত
লম্বা টেস্ট ড্রাইভ
ব্যবহৃত গাড়ি গাড়ি কেনার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, আপনি যখন টেস্ট ড্রাইভ নিচ্ছেন তখন সেটা যেন কম দূরত্বের না হয়। টেস্ট ড্রাইভ কমপক্ষে ৩০ কিমি হতে হবে। গাড়ির সঠিক অবস্থা জানতে এতটা দূরত্বের একটি টেস্ট ড্রাইভ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গাড়ির তাপমাত্রা পরীক্ষা করুন
টেস্ট ড্রাইভ নেওয়ার আগে গাড়ির তাপমাত্রা পরীক্ষা করা খুবই জরুরি। টেম্পারেচার চেক করতে গাড়ির বনেটে হাত রাখুন, জানা যাবে আপনার আগে কেউ গাড়ি চালিয়েছে কি না। গাড়ির তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলেই টেস্ট ড্রাইভ নিন। এটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কেউ যদি আপনার আগে গাড়িটির টেস্ট ড্রাইভ করে থাকে তবে আপনি তার তাপমাত্রা সম্পর্কে জানতে পারবেন না। অর্থাৎ গাড়ি কতক্ষণে গরম হচ্ছে সেটা জানতে সমস্যা হবে।
গাড়ি থেকে আসা সব শব্দ মনোযোগ দিয়ে শুনুন
গাড়ি থেকে আসা শব্দ পরীক্ষা করে আপনি সহজেই গাড়ির অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন। সেই জন্য গাড়ি স্টার্ট করে কিছুক্ষণ নিউট্রালে রাখুন। এর পর গাড়ির ভিতরে বসে শব্দ এবং কম্পনের দিকে মনোযোগ দিন। এক্সিলারেটরে চাপ দেওয়ার সময়, জানালা খোলা এবং বন্ধ করার সময় যে কোনও শব্দ শুনুন। আপনি যদি কোনও ধরণের অতিরিক্ত শব্দ বা কম্পন অনুভব করেন, তা হলে গাড়ির ডিলারকে জানান।
ইমার্জেন্সি ব্রেক পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ
গাড়ির ইমার্জেন্সি ব্রেক টেস্টিং নিরাপত্তার দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই জন্য টেস্ট ড্রাইভ করার সময় খালি মাঠে যেতে হবে। আপনি গাড়িতে কিছুটা গতি তুলে ইমার্জেন্সি ব্রেক চেপে পরীক্ষা করতে পারেন। অবশ্যই হ্যান্ড ব্রেক পরীক্ষা করুন। হ্যান্ডব্রেক ঢাল বা চড়াই রাস্তায় ভালভাবে পরীক্ষা করা যেতে পারে।
ভালো এবং খারাপ রাস্তায় টেস্ট ড্রাইভ
খারাপ এবং ভালো, দুই ধরনের রাস্তায় টেস্ট ড্রাইভ করা উচিত। এতে আপনি গাড়ির বিভিন্ন শব্দের পাশাপাশি বডির অবস্থাও জানতে পারবেন। গাড়ির সাসপেনশন, টর্ক, পাওয়ার এবং পিকআপের মতো জিনিসগুলি পরীক্ষা করতে পারবেন। ইঞ্জিন থেকে আসা শব্দ, হিটিং, গিয়ার বক্স এবং গিয়ার রেসপন্সের সঠিক অবস্থা জানতে পারা যাবে।
গাড়ির ধোঁয়া পরীক্ষা করতে ভুলবেন না
গাড়ির সাইলেন্সার থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখুন। সাইলেন্সার থেকে কালো বা নীল ধোঁয়া বেরোলে ইঞ্জিনে সমস্যা হতে পারে। ইঞ্জিনে অয়েল লিক হওয়ার সমস্যার কারণেও ধোঁয়া কালো বা নীল হয়ে যেতে পারে। টেস্ট ড্রাইভের সময় অভিজ্ঞ মেকানিক সঙ্গে রাখা ভাল।
কীভাবে স্টিয়ারিং চেক করবেন
টেস্ট ড্রাইভের সময় স্টিয়ারিং চেক করা আবশ্যক। যদি স্টিয়ারিংয়ে ভাইব্রেশন থাকে গাড়িতে সমস্যা থাকতে পারে। স্টিয়ারিংয়ে সমস্যা থাকলে গাড়ি ডান বা বাঁ দিকে টানবে।
বৈদ্যুতিক অংশগুলো পরীক্ষা করতে ভুলবেন না
উইন্ডো আপ-ডাউন সুইচ, মিউজিক সিস্টেম, মিরর ফোল্ডিং সুইচ, ওয়াইপার, হর্ন কয়েকবার চেক করুন। এছাড়াও টেস্ট ড্রাইভিং করার সময় সুইচ, বোতাম, ব্রেক, ক্লাচ, গিয়ার, এক্সিলারেটর কয়েকবার চেক করে নেওয়া ভাল।
ঋণ নেওয়া
পুরনো গাড়ি কেনার ক্ষেত্রেও ঋণ মিলবে তবে সেক্ষেত্রে সাধারণত বেশি সুদ দিতে হয়৷ এজন্য ঋণ পরিশোধের মেয়াদকাল কম রাখার কথা ভাবা উচিত৷ তাছাড়া দেখে নেবেন ওই গাড়ির জন্য আগের মালিক যে ঋণ নিয়েছিল তা পুরোপুরি শোধ করে দিয়েছে কি না৷
গাড়ি সংক্রান্ত কাগজপত্র৷ ঠিকমতো মালিকানা পেতে কেনার সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ির নথিপত্র নিজের নামে করুন। যাবতীয় আইনি প্রক্রিয়াও একবারে সারুন।তবে তার আগে দেখে নিন গাড়ির নামে পূর্বোক্ত কোনও অভিযোগ আছে কিনা।। কতবার ফাইন দিতে হয়েছে, কোনও ফাইন বা ট্যাক্স বাকি আছে কিনা সেটাও জেনে নিন। গাড়ি কেনার পর নিজের নামে ইনসিওরেন্সের কাগজ বদলে নিন। কোথাকার গাড়ি, কোন শো রুম থেকে নেওয়া এই সব অরিজিনাল কাগজ দেখে তবেই কিনবেন।