বৈশ্বিক ই-কমার্স ও ক্লাউড কম্পিউটিং জায়ান্ট অ্যামাজনের জন্য কভিড-১৯ মহামারী আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর সব ধরনের শিল্প খাত আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়লেও অ্যামাজনের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যায় থেকে এ পর্যন্ত অ্যামাজনের বাজার মূলধন বেড়েছে ৯ হাজার কোটি ডলার। এর সুবাদে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেফ বেজোসের সম্পদে যোগ হয়েছে আরো ৫০০ কোটি ডলার। ওয়াল স্ট্রিটের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। খবর রয়টার্স।
কভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি খুলে দেয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আর এমন আশাবাদে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে চাঙ্গা ভাব ফিরতে শুরু করেছে ওয়াল স্ট্রিটে। যদিও এর আগে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ওয়াল স্ট্রিটে বড় ধরনের প্রভাব এবং বেঞ্চমার্কটিতে ১১ বছরের তেজি মার্কেটের পতনের কারণে এসঅ্যান্ডপি৫০০ সূচকে গত ফেব্রুয়ারির পর থেকে ১৩ শতাংশ নিচে নেমে গেছে। নভেল করোনাভাইরাসের ফলে সংক্রমণ ঠেকাতে ঘরবন্দি রয়েছেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। নিত্যপণ্য কেনা থেকে শুরু করে অন্যান্য কেনাকাটায় যারা প্রথাগত মার্কেট এড়িয়ে চলছেন। যার প্রভাব পড়েছে অ্যামাজনের ওপর। প্রতিষ্ঠানটি থেকে কেনাকাটা বৃদ্ধি পাওয়ায় শেয়ারের মূল্য এ সময়ের মধ্যে ৯ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে কেবল গত বুধবারেই বেড়েছে ২ শতাংশ।
ব্রেইন হোয়াইটের বিশ্লেষক মোনেস ক্রিসপি বলেন, এ সংকটের সময় অ্যামাজন প্রমাণ করল, নিত্যপণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিদ্বন্দ্বী এখন পর্যন্ত কেউ হয়ে ওঠেনি। আমরা মনে করি, এ প্লাটফর্মটির গ্রাহক সংখ্যা আগের চেয়ে আরো বেশি বাড়বে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিদ্যমান ক্রেতাদের কেনাকাটা আরো বাড়বে। ফলে কোম্পানির ব্র্যান্ডকে আরো প্রসারিত ও ব্যবসা সম্প্রসারণকে ত্বরান্বিত করবে।
বিশ্বব্যাপী বাজার ও অবকাঠামোগত তথ্য প্রদানকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান রেফিনিটিভ একনের তথ্য অনুযায়ী, ব্রেইন হোয়াইট হলো বাজার বিশ্লেষণকারী ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের একটি, যারা অ্যামাজনের শেয়ার কেনার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকে। ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির এমন ফলাফল বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে এবং অ্যামাজনের এমন মুনাফা প্রতিষ্ঠানটির ওয়েব সার্ভিস ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের ওপরও প্রভাব ফেলবে। তবে বিনিয়োগকারীরা অবশ্যই আসন্ন মাসগুলোতে অ্যামাজন স্বাস্থ্য সংকটটা কীভাবে মোকাবেলা করবে, সেটি দেখার প্রত্যাশা করছে।
কিন্তু সেটি আপাতত পরের বিষয়। এ মুহূর্তে ঘরবন্দি মানুষের হ্যান্ডস্যানিটাইজার, মুদিপণ্য, অফিস চেয়ারসহ অন্যান্য পণ্য সরবরাহ করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে অ্যামাজন। ওয়্যারহাউজে পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যেও সেগুলো ব্যবস্থাপনা করা ও সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখা প্রতিষ্ঠানটির জন্য বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিটিয়া জেমসসহ সমালোচকরা মনে করেন, অ্যামাজন ওয়্যারহাউজের কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারছে না।
এদিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যেও জানুয়ারির শেষের দিক থেকে অ্যামাজনের প্রান্তিক মুনাফা ১০০ কোটি ডলার হয়েছে। তবে রেফিনিটিভ একনের তথ্য অনুযায়ী, অ্যামাজনের প্রতিটি শেয়ারে আয় কমেছে ২০ সেন্ট করে।