কোন উদ্যোগের সফলতার জন্য সততা এবং পরিশ্রমের বিকল্প নেই। থাকতে হবে লেগে থাকার মানসিকতা। অনেক কঠিন সময় আসবে কিন্তু হাল ছাড়া যাবে না, এমনটাই মনে করেন নাটোর জেলার সিংড়া থানার তরুণ উদ্যোক্তা ডা. ফারজানা রহমান দৃষ্টি। বাবা-মাসহ পরিবারের সবারই ইচ্ছা ছিল মেধাবী দৃষ্টি ডাক্তার হোক। মানুষের সেবা করুক। দৃষ্টিরও স্বপ্ন তাই। সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই পড়াশোনায় গভীর মনোযোগ দৃষ্টির। দৃঢ় সংকল্প আর নির্ঘুম রাতের পরিশ্রম বৃথা যায়নি দৃষ্টির।
নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার দমদমা পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন এই মেধাবী উদ্যোক্তা। সিংড়া এলাকা থেকে প্রথম শিক্ষার্থী হিসেবে ফারজানা রহমান দৃষ্টিই ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পান এবং সফলতার সাথে তা সম্পন্ন করেন। মেধাবী দৃষ্টি সফলভাবে এমবিবিএস পাশের পর শুরু করেন স্বপ্ন নির্মাণের কাজ।
বর্তমানে সিংড়ার দীপ মেডিকেল সার্ভিসেস- এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী তিনি। এছাড়া প্রতিষ্ঠিত করেছেন দীপাশা ফাউন্ডেশন নামক সামাজিক সেবা মূলক সংগঠন। ভবিষ্যতে আরও বিভিন্ন রকম সেবা মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
ফারজানা রহমান দৃষ্টি জানান, শুরুতে এটা শুধু ডায়াগনস্টিক সেন্টার ছিল। আমার বাসা চলনবিলের প্রাণ কেন্দ্রে হওয়ায় এখানে তখন চিকিৎসা ব্যবস্থা তত উন্নত ছিল না। আমি এই এলাকায় মহিলাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছি। সমাজে ডাক্তারদের নিয়ে নানা নেতিবাচক ধারনা রয়েছে। সেই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে এটা আমার একটা চ্যালেঞ্জও বটে।
তিনি আরও বলেন, আমি মানুষকে ভালোবেসে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহন করেছিলাম। এই উদ্যোগ নিয়ে অনেকেই অগোচরে হেসেছে, বিদ্রূপ করেছে। অনেকে নেতিবাচক নানা ধরনের কথা বলেছেন। আবার ভালো রেজাল্ট করার পরও কেন বিসিএস দেইনি, এমন অভিযোগও শুনেছি। কিন্তু যতবার কেউ নেগেটিভ কথা বলত আমি সেগুলো দ্বিগুণ উৎসাহে ভুল প্রমানিত করার চেষ্টা করেছি। কেননা আমি জানতাম আমি কি করছি আর কি করতে চাই। আজকে আমি যতটুকু সফল তার কারন, কোন পরিস্থিতিতেই আমি হাল ছাড়িনি। কারো মন্দ কথা কানে তুলিনি। নিজের লক্ষ্য অর্জনে অবিচল থেকেছি সব সময়।
দৃষ্টি তাঁর সফলতার পেছনের কথা বলতে গিয়ে বলেন, আমার এই চ্যালেঞ্জিং কর্মকাণ্ডের পুরাটা সময় ছায়া সঙ্গী হয়ে আমাকে অনুপ্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছেন আমার স্বামী। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। পরিবারের অবদানও অতুলনীয়।
ভবিষ্যতে সমগ্র বাংলাদেশে একটি হসপিটাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন তিনি যাতে প্রত্যন্ত এলাকাতেও সব শ্রেণী পেশার মানুষ ভালো মানের চিকিৎসা সেবা পায়। স্বপ্ন দেখেন স্বাস্থ্য সেবায় স্বনির্ভর বাংলাদেশের।
ভবিষ্যৎ তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে দৃষ্টি বলেন, নিজ উদ্যোগে কোন কিছু করতে হলে সততা আর পরিশ্রম অবশ্যই প্রয়োজন। থাকতে হবে লেগে থাকার মানসিকতা। অনেক কঠিন সময় আসবে কিন্তু হাল ছাড়া যাবে না কখনই।