অনলাইন শপ এবং মার্কেটপ্লেস দুটি যে আলাদা সত্তা তা প্রমান করতে ব্যর্থ আমাদের দেশের ইকমার্স ইন্ডাস্ট্রি । যে কোন অনলাইন শপ যে একটি দোকান এর অননলাই ভার্সন আর মার্কেটপ্লেস হচ্ছে একেক্টি যমুনা ফিউচার পার্ক বা বসুন্ধরা সিটি তা বোঝানো এত কঠিন হলো কেন?
এর উত্তর ও অনেক সহজ = বাস্তব জিবনে যার ২০ হাজার টাকা পুজি সেও দোকান দিতে পারে ( সিংগাড়ার দোকান)। তবে কোটি শয়েক টাকা না থাকলে মার্কেটপ্লেস দেবার সাহসস পায়না ফিজিক্যাল জিবনে। এখন অনলাইন এ সিংগাড়া বিক্রেতা এসেই সিংগাড়া এর দোকান দিয়েই নাম দিচ্ছে লার্জেস্ট মার্কেটপ্লেস ( কি বিবেচনায় জানিনা)।
একটি মার্কেটপ্লেস সফল করতে যে অনলাইন এও ওই পরিমান টাকা দরকার তা বোঝান দুস্কর।
যে মার্কেটপ্লেস আর অনলাইন শপ এর মুল লক্ষ্য কি হওয়া উচিত।
অনলাইন শপঃ যে কোন দোকান বা ব্যবসার অনলাইন ভার্শন হওয়া উচিত অনলাইন শপ যেখানে স্পেসিক প্রোডাক্ট পাওয়া যায়। যেমন জাহিদ মুদি স্টোর এ চাল ডাল তেল পাওয়া যায়। শাকিব মোবাইল স্টোরে মোবাইল বা চার্জার পাওয়া যায়। আবার রাজশাহী ফলের দোকানে ফল পাওয়া যায়।
মানুষ স্পেসিফিক জানবে যে ঐ দোকানে গেলে এই জিনিস পাওয়া যায়। রাকিবের দোকানে গেলে ফ্লেক্সি পাওয়া যায় এটা জানানো হচ্ছে অনলাইন শপের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
অনলাইন শপ কারা করবেঃ স্পেসিফিক ব্রান্ড বা লোকাল বিজনেস বা দোকান বা ঐ ধরনের উদ্যোগ।
অনলাইন শপ কি সেবা দিবেঃ নিদৃষ্ট পন্যের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং তার উত্তোরত্তোর মান উন্নয়ন করাই অনলাইন শপ এর লক্ষ্য হওয়া উচিত। ওই পন্য সংক্রান্ত কোন অফার বা নোটিশ বা তথ্য প্রদান করাও ( নকল করে না) অনলাইন শপের দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।
আমাদের অনলাইনশপ কি করেঃ ঘড়ির সাথে শাড়ি, মিস্টির সাথে বাড়ি, শার্ট এর সাথে লাল শাক, আলুর সাথে স্নো (রুপক অর্থে)। আগডুম ফ্রি তো , ঘোড়া ডুম ও ফ্রি । আর কথায় কথায় ডেলিভারি ফ্রি । ইভ্যালী ফ্রি দিয়েছে তো আমিও ফ্রি দিলাম । দারাজ ৫০% দিলো আমি ৯০% দিলাম । এখন বুঝো আমার ঠেলা । মাঝে যেয়ে কুরিয়ার গুলির কাছে ভাই ১৫ টাকায় ডেলেভারি দিয়ে দেন টাইপ চাওয়া পাওয়া শুরু করে দেয় ।
অনেক কুরিয়ার কোম্পানি অফারের নামে এগুলা আবার ফলাও করে প্রচার ও করে । আস্তে আস্তে অনলাইন শপ যে কেন শপ দিয়েছিল তা ভুলে যাই । আর কুরিয়ার এ পেমেন্ট আনা আর অফার এর শর্ত তৈরিতে ব্যস্ত থাকে । এদিকে অফার দিতে দিতে এক কুরিয়ার চলে যায় তো আরেক কুরিয়ার চলে আসে বাজারে ২০ টাকা ২০ টাকা । যা দিবেন ২০ টাকা স্টাইলে । এখন যাদের ভাল ডেলিভারি সার্ভিস দেবার ইচ্ছা ও মূল্ধন এবং ইকোসিস্টেম ডেভেলপমেন্ট এর মানসিকতাও আছে তারা অপেক্ষা করে ২৫ টাকা ওলা চলে যাক এরপর আমরা খেলব । আস্তে আস্তে টুর্নামেন্টই এখন শেষের পথে ।
শুনতে খারাপ লাগলেও পাঠাও , বিদ্যুৎ , ইকুরিয়ার , পেপারফ্লাই এই কোম্পানি গুলোর কোন কোম্পানিই রেভিনিউ থেকে প্রফিট বের করতে পারছে বলে ইন্ডাস্ট্রি সংশ্লিষ্ট হিসেবে আমার মনে হয় না । এখন এই যে ভাই আফাদের উপর রাগ করেই হোক বা লসের কারনেই হোক কুরিয়ার সেবা বন্ধ হলে আবার একটা ফ্রড ফ্রড খেলা মাঠে চলে আসবে । মার্কেটপ্লেস গুলি নিজেদের ডেলিভারি সিস্টেম কস্ট করে হলেও গোছাবে । আপনাদের কি হবে আল্লাহ মালুম আর সুন্দরবন আর এস এ পরিবহন মালুম ।
মার্কেটপ্লেস
মার্কেটপ্লেসঃ মার্কেটপ্লেস হচ্ছে সব পাওয়া যায় ( স্পেশিফিক হয় মাঝে মাঝে যেমন ইলেক্ট্রনিক্স মার্কেটপ্লেস, কম্পিউটার প্লেস) । মার্কেট প্লেস এর লক্ষ্য হওয়া উচিত লোকজন সমাগম করানো ( ট্রাফিক এর ব্যবস্থা করা) । দোকান বা ব্রান্ড গুলিরই এখানে সমাগম হবে এবং এর মাধ্যমে একটি সুন্দর অনলাইন কেনাকাটার পরিবেশ সৃষ্টী হবে । হাউ কাউ কমলেই মাত্র মার্কেটপ্লেস গুলি কোয়ালিটী এনশিউর করতে পারবে । প্রাইম সার্ভিস দিতে পারবে । আমাদের দেশের উদ্যোক্তারা কোন মতে মার্কেট প্লেসের উইক পয়েন্ট খুজে কেম্নে এই ট্রাফিক ব্যবহার করে নিজে অল্প সময়ে বেশি কামাবো । এর জন্য ডুপ্লিকেট পন্য মার্কেটপ্লেসে বিক্রি করা এবং তার দায় মার্কেটপ্লেস এর ঘাড়ে আশা এখন দৈনন্দিন ব্যাপার । সার্কেল টা এমন কাস্টমার অর্ডার করেছে , সেলার খারাপ দিয়েছে – কাস্টোমার বলে মার্কেটপ্লেস খারাপ – মার্কেটপ্লেস বলে সেলার খারাপ – সেলার বলে কুরিয়ার খারাপ – কুরিয়ার বলে আপনার কাস্টোমার খারাপ । ভাই প্রাই ৪ বছর ধরে এই সার্কেল চোখের সামনে ঘুরছে , এখন তো আমাদের সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সহনশীল ভাবে ইকোসিস্টেম টাকে সাহায্য করা উচিৎ ।
এর জন্য মার্কেটপ্লেস এর উচিত পন্য এর সরবরাহ নিশ্চিত করা। ক্রেতার অভিযোগ কে সবার আগেগে প্রাধান্য দেয়া। বিভিন্ন অফার ইভেন্ট এর আয়োয়োজন করা। পন্য সরবরাহ এর জন্য যথাযথ পন্য সরবরাহ সার্কেল তৈরি করা। গ্রাহকের ফিডব্যাক নেয়া এবং সে অনুযায়ী পন্য সোকেজিং করা।
আমাদের দেশে মার্কেটপ্লেস গুলো কি করছেঃ ট্রাফিক আসছে, জোর করে হলেও আনছে, অফার আর অফার দিচ্ছে , এক কোম্পানি অফার বন্ধ করলে আরেক কোম্পানি দিচ্ছে , মানে বারো মাসে ১৪ পার্বণ টাইপ আর কি , এখন তো আবার খোচা খুচি শুরু হয়েছে কেউ ঝাকা ঝাকি অফার দেই , কেউ কাপা কাপি , কেউ গর্ত পুরন , কেঊ শর্তপুরন , এবাজার ও বাজার সব বাজার অফার দেই । অফার কিভাবে দিচ্ছে এটা বোঝানোর দরকার নাই । মানে আমাদের প্রতি আপনাদের কে বিশ্বস্থ করতে অফার দিচ্ছি এটাও ঠিক ঠাক প্রকাশ করতে পারছেনা । প্রমোশনের জন্য অফার দিলে প্রমোশন তো করিয়ে নিতে হবে । কেউ গুলিস্থান স্টাইলে দিচ্ছে , কেউ জমিদার স্টাইলে দিচ্ছে । কেউ শেখাচ্ছেনা । কোন মার্কেটপ্লেস কে দেখলাম না কয়েকটী ট্যাব নিয়ে এলাকায় এলাকায় কিভাবে কিনতে হবে শেখাচ্ছে । কেন কিনবে এটা বোঝাচ্ছে । ভাই টাকা আপনার যা ইচ্ছা করেন , কিছু টাকা শেখাতে খরচ করেন । শেখানো বাদে কি চলছে না ? চলছে পন্য ও বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এই যে ক্রেতার অভিযোগ ডেলিভারি কোম্পানি বা সেলার এর উপর দিচ্ছে। ইকো সিস্টেম গড়ে তোলার মানসিকতা হচ্ছে না কারো এ থেকে উত্তরন হচ্ছে না ।
লেখক
জুয়েল রানা
ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ গ্রুপ