দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির নামে এখনো আলাদা কোন ইন্ডাস্ট্রি কাগজে কলমে বা অফিসিয়ালি নেই। তবে এর ভিত তৈরি হয়ে গেছে এবং ধীরে ধীরে না বরং বেশ দ্রুত গতিতেই বড় হচ্ছে। আজ থেকেই এক বছর আগেও এটি অনেকের কাছে অসম্ভব, অবাস্তব কিছু মনে হত। বর্তমানে এর ভিত অনেক শক্ত হয়ে গেছে। আগামি বছর এটি অনেক বড় হবে তা এখন সবাই বুঝতে পারছেন।
আজ থেকে ৬ বছর আগে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে যদি তাকাই তখনো বাংলাদেশে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি খুব ছোট ছিল। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশান অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) তখনো ট্রেড অ্যাসোসিয়েশান হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সনদ বা সরকারি স্বীকৃতি পায় নি। ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে প্রতিটি দিনের কথা মনে আছে আমার আর ই-ক্যাবের ফেইসবুক গ্রুপেও প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ টি পোস্ট এখনো আছে সেই সময়ের।
তার ৫ বছর পর ২০২০ সালের পুরোটা চলে গেল দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির ভিত তৈরিতে। সারা দেশ থেকে হাজার হাজার উদ্যোক্তা উই গ্রুপে যোগ দেন এবং তাদের সেই ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দেশি পণ্যকে অনলাইনে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে মাত্র এক বছরে। আর এর সুফল এখন দেখতে পাচ্ছি আমরা। সরকারি সহযোগিতা বিশেষ করে আইসিটি ডিভিশন থেকে দেশি পণ্যের উদ্যোক্তাদের ট্রেনিং এর জন্য সাপোর্ট অনেক উপকারে এসেছে এটি বলতে কোন দ্বিধা থাকা উচিৎ নয়।
প্রতিদিন দেশি পণ্যের উদ্যোক্তারা কত গুলো অর্ডার প্রসেস করেন তার সঠিক হিসেব নেই তবে পুরো ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির উল্লেখযোগ্য অংশ হয়ে গেছেন এতে সন্দেহ নেই।
আমি নিজে দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রচন্ড আশাবাদী। আমি আশাবাদী কারন দেশি পণ্যের ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের একদম শূন্য থেকে এগিয়ে যাবার অনেক কিছুর সাক্ষী আমি নিজে। ডেলিভারি চার্জ ফ্রি, কাস্টমার মিট আপ, দেশি পণ্যের প্রচার এসব নিয়ে প্রতিদিন কাজ করেছি, বলেছি সবাইকে পোস্ট দিয়ে। আমার এক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারছি যে সামনের দিন গুলোতে দেশি পণ্যের বিক্রি অনেক বাড়বে অনলাইনে।
আশাবাদী হবার একটা বড় কারন হল বাংলা ভাষায় ফেইসবুকে এখন দেশি সব ধরনের পণ্য নিয়ে অনেক কন্টেন্ট আছে। উই গ্রুপেই মনে হয় ২৫ লাখের বেশি পোস্ট আছে। সেই সাথে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পরিধান শৈলি, কাকলিস এটায়ার, কন্যা সুন্দরি, টেস্ট বিডির মত আরো ৫০-৬০ এর মত গ্রুপে এখন প্রতিদিন দেশি পণ্য নিয়ে অনেক পোস্ট, ছবি, ভিডিও সব কিছুই আসছে। একথা নিশ্চিত করেই বলতে পারি বাংলাদেশে এখন অন্তত ফেইসবুকে প্রতিদিন বিদেশি পণ্যের থেকে অনেক বেশি মাত্রায় দেশি পণ্যের কন্টেন্ট তৈরি হচ্ছে।
আর এর কেবল শুরু। এ বছরের মধ্যে হয়তো দেশি পণ্যের এমন ৫০০-১০০০ গ্রুপ তৈরি হয়ে যাবে যেখানে প্রতিদিন শুধু দেশি পণ্য নিয়ে কন্টেন্ট আসবে। তাদের একটা ছোট অংশ ওয়েবসাইট তৈরি করবে এবং ওয়েবসাইটেও এক সময় বিদেশি পণ্যের থেকে দেশি পণ্য বেশি দেখতে পাবো। হয়তো আরেকটা বছর লাগবে।
দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির আকার অনেক বাড়বে তা এখন অনেকেই বুঝতে পারছেন। তবে কিছু দিকে আমাদের এখন থেকেই সিরিয়াস ভাবে নজর দেয়া উচিৎ। স্টার্ট আপদের সাপোর্ট, রিসার্চ, দেশি পণ্যের ই-কমার্স নিয়ে মেলা ও ইভেন্ট, সেমিনার এবং কনফারেন্স এসব দিকে কাজ করা শুরু করা উচিৎ।
আমি মনে করি যে দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি দেশের অর্থনীতির খুব গুরুত্বপূরণ স্থান দখল করে নেবে অনেক দ্রুত। আর কোন দেশি পণ্য হারিয়ে যাবে না বা বিলুপ্ত হবে না প্রচারের আর চাহিদার অভাবে। তাই হতাশ না হয়ে আমাদের এদিকে প্রতিদিন কাজ করতে হবে।
লেখক, রাজিব আহমেদ
প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি ই-ক্যাব।