ফেসবুকের কল্যাণে আমাদের জীবনে যোগাযোগ এখন অনেক সহজ। অনলাইন ব্যবসা এবং আরও অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা আমাদের জীবনে যোগ করেছে ফেসবুক। এখন অনলাইন কেনাকাটার পাশাপাশি ফেসবুকও আমাদের কেনাকাটার অন্যতম অপশন। তবে এতো সহজ সুযোগের অপব্যবহারটাও কিন্তু সহজ। শখের বা পছন্দের জিনিসটি কিনতে গিয়ে ধরা খেয়ে যাবার সম্ভাবনাও অনেক বেশি।
মাঝে মাঝেই ফেসবুকে বেচা কেনা নিয়ে প্রতারণার খবর পাওয়া যায়। তাই ফেসবুকে কেনাকাটার আগে সতর্ক থাকলে এ ধরনের ধোঁকাবাজির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ বা গ্রুপের মাধ্যমে কেনাকাটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে ফেসবুক পেজ খুলে অনলাইনে ব্যবসা করছেন। করোনার কারণে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে অনলাইনে কেনাকাটা। আর সেই সুযোগে এক শ্রেণির প্রতারক মেতেছে অনলাইন শপিংয়ের নামে প্রতারণায়।
ফেসবুকে ঢুকলেই এখন চোখের সামনে আসে নানা রকম বিশেষ মূল্য ছাড়ে বিক্রির বিজ্ঞাপন। এসব অনলাইন শপের বাহারি অফার সহজেই মন কেড়ে নেয় যে কোনো অজ্ঞ ক্রেতার। বাজার থেকে কম মূল্যে ব্র্যান্ড নিউ মোবাইল ফোন বিক্রির প্রলোভনমূলক এসব বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দিচ্ছেন অনেকেই। আর এই লোভনীয় বিজ্ঞাপনের ফাঁদের পড়ে প্রতারণার স্বীকার হচ্ছেন অনেকে। এসব অনলাইন শপ থেকে পণ্য অর্ডার করে কেউ পাচ্ছেন নষ্ট পুরনো মোবাইল, আবার কেউ পাচ্ছেন খালি প্যাকেট।
এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী চ্যালেঞ্জ করা হলে প্রতারক প্রতিষ্ঠানগুলো ইউজারের ফোন নম্বর বা অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিয়ে থাকে। আর প্রতারকরা সাধারণত এসব পেজগুলো চালু করার কিছুদিনের মধ্যেই অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন পরিমাণের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলে।
অনলাইনে কেনাকাটা করতে সাধারণ মানুষকে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে ক্রাফের প্রেসিডেন্ট জেনিফার আলম। তিনি বলেন, করোনার এ সময়ে অনলাইনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা জাতীয় সরঞ্জাম বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতারণা বেশি হচ্ছে। কারণ এসমস্ত ব্যবসায়ীরা কুরিয়ার সার্ভিসের ক্যাশ অন ডেলিভারি করে থাকে। যার ফলে কুরিয়ারে পণ্য গ্রহণের পূর্বে টাকা জমা দিতে হয়। তাই প্যাকেট অর্ডার করা প্রোডাক্ট আছে কিনা দেখার সুযোগ গ্রাহকের নেই।
আবার বর্তমানে যেহেতু সবাই বাজারে যেতে পারছেন না, অনেকেই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনছেন ফেসবুক পেজ থেকে, এডভান্স করেও ডেলিভারি না পাওয়া, নিম্ন মানের পণ্য সরবরাহ, কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার অনুপযোগী প্রডাক্ট ডেলিভারির অভিযোগ উঠছে অহরহ।
অনলাইনে কোনো পণ্য কেনার ক্ষেত্রে প্রথমেই যেটি দরকার তা হচ্ছে সচেতনতা। কারণ আপনার অসতর্কতার ফলে আপনি হতে পারেন আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি নানা ধরনের অনলাইন হ্যারাসমেন্টের মুখোমুখি। অনলাইনে কেনাকাটা করার পূর্বে যে সাবধানতাগুলো মানলে রক্ষা পেতে পারেন ধোঁকাবাজির হাত থেকে।
১. কোনো আকর্ষণীয় অফার বা লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে যাচাই না করে কিনতে যাওয়া ঠিক নয়।
২. প্রথমেই প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা এবং মালিকের নাম-ঠিকানায় অসামঞ্জস্য আছে কি না ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
৩.যে প্রতিষ্ঠান থেকে কেনাকাটা করবেন, কেনাকাটার পূর্বে ট্রেড লাইসেন্স করা আছে কি না এবং থাকলে তার নিবন্ধন নম্বর কত তা জেনে নিতে হবে।
৪. কোনো বিকাশ নম্বরে মূল্য পরিশোধ করতে বললে নম্বরটি একাধিক নম্বর থেকে ফোন করে যাচাই করে নেওয়া ভালো। আর কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পণ্য দিতে বললে নির্দিষ্টভাবে পণ্য সরবরাহ যেন করা হয় এবং কেনার রসিদ দেওয়া হয় তা খেয়াল রাখতে হবে।
৫. যেকোনো পণ্য কেনার ক্ষেত্রে আগে পণ্য সরবরাহ করে এবং তা পাওয়ার পর বিক্রয় প্রতিনিধিকে সরাসরি মূল্য পরিশোধ করা যায় এমন ওয়েবসাইট বা মাধ্যমগুলো নির্ভর করা ভালো।
৬. প্রোডাক্ট হাতে পেয়ে চেক করে দেখতে হবে যে, আপনি যে প্রোডাক্টটি অর্ডার করেছেন সে প্রোডাক্টটির সাথে মিল আছে কিনা।
৭. অনেক পেজই বুস্ট করার মাধ্যমে তাদের পেজ অ্যাংগেজমেন্ট, লাইক এবং প্রোডাক্ট রিচ বাড়িয়ে থাকে। যার কারণে অনেক সময় বোঝা মুশকিল হয়ে যায় এটি আসল পেজ কিনা। সেই ক্ষেত্রে ক্যাশ অন ডেলিভারির করাই ভাল।
৮. বিশ্বস্ত সেলার এবং দীর্ঘদিন ব্যবসা করছেন সুনামের সঙ্গে এমন পেজ বা গ্রুপগুলোর ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি থাকে ক্যাশ অন ডেলিভারিতে প্রোডাক্ট সরবরাহ করার। তাই আর্থিক ক্ষতি এড়াতে এটি লক্ষ্য রাখুন।
ফেসবুক পেজ বা গ্রুপগুলো থেকে কেনাকাটার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে সে বিষয়ে ক্রাফের টেকনিক্যাল ক্রু বিএম ইয়ামিন বলেন, ফেসবুকে এখন অনেক অনেক প্রডাক্ট কেনাবেচার পেজ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য থেকে দামি জিনিসপত্র কেনা এবং ভাড়াও নিয়ে থাকেন। এই কেনাবেচার প্রক্রিয়ার মধ্যে যে সকল বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে সেগুলো হচ্ছে-
১. পেজগুলো সব সময় নতুন করে তৈরি করা হয়।
২. পেজের লাইক কম থাকে ও যে সমস্ত প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় সেগুলা ব্যতীত অন্যান্য পোস্টে কোন লাইক কমেন্ট থাকে না। থাকলেও তা খুবই কম একটি বিজনেস পেজ থেকে।
৩. যেসব পেজের রিভিউ অপশন থাকে না, সেসব পেজ থেকে কখনোই অর্ডার করবেন না।
৪. পেজ বা গ্রুপের পোস্টের নিচের কমেন্টগুলো ভালোভাবে দেখে নেওয়া নিতে হবে।
৫. পেজে প্রোডাক্ট নিয়ে লাইভে না আসলে, ফোন নাম্বার এবং এড্রেস বা সাইট যুক্ত না থাকলে ধরে নিতেই হবে সেটি অনেক ক্ষেত্রেই প্রতারণা করতে পারে।
৬. ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে ফেক সাইট বা ক্লোন সাইট কিনা তা যাচাই করে দেখতে হবে।
৭. স্বাভাবিকের চেয়ে অস্বাভাবিক কম মূল্যে বা অস্বাভাবিক মূল্যছাড়।
উপরোক্ত সমস্যাগুলো যদি কোনো পেজে দেখতে পাওয়া যায় তাহলে সেখানে অর্ডার না করাই ভালো। এছাড়া জরুরি পুলিশ প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে বিনামূল্যে কল করতে পারেন।