প্রতিটি উদ্যোগ নতুন কিছু সৃষ্টির উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠে, সৃজনশীলতার একটি রূপ হয়ে ধরা দেয়। গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এখন তেমনই একটি জনপ্রিয় খাত যেটির মাধ্যমে উদ্যোগ নিয়ে ভালো সাড়া পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। আজ আমরা জানবো ২৪বছর বয়সী এক তরুণীর উদ্যোক্তা জীবন নিয়ে। টাঙ্গাইলের মেয়ে সানিয়া আফরিন বর্তমানে রাজধানীর উত্তরায় বসবাসরত। তিনি কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিএসসি করেছেন এবং “নৈপূন্য আইটি” নামে একটি উদ্যোগ পরিচালনা করছেন বিগত দশ মাস ধরে। চলুন জানা যাক তার আইটি সেক্টরে কাজ করার গল্প।
টেকজুমঃ ব্যক্তি এবং উদ্যোক্তা দুই দিক থেকে সানিয়া আফরিন কেমন?
সানিয়া আফরিনঃ ব্যক্তি সানিয়া এবং উদ্যোক্তা সানিয়া এই দুটো জায়গা আসলে দুই রকম।
ব্যক্তি জীবনে আমি অনেকটাই রাগী,কাউকে ছাড় দেওয়ার মন মানসিকতা নেই।কিন্তু উদ্যোক্তা জীবনে আমি সম্পূর্ণ তার উল্টো। মাথা সব সময় ঠান্ডা রেখে কাজ করার চেষ্টা করি।ক্লায়েন্ট দের সাথে সব সময় নিজের দিক থেকে আন্তরিক থাকার চেষ্টা করি।উদ্যেক্তা হওয়ার পর থেকে রাগ একদম নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখি।
টেকজুমঃ আইটি সেক্টর নিয়ে ই কমার্সে কাজ করতে চাইলেন কেন?
সানিয়া আফরিনঃ আসলে আমার ইচ্ছে ছিলো কোনো আইটি কোম্পানিতে চাকরি করবো।কিন্তু ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ(ডিএসবি) এবং উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম(উই), এই দুটি প্ল্যাটফর্মে জয়েন হওয়ার পর আমার সম্পুর্ণ সিদ্ধান্ত বদলে যায়।আমি মূলত ডিএসবি’তে জয়েন হয়েছিলাম নিজেকে ডেভেলপ করার জন্য।
এক পর্যায়ে আমার মনে হলো আমি চাইলে ই-কমার্স ইন্ড্রাস্টি তে ভালো কিছু করতে পারবো আর যেহেতু আইটির প্রতি আমার আগ্রহ বেশি। যদি আমি লেগে থাকি এবং কিছু করতে চাই তবে ই- কমার্স ইন্ড্রাস্টি আমার জন্য একটা বিশাল সুযোগ। একটি বিশাল প্ল্যাটফর্ম যাকে কাজে লাগিয়ে যে কেউ চাইলে ভালো কিছু করতে পারবে।
টেকজুমঃ উদ্যোক্তা সানিয়ার অনুপ্রেরণা কে?
সানিয়া আফরিনঃ আমার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনে প্রথম অনুপ্রেরনা আমাদের শ্রদ্ধেয় মেন্টর এবং ই-ক্যাবের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট রাজিব আহমেদ স্যার এবং ডিএসবি।তার কারন হচ্ছে স্যার এর কাছ থেকে সব সময় যে জিনিসটি বুঝতে পেরেছি মানুষ চাইলে সবই সম্ভব।শুধু সময় দিয়ে লেগে থাকতে হবে।স্যার প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা দিয়ে গিয়েছেন আর সত্যি সেই ফলটি এখন পাচ্ছি।
আমার মতে ডিএসবি একটি জ্ঞানের ভান্ডার।এখানে একটি পোস্ট মানে একটি করে তথ্য।ডিএসবি’তে জয়েন হয়ে আমার জীবনের সব কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে।
টেকজুমঃ যারা আইটি সেক্টরে কাজ করতে চান বা কাজ শুরু করেছেন তাদের উদ্যেশ্য কি বলতে চান?
সানিয়া আফরিনঃ একটি কথাই বলবো আইটি বিষয়ে কাজ করতে চাইলে নিজেকে আগে দক্ষ করে তুলুন ক্লাইন্ট বা কাস্টমার এর চিন্তা না করে।দক্ষ হলে ক্লাইন্ট এর অভাব হবে না।কারণ আইটি বিষয়ক কাজ গুলো কখনো পুরনো হয় না বা হারিয়ে যাবে নাহ। দিন যত যাবে আইটির কাজ গুলো তত বেশি নতুনত্ব নিয়ে আসবে আর সেই সাথে আপনাকেও তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
টেকজুমঃ আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনার, দেশিপণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সফলতায় আপনি কি কোনোভাবে উপকৃত হচ্ছেন, হলে কিভাবে এবং কেন?
সানিয়া আফরিনঃ অবশ্যই,আমার মতে দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সফলতায় শুধু গ্রাফিক্স ডিজাইনারই নয় প্রত্যেকেই কম-বেশি লাভবান হচ্ছেন।আমার কথাই যদি বলি, আমি গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করছি; দেশি পণ্য নিয়ে কাজ করে এরকম উদ্যোক্তার লোগো ডিজাইন, পেজ সেটআপ,পডকাস্ট, কনটেন্ট রাইটিং, ডোমেইন-হোস্টিং, ওয়েবসাইট আমি করে দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি।যারা দেশি পণ্যের উদ্যোক্তা তারা জানতে পারছে কিভাবে আইটির সেবাকে কাজে লাগাতে হবে।দিন যতো যাবে, দেশি পণ্য যতো বেশি এগিয়ে যাবে সেই সাথে এগিয়ে যাবে আইটি বিষয়ক কাজগুলোও। আর এর সুফলগুলো আমরা প্রত্যেকেই পাব।
টেকজুমঃ উদ্যোক্তাদের প্রতি কি বলতে চান?
সানিয়া আফরিনঃ শুধু এতোটুকুই বলবো কেউ যদি কোন কাজ মনেপ্রাণে চেষ্টা করে তবে সে একদিন না একদিন সফল হবেই। কোন কাজেই হতাশ হওয়া যাবে না আর কোন কাজের ফল খুব দ্রুত আশা করলে সেই কাজটা কখনোই ভালো ভাবে সম্পন্ন হয় না।
টেকজুমঃ চমৎকার। শুভকামনা রইলো নৈপুণ্য আইটি’র জন্য এবং ধন্যবাদ আপনাকে।
সানিয়া আফরিনঃ ধন্যবাদ টেকজুমকে।