করোনা পেন্ডামিক সিচুয়েশন এ ঘরবন্দী অবস্থায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে। বিটিআরসি এর তথ্য অনুসারে মার্চ/২০২০ এ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৩০ লক্ষ। যা ডিসেম্বর/২০২০ এ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ২০ লক্ষ। প্রায় ৯০ লক্ষ ইন্টারনেট ব্যবহারকারির সংখ্যা বেড়েছে এই করোনাকালীন সময়ে। যার মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীর সংখ্যাই বেশি। তবে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিবর্তনও এসেছে বিস্তর। আগে দেখা যেত বেশিরভাগ মানুষই টাইম পাস করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যবহার করত, ফানি ভিডিও দেখে সময় নষ্ট করত। তবে এখন আর মানুষ সময় নষ্ট করে না বরং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজেদের সময়কে কাজে লাগায়। আর ই-কমার্সের পাশাপাশি ই-লার্নিং এর একটি ভাল সম্ভাবনা তৈরি হয়ে গিয়েছে এরই মধ্যে। নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবাই নির্বিশেষে সকলেই ইন্টারনেট ব্যবহার করছে নিজেদের প্রয়োজনে। স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় বাচ্চাদের অনলাইন ক্লাসতো বটেই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে পড়ার এবং শেখার সুযোগকেও হাতছাড়া করছেন না অভিভাবকগণ। এছাড়া উদ্যোক্তা থেকে চাকুরিজীবী সকলেই আছেন এই তালিকায়।
১২ বছরের ছোট্ট মেয়ে শামামাহ্ মেহরুন। পড়াশোনা করছে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে। মা, মনিকা আহমেদ এর ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে ফেসবুক ভিত্তিক ইংরেজি শেখার গ্রুপ “সার্চ ইংলিশ” এ এক্টিভ থেকে নিজের রিডিং,রাইটিং, লিসেনিং এবং স্পিকিং এর দক্ষতা বৃদ্ধি করছে। আর এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছেন শামামাহ্’র মা।
বিপাশা দাস, পেশায় একজন চাকুরিজীবী। যিনি কাজ করছেন একটি হোম ডেকোরেশন ইন্টোরিয়র কোম্পানিতে । পাশাপাশি বিপাশা একজন উদ্যোক্তা। চাকুরিজীবন এবং উদ্যোক্তা জীবন দুইটি সামলিয়েই বিপাশা নিজের টেকনিক্যাল নলেজ বাড়াতে বাড়িতে বসেই সময় দিচ্ছেন ফেসবুক ভিত্তিক ফ্রি ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ (ডিএসবি) তে।
মাহবুবা নূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন সম্মান চতুর্থ বর্ষ, দর্শন বিভাগে। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি একজন হাতে তৈরি গহনার উদ্যোক্তা। দেশীয় পন্য এবং টেকনিক্যাল বিষয়ের প্রতি আগ্রহ থেকে তিনি ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) এবং ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ (ডিএসবি) তে নলেজ শেয়ারিং এর পাশাপাশি নিজেও পড়াশোনা করছেন।
“কায়ান্স রুপবতী” এর স্বত্তাধিকারী মুমতাহিনা রহমান কেয়া, ছোট বাচ্চা, সংসার সামলে বাসায় থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিশ্বমানের আন্তর্জাতিক ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম কোর্সেরা থেকে ৫৩ টি কোর্স সম্পন্ন করে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, নিজের একাডেমিক ফিল্ডের বিষয়সহ, টেকনিক্যাল বিভিন্ন বিষয়ের ওপরে তিনি কোর্স করেছেন। গত জুলাই মাসে আইসিটি বিভাগ,বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এবং উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম উই এর কল্যাণে তিনি এই প্ল্যাটফর্মটিতে ফ্রি কোর্স করার সুযোগ পান।
শামামাহ্ মেহরুন, বিপাশা দাস, মাহবুবা নূ্র, মুমতাহিনা রহমান কেয়া এর মত আরও অনেকেই ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করে ই-লার্নিং এর মাধ্যমে নিজ নিজ ক্ষেত্রে নিজেদেরকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলছেন।
সার্চ ইংলিশ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ই-লার্নিং এ উল্লেখযোগ্য অবদানকারী জনাব রাজিব আহমেদ, যিনি দেশীয় পন্যের প্রচার এবং প্রসারের পাশাপাশি এখনো ই-লার্নিং নিয়ে কাজ করছেন। তিনি আজ থেকে ২ বছর আগেই ই-লার্নিং সম্পর্কে বলেছেন,
“কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রচলিত পাঠ দানের বিকল্প শুধু নয় এক মাত্র উপায় হবে ই-লার্নিং। নানা কারনেই অনেকে লেখা পড়া থেকে ঝড়ে পড়ে এবং তারা আর পড়ার সুযোগ পায় না। ই-লার্নিং তাদের জন্য এক মাত্র মাধ্যম। যেমন অনেক মেয়ে ক্লাস এইট বা নাইনে পড়ার সময় বিয়ে হয়ে যাওয়াতে আর লেখা পড়া হয় না। তাদের আবার স্কুলে নেয়া হয় না কয়েক বছর পরে যেতে চাইলেই। এক্ষেত্রে অনলাইন এডুকেশন এক মাত্র অবলম্বন।”
কিছুদিন আগেও ই-লার্নিং সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, “ই-লার্নিং এর ব্যপারে আমি এত আগ্রহী এর কারন হল আমার গ্রুপে বা আমার প্রফাইলে যারা যুক্ত হন তাদের একটি বড় অংশ লেখাপড়াতে দুর্বল কাঁচা। বিশেষ করে ইংরেজিতে অনেক কাঁচা বলে তাদের জীবন শেষ হয়ে গেছে। সার্চ ইংলিশের মাধ্যমে দেখাতে পেরেছি যে কেউ যদি এক বছর সিরিয়াস ভাবে সময় দেয় তাহলে ইংরেজি হবে তার শক্তি। আর এখন ১০ মিনিট রাইটিং প্র্যাকটিসের মাধ্যমে দেখাতে পারছি বাংলার বেসিক দারুন ভাবে গড়া সম্ভব। ই-লার্নিং এর মাধ্যমে যারা জীবনে ঝরে পরেছে তারা আর কিছু না হোক লেখাপড়াকে শক্তি বানানোর একটি সুযোগ পাচ্ছে তাও বিনা মূল্যে।”
আমরা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছি, বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ই-লার্নিং এর গুরুত্ব কতটা জরুরী। যেকোনো পেশার মানুষ, যেকোন পরিস্থিতিতে, যেকোনো জায়গা থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজদের সময়কে কাজে লাগাতে পারছে ই-লার্নিং এর মাধ্যমে। এতে করে দক্ষ জনগোষ্ঠী ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা নিঃসন্দেহে আমাদের দেশের এবং দেশের জনগণের জন্য সুফল বয়ে আনবে।