ঘরে তৈরি জিনিসের প্রতি আমাদের কম বেশি আস্থা এবং আগ্রহ বেশি। বর্তমানে খাবার, পোশাক, গহনা সহ বিভিন্ন জিনিস ঘরে তৈরি হচ্ছে বিক্রির উদ্দেশ্যে এবং দেশিপণ্যের বাজারে সমাদৃত হচ্ছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ক্লিনার, হ্যান্ডওয়াশের মতো পণ্যও ঘরে তৈরি হচ্ছে, বিক্রি হচ্ছে এবং জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে। টেকজুম এমন কিছু পণ্য নিয়ে উদ্যোগ “মীমজ” এর স্বত্ত্বাধীকারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। উদ্যোক্তা নুসরাত জাহান মীম পুরান ঢাকার বাসিন্দা। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজ থেকে। গত ৫মাস ধরে তিনি “MeemZ” নিয়ে কাজ করছেন। আজ আমরা জানবো তার উদ্যোগের গল্প।
টেকজুমঃ মীমজ এর শুরু কিভাবে?
নুসরাত জাহান মীমঃ আসলে আমি কিছু একটা করবো সেটা মাথায় ছিলো,কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করা হয় উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)’তে আসার পর। উইতে সকল নারী উদ্যোক্তাদের দেখেই মূলত আমিও আগ্রহী হয়ে উঠি। এরপরই আমি নিজে নিজেই একটা পেইজ খুলে ফেললাম,এবং তখনই মীমজ এর যাত্রা শুরু।
টেকজুমঃ আপনার পণ্য সম্পর্কে বিশদে বলুন এবং এই ধরনের পণ্য নিয়ে ই কমার্সে কাজ শুরু করলেন কেন?
নুসরাত জাহান মীমঃ আমার পণ্য হচ্ছে হারবাল হেয়ার অয়েল এবং হোমমেইড হ্যান্ড ওয়াশ, ডিশ ওয়াশ,ফ্লোর ক্লিনার এবং গ্লাস ক্লিনার।একবার আমি নিজের জন্যই একটা হেয়ার অয়েল বানালাম, এরপর বান্ধবীরাও চাইলো,তাদেরকেও দিলাম। তারা অনেক প্রশংসা করলো,আমাকে উৎসাহ দিলো এ নিয়ে কাজ করার জন্য।আমিও উৎসাহ পেয়ে পেইজ খুলে এটি নিয়ে কাজ শুরু করলাম,তবে সবার প্রথমে পেইজে ছিলো কিছু দেশি থ্রিপিস। কিন্তু আমি ভাবলাম, যেহেতু দেশি কাপড় সম্পর্কে আমার আরও জানা উচিত, পড়াশোনা করা উচিত, কাস্টমার চাহিদা জানা উচিত,তাই সেটি আপাতত বন্ধ করে রেখে তেলের পর নিয়ে এসেছি আমাদের বানানো হ্যান্ড ওয়াশ,ডিশ ওয়াশ,ফ্লোর ক্লিনার এবং গ্লাস ক্লিনার,যা সম্পূর্ণ দেশি পণ্য।
টেকজুমঃ এই ধরনের পণ্য নিয়ে ই কমার্সে কাজ শুরু করলেন কেন?
নুসরাত জাহান মীমঃ প্রথমত,বর্তমানে ই কমার্সে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আমার ইচ্ছা এই সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা অর্জন করা। আর সেজন্য প্রচুর পড়াশোনাও করা প্রয়োজন।দ্বিতীয়ত, ই কমার্সে কম মূলধনে অনেক কাস্টমার পাওয়া যায়। একসাথে অনেকজনকে নিজের পণ্যের পরিচিতি করানো যায়। আর তাছাড়া আমার এসব প্রোডাক্ট নিয়ে এ দিকে অনেক আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি।
টেকজুমঃ যারা হোমমেইড ক্লিনিং প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চান?
নুসরাত জাহান মীমঃ শুধু হোমমেইড ক্লিনিং প্রোডাক্টই না,আপনি যে পণ্য নিয়েই কাজ করতে চান না কেন,আপনাকে সেই সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখতে হবে। সেগুলো নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। রাজিব স্যারের একটি কথা আমি সবসময়ই মাথায় রাখি, সেটি হলো আপনি যেই কাজ নিয়ে এগিয়ে যেতে চান,সেটা নিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে যদি এক ঘন্টা পড়াশোনা করেন তাহলে আপনি অন্যদের চেয়ে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবেন। আমি সেটাই করার চেষ্টা করছি।
টেকজুমঃ দেশি পন্য হিসেবে আপনার পণ্যের ভবিষ্যৎ কেমন দেখেন?
নুসরাত জাহান মীমঃ বর্তমানে দেশি পণ্যের প্রতি মানুষের প্রচন্ড আগ্রহ এবং আস্থা দুটোই বেড়েছে এবং আরও বাড়ছে। আমার কাস্টমারদের মধ্যে ৯০% ই ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ (ডিএসবি) গ্রুপের কাস্টমার। তারা সবাই অসম্ভব ভালো এবং আমার পণ্যের প্রতি শতভাগ স্যাটিসফাইড। তাই এসব কারণেই আমি আমার পণ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীষণ আশাবাদী ইনশাআল্লাহ।
টেকজুমঃ আপনার অনুপ্রেরণা কে বা কারা?
নুসরাত জাহান মীমঃ আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হচ্ছেন শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যার। তার প্রতিটা পোস্ট আমি পড়ি,কোনটাই মিস দেই না,কারণ তার প্রতিটা কথাই আমার জন্য ভীষণ অনুপ্রেরণাদায়ক। শুধু অনুপ্রেরণাই নয়,তার পোস্ট পড়ে পড়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি,কাজে লাগিয়ে সুফলও পাচ্ছি অনেক। এরপর অনুপ্রেরণা দেয় আমার কাস্টমাররা। তারা আমাকে অনেক বেশি সাপোর্ট এবং অনুপ্রেরণা দেন সবসময় আলহামদুলিল্লাহ। এরপর অনুপ্রেরণা আমার পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের কেউ সাপোর্ট না করলে আমি এখানে আসতেই পারতাম না।
টেকজুমঃ আগামী দিনে পরিকল্পনা কি?
নুসরাত জাহান মীমঃ আমার মতে আমি যেটা নিয়েই কাজ করতে চাই না কেন,সবার আগে আমাকে বেসিক স্কিল অর্জন করা উচিত। না হয় এই প্রতিযোগিতামূলক সময়ে আমার টিকে থাকা দূরুহ হয়ে পড়বে। আর সেজন্যই আমি ডিএসবিতে থেকে পড়ছি,জানছি,লিখছি। আগামী অন্তত এক বছর আমার ডিএসবিতেই নিয়মিত থাকার ইচ্ছা। কারণ শিক্ষাই হচ্ছে আমার উদ্যোগের জন্য সবচেয়ে বড় ইনভেস্টমেন্ট,যে ইনভেস্টমেন্ট এ কোন লস নাই,শুধু লাভ আর লাভ।
টেকজুমঃ চমৎকার। ধন্যবাদ মীম। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো টেকজুমের তরফ থেকে।
নুসরাত জাহান মীমঃ ধন্যবাদ টেকজুমকে।