হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ থেকে এম বি বি এস শেষ করেছেন। প্রায় ৫ বছর ধরে অনলাইন ব্যবসার সাথে যুক্ত। বর্তমানে খুব ছোট পরিসরে এক্সক্লুসিভ ডিজাইনের হ্যান্ডমেড জুয়েলারির ব্যবসা তার । ‘কন্ঠীর বাক্স’ নামে প্রায় ২ বছর ধরে সুনামের সাথে পরিচালনা করছেন ।
যাহোক আমার এফ কমার্স ব্যবসাজীবন অনেক ঘটনাবহুল আর সম্পুর্ন আলাদা দুটা ভাগে বিভক্ত তাই আলাদা আলাদা করেই অল্প করে লিখি।
১ম ভাগঃ
আমার প্রথম ব্যবসার শুরু ২০১৫ সালে। যখন ই কমার্স পরিচিত হচ্ছে মাত্র। এবং আমার ব্যবসার প্রডাক্ট ও ছিলো একদমই আলাদা। সেটা হলো হ্যান্ডমেড প্রডাক্ট এর কাচামাল।(কাঠ,কাগজ,পুতি,চেইন ইত্যাদি ।যা তখনের সময় ২/১ জন ছাড়া কেউ ভাবতেও পারেনি যে বিক্রি করা সম্ভব হতে পারে। তাও অনলাইন আবার এর ক্রেতাও পাওয়া যাবে। কে কিনবে? কেনো কিনব! কি করবে কিনে?
এর উপর আমি ছিলাম প্রাইভেট মেডিকেল স্টুডেন্ট। পড়ালেখার প্রচন্ড চাপ ছিলো সাথে অবস্থাসর্ম্পন্ন পরিবারের সন্তান। তো টাকা ইনকামের পথ খোজার কি দরকার।
কিন্তু ব্যবসার পোকা মাথায় নড়াচড়া করার কারনে শুরু করলাম অনেক সাহস করে। পুজি ছিলো ১৪০০০ টাকা। আমি ছাড়া তখন মাত্র আর ২-৩ জন মেয়ে এসব জিনিস এর ব্যবসা করত অনলাইনে। আমরা যখন এই জিনিস বিক্রি শুরু করি সে সব পাইকারী মার্কেট এ কোনো মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরাও যেতনা। উচ্চ ও উচ্চমধ্যবিত্ত দুরের ব্যাপার। কোনো ক্যাশ অন ডেলিভারি কোম্পানি খুব একটা ছিলোনা। প্রডাক্ট সোর্স ভালো ছিলোনা। ক্রেতা পাওয়া কষ্ট ছিলো। ক্ষতি করার চেস্টা করত অনেকে। সিন্ডিকেট বানাতো। অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে আমরা টিকিয়ে রেখেছিলাম ব্যবসা। পাইকারী দোকানদারদের বুঝিয়েছি নতুন জিনিস আনানোর। সিন্ডিকেট ভাংগার চেস্টা করেছি। ১৪০০০ টাকার পুজি থেকে ১ বছরে মাসিক দেড় লাখ টাকা বিক্রিতে দাঁড়ায়।
আস্তে আস্তে অন্যান্যরাও এই ব্যবসাতে আসা শুরু করে। যারা অল্পশিক্ষিত বা ঘরের বাইরে কাজ করার সুয়োগ নেই। তারা আজ ক্রাফট ম্যাটেরিয়াল ব্যবসা সহজে করতে পারছেন ঘরে বসে, ঢাকার বাইরে থেকে। এমনকি পাইকারী মার্কেট নিজেরাই অনলাইন এ বিক্রি করছে দোকান থেকে সরাসরি কুরিয়ারের মাধ্যমে।
আজ ক্রাফট ম্যাটেরিয়ালস নিয়ে কোটি টাকার অনলাইন মার্কেট তৈরি হয়েছে। প্রচুর সেলার, পেজ গ্রুপ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভাবতে ভালোই লাগে শুরুতে আমরা মাত্র কয় একজন উদ্যোগ নেয়াতে একটা নতুন ব্যবসা হয়েছে।
এরপর ২০১৭ এর শেষের দিকে আমি নতুন ব্যবসা শুরু করি এটা বাদ দিয়ে পরালেখা ও ক্যারিয়ারের চাপে।
২য় ভাগ
প্রথমেই বলে দেই আমি বড় ব্যবসায়ী না এত বছরেও প্রফেশন হিসেবে ব্যবসাকে নেয়া আমার পরিবার থেকে এখনো কঠোরভাবে নিষেধ। কিন্তু আমি অনলাইন ব্যবসা বুঝি এজন্য কিছু সাধারন কথা শেয়ার করছি।
**কিছু কমন প্রশ্ন থাকে অনলাইন এ যারা নতুন বিক্রি করতে চান, ব্যবসা করতে চান। সবার উপরে থাকে এই প্রশ্ন..
“আমি অনলাইন পেজ খুলে ব্যবসা করতে চাই। কিন্তু অনলাইন এ কি বেচা যায়?
-কি বেচা যায় মানে? মানুষ আস্ত গরু থেকে শুরু করে পাটিসাপ্টা পিঠা পর্যন্ত অনলাইন এ বেচে দিলো। আর আপনি ভাবছেন কি বেচা যায়?
হ্যা চাইলে দুনিয়াতে সবসময়ই সব কিছু বেচা যায়। কিন্তু সেটার পদ্ধতি আছে। প্রথমে ভাবতে হবে, জানতে হবে এরপর শিখতে হবে। এরপর প্রয়োগ করতে হবে, এরপর লেগে থাকতে হবে। আমরা সবাই অল্পতে বড়লোক হতে চাই। এজন্য আমাদের দেশে এত অপরাধ ও অনৈতিকতা ।
আচ্ছা যাক আগের কথাই ফিরে যাই আমি কি বিক্রি করব ! -প্রথমে আপনি দেখুন আপনি কি বুঝেন বা বুঝতে পারবেন। আর সেটা কালেক্ট করতে পারবেন। আর একজন কি বেচে বড়লোক হচ্ছে দেখে লাভ নাই। যেমন আমি মেকাপ বুঝিনা আমাকে বুঝালেও বুঝিনা। তাই এ সেক্টরে ব্যবসার ইচ্ছা আমার নাই। আমি জানি লাভ নেই। কারন যে জিনিস আমি বুঝিনা অন্যকে কিভাবে বুঝাবো বিক্রির জন্য। এখন এক ধরেন এখন আপনি যে জিনিস বুঝেন (খুব আনকমন সেটা) যেমন শুকনো গোবর। হ্যা আমি সিরিয়াসলিই শুকনো গোবর এর কথায় বলছি । ঢাকাতে কিন্তু আসলেও শুকনো গোবর অনলাইনে বিক্রি হয়, হোম ডেলিভারিও হয়। এখন অনেকগুলো প্রশ্ন আপনার মাথায় জলদি আসবে । কারা কেনে? কিভাবে তাদের খুজে পাবো? কি কি করলে কাস্টমার প্রডাক্টে আগ্রহ দেখবে? আর কি কি লাগবে? কেনো তারা অনলাইনে কিনবে?লাভ কেমন?
উত্তর – শখের ছাদে বাগান যারা করে, এসব কাস্টমার পাবেন ফেসবুক এ বিভিন্ন গাছপালা রিলেটেড গ্রুপ আছে সেখানে, প্রথমে আপনার প্রডাক্ট এর প্যাকিং, ডেলিভারি সুন্দর করুন। কারন মানুন আর না মানুন অনলাইন ৯০% এ কেনাকাটা আমাদের দেশের উচ্চ ও উচ্চ মধ্যবিত্তরাই করে। এবং প্রডাক্ট এর বাহ্যিক সৌন্দর্য, এবং কতটা ঝামেলাবিহীন ভাবে তারা প্রডাক্ট হাতে পাচ্ছে সেটা তাদের কাছে প্রথম চাওয়া। কোয়ালিটি এরপরে ।
শুকনো গোবরের সাথে আপনি বিভিন্ন সার,বিজ, ছোট কাচি,ছেনি, গ্লাভস,পাইপ ইত্যাদি যা যা বাগান করতে লাগে সব রাখতে পারেন। বেশিরভাগ বাগান একটু মধ্যবয়সী মেয়েরাই করেন। এসব জিনিস টানাটানি, নার্সারিতে ঘুরাঘুরি তাদের পক্ষে সম্ভব হয়না। বাসায় বসে সহজ ভাবে ভালো প্রডাক্ট পেলে তারা কিনবেই টাকা বেশি লাগলেও। লাভ নির্ভর করবে আপনি কতটা সহজে দিতে পারছেন, বুদ্ধি খাটাতে পারছেন। চাহিদা তো আছেই আরো বানাতে পারছেন কতটা…ফিল্ডে কম্পিটিশন কম তাই প্রফিট করা ইজি ।
***এখন আমি আপনাকে শুকনো গোবর বেচতেই বলছিনা। আমি একটা উদাহরন দিলাম। শুধু বুদ্ধিটা কোথায় কাজে লাগাতে হবে বুঝেনা । কোনো কিছুর মার্কেট বানানো অসম্ভব কিছু না।
-আমি হাই এন্ড (মানে খুব এক্সপেন্সিভ) কোয়ালিটির ডিজাইনার হ্যান্ডমেড জুয়েলারি তৈরি করি। আর ক্লোজড গ্রুপে সেল করি ফিক্সড কাস্টমারদের মধ্যেই। যাতে আমার ডিজাইন চুরি কম হয়।
লেখক : তানজিলা অমি
ওমেন অ্যান্ড ই কমার্স ফোরাম