একটি মার্কেটিং কোম্পানীতে চাকরির সুবাদে কর্মক্ষেত্র হয় শেরপুর। চার বছর চাকরি করে প্রযুক্তির সম্ভাবনা বুঝতে পেরে ২০১৮ সালে একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করি। পণ্যের সোর্সিং ও উদ্যোগের অন্যান্য কাজ এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ইন্টারনেটের সাহায্যে ই-কমার্স নিয়ে লেখাপড়া করছি। ই-কমার্স সম্পর্কে গুগলে সার্চে বাংলা ভাষার সিংহভাগ কনটেন্ট পেতাম ই-ক্যাব ব্লগের। আর্টিকেল পড়তে পড়তে ই-ক্যাব ব্লগে জয়েন হই। সেখানে উদ্যোক্তাদের পোস্ট কমেন্ট পড়তে পড়তে ই-ক্যাব প্রেসিডেন্ট রাজিব আহমেদ সম্পর্কে জানতে পারি এবং তার পোস্ট গুলো গুরুত্বের সাথে পড়ি।
১৭ ফেব্রুয়ারী অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) প্রতিষ্ঠাতা সভাপাতি রাজিব আহমেদ এর সাথে দেখা হয় এবং তিনি আমার ভবিষৎ পরিকল্পনা জানতে চান। ই-কমার্সে ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে আমার পরিকল্পনা শেয়ার করলে সাময়িক ভাবে আমার ই-কমার্স উদ্যোগ টি বন্ধ করে ই-ক্যাব ব্লগের সব পোস্ট একাধিক বার পড়ার পরামর্শ দেন।
ব্লগের পোস্ট গুলো পড়ে বুঝতে বাকি রইলো না আমার জন্য ই-কমার্স ওয়েবসাইট টি লস প্রজেক্ট। বন্ধ করে দিয়ে রাজিব আহমেদের পরামর্শে ই-কমার্স নিয়ে আরও জানতে ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ গ্রুপে একটিভ হই। কয়েক মাস পর তার কাছে জেলা ওয়েবসাইট ধারণা পাই এবং এর সম্ভাবনা বুঝতে শুরু করি।
ইন্টারনেটে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য এবং সর্বশেষ তথ্যের স্বল্পতা লক্ষ্য করে ই-ক্যাব ও সার্চ ইংলিশ প্রতিষ্ঠাতা রাজিব আহমেদের পরামর্শে ২০১৮ সালে আওয়ার শেরপুর জেলা ওয়েবসাইট চালু করি। আওয়ার শেরপুর জেলা ওয়েবসাইটে শেরপুর জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, পর্যটন, দেশি পণ্য সহ সার্বিক দিক গুলোর তথ্য ভান্ডার করতে কাজ করছি এবং রাজিব আহমেদের পরামর্শে এ আইডিয়া টি সামনে এগিয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছি।
আমি বিশ্বাস করি আওয়ার শেরপুর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে একসময় সব জেলা ও অধিকাংশ উপজেলায় এ (জেলা ওয়েবসাইট) আইডিয়া বাস্তবায়ণ হবে। জেলা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তথ্য সমৃদ্ধ হবে, ই-কমার্স, ই-লার্নিং, ই-ট্যুরিজম, সহ বিভিন্ন সেক্টর সফল হবে। এতে সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় সেবা, উদ্যোক্তা ও সংশিষ্টদের কর্মসংস্থান বাড়বে।
মানুষের কষ্ট লাগবে দারুণ ভাবে সহায়ক হচ্ছে জেলা ওয়েবসাইট। অনেক সময় সাধারণ কিছু তথ্যের জন্য গ্রাম থেকে শহরে আসতে হয়। এতে কর্ম ঘন্টা নষ্ট হয়, অর্থ অপচয় ও ভোগান্তি বাড়ে। তাছাড়াও দেশের অধিকাংশ স্টার্টআপ রাজধানী ও বড় শহর কেন্দ্রিক। যারফলে ছোট শহরে বসবাসকারীরা স্টার্টআপ গুলোর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। এরফলে প্রযুক্তির সাথে তালমিলিয়ে আগানো সম্ভব হয়ে উঠে না তাদের পক্ষে।
আমাদের দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা এমন কি অধিকাংশ গ্রামেও কিছু ইউনিক দেশি পণ্যের উৎপাদন হয়, যা অন্য কোথাও হয় না। আবার প্রচারণা ও ব্যবহার অভাবে অধিকাংশ ঐতিহ্যবাহী পণ্য বিলুপ্তির পথে চলে গেছে। তা পুনরুদ্ধার এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে সর্বত্রে ছড়িয়ে দিতে জেলা ওয়েবসাইট দারুণ ভূমিকা রাখে। যেটি আওয়ার শেরপুর করছে।
আওয়ার শেরপুর জেলা ওয়েবসাইটের রেভিনিও আয় করতে ২০১৯ সালে রাজিব আহমেদ এর পরামর্শে শেরপুর জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য তুলশীমালা চাল বাছাই করি। তার পরামর্শ ও সহযোগীতায় ফেসবুক গ্রুপ উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) তে তুলশীমালা চাল নিয়ে প্রচুর পোস্ট কমেন্ট করার মাধ্যমে পরিচিত করি এবং রেভিউ আয় করতে শুরু করি। রেভিনিউর পাশাপাশি স্টার্টআপের অন্যান্য দিক গুলোও শক্তিশালী করতেছি।
আওয়ার শেরপুরে গত সেপ্টেম্বরে (২০২০) শেরপুরের মন্ডা যুক্ত করেছি। বর্তমানে শেরপুর জেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিদের বন্ধ হয়ে যাওয়া তাঁত পুনরুদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছি। এভাবে ধাপেধাপে শেরপুর জেলার সকল পণ্যের প্রচার ও বিক্রি হবে অনলাইনে। তুলশীমালা চাল ও মন্ডা পৌছে যাচ্ছে গ্রাহকের দোরগোড়া। এতে সরাসরি কৃষক, তাঁতি সহ সংশিষ্ট সকলের আয়ের মাধ্যম উঠছে জেলা ওয়েবসাইট।
বর্তমানে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে জেলা ওয়েবসাটের ই-কমার্স ফিচার টি ব্যবহার করতেছি। ওয়েবসাইটে ই-কমার্স ফিচার যুক্ত করতে কাজ চলছে। জেলা ওয়েবসাইটের কারণে ই-কমার্সে দেশি পণ্যের সোর্সিং সহজ হয়ে উঠছে।
লেখক
মোঃ দেলোয়ার হোসেন
প্রতিষ্ঠাতা, আওয়ার শেরপুর।