খাতুনে জান্নাত আশা, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি, টেকজুম টিভি// জামদানী আমাদের ঐতিহ্য সংস্কৃতির অন্যতম ধারক এবং বাহক, একে আদি ঢাকাই মসলিনের উত্তরাধিকারী বলা যায়। মানে হারিয়ে যাওয়া মসলিনের কারিগরদের বংশধরদের হাত ধরেই এর জন্ম হয়েছিল নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে।
তবে এই জামদানী কি শুধু শীতলক্ষ্যা তীরবর্তী নারায়নগঞ্জেই উৎপন্ন হয়! তাই তো আসলে জানি আমরা, তবে এটা জানিনা নারায়নগঞ্জ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে এই ঐতিহ্যবাহী জামদানীর তাঁত! দেশের নানা প্রান্ত থেকে বেকার যুবকরা কাজ শিখতে নারায়ণগঞ্জ যায় এবং দক্ষ হয়ে নিজ এলাকায় এসে অনেকে নিজস্ব তাঁতের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করছে এই শিল্প কে।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগের তিন অঞ্চলে রয়েছে জামদানী তাঁত- ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইলে, শেরপুর জেলার চরশেরপুর ইউনিয়নে এবং জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জে।
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার জামদানী তাঁতঃ
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের বাশঁহাটি বাজার থেকে অর্ধ কি.মি. দূরে বাশঁহাটি গ্রামে ২০০৯ সালে গড়ে উঠেছে নান্দনিক তাঁতশিল্প। উক্ত গ্রামের কামাল, শাহীন ও জুয়েল মিয়া নামে আপন তিন ভাই এই জামদানী তাঁতের শিল্পের যাত্রা শুরু করেন এই এলাকায়।
শুরুর কথাঃ
বাশহাটি গ্রামের তিন ভাই মিলে জামদানী শাড়ি তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বড় ভাই মো. কামাল হোসেন ছিলেন জর্দানপ্রবাসী। অন্য দুই ভাই মো. শাহীন মিয়া এবং মো. জুয়েল মিয়া বছর দশেক আগে কাজের সন্ধানে নারায়ণগঞ্জের রূপসী এলাকায় যান। সেখানে গিয়ে জামদানীর একজন তাঁত মালিকের বাড়িতে মাসিক বেতনে শাড়ি বোনার কাজ নেন। সে সময় তাঁরা ছিলেন শিক্ষানবীস। একসময় শাড়ি বোনার কাজে তাঁরা দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি নিজের বাড়িতে এসে জামদানী বোনার তাঁত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। দুই ভাই চিন্তা করে দেখেন, যে সামান্য পারিশ্রমিক মালিকের অধীন কাজ করে পাচ্ছেন, বাড়িতে গিয়ে নিজেদের জমিতে চাষাবাদ করে ও নিজেরা তাঁত বসিয়ে কাজ করলে আরো বেশি লাভবান হতে পারবেন। তাঁরা তাঁদের জর্দান প্রবাসী বড় ভাইকে বিষয়টি জানান। তিনি তাঁদের পরিকল্পনায় সম্মতি দেন। ২০০৯ সালের প্রথম দিকে পরিকল্পনা মতো তিন ভাই বাড়িতে ফিরে আসেন। সে বছরের ইদের আগে বাড়ির বৈঠক ঘরেই ৪০ হাজার টাকা খরচ করে জামদানি তৈরির দুটি তাঁত স্থাপন করেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে কিনে আনেন জামদানি তৈরির রেশমি এবং সুতা, জরি ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র। একদিন শুরুও করে দেন জামদানি বোনার কাজ। একজন কারিগর ও তাঁর সহকারী মিলে সপ্তাহে তৈরি করতেন তখন একটি জামদানি শাড়ি। বর্তমানে তার ৪জন কারিগর ও ২ জন সহকারী রয়েছে। প্রথমে এর চাহিদা কম থাকলেও এখন দূর-দূরান্ত থেকে অগ্রীম অর্ডার পায় তারা। উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের সৌখিন লোকজন জামদানি শাড়ির নিতে অগ্রীম অর্ডার দিয়ে যাচ্ছেন। ময়মনসিংহ ও ঢাকার বিভিন্ন দোকানপাট থেকেও অর্ডার আসে তাদের কাছে। ধীরে ধীরে ভালো লাভ হয় দেখে আরো কয়েকটি তাঁত স্থাপন করা হয়েছে। এখন তাদের তাঁতে প্রতিদিন জামদানি বোনার কাজ চলছে। একটি ভালো জামদানী শাড়ি বুনতে ৭০০-৮০০ টাকার সুতা লাগে, আর সময় লাগে কমপক্ষে ১৫ দিন। কাস্টমাইজ ডিজাইনেও শাড়ি করে দিতে বলেন অনেক সৌখিন ক্রেতারা। অর্ডার মতো তখন তারা শাড়ি বানিয়ে দেন। সর্বনিম্ন দশ হাজার টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামের শাড়ি তৈরি করা হয় তাদের তাঁতে। ১৫-২০ দিন পর পর সাত-আটটি শাড়ি বিক্রির জন্য ঢাকার ডেমরায় পাইকারি হাটেও যায় তারা।
তবে নান্দাইলের ব্যাংক ও এনজিওদের তাঁতশিল্প সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণাই নেই বলে এ খাতে বড় কোনো আর্থিক সহযোগিতা তারা পাচ্ছেন না বলে জানা যায়। আরও অর্থ সাহায্য পেলে এ এলাকায় তাঁতশিল্পের উন্নয়ন ঘটানো সহজ হতো। তাদের দেখে এলাকার আশপাশের লোকেরাও জামদানি শাড়ি বোনার ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন। সরকারি সহযোগীতা পেলে এবং প্রচার বাড়লে এই শিল্পটি নান্দাইলে আরও বেগমান হবে বলেই মনে হয়। ই-কমার্সের আওতায় এনে তাদের এই শিল্পের প্রচার প্রসার আরও বাড়ানো সম্ভব নির্দ্বিধায় বলা যায়।
শেরপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম যখন জামদানী পল্লীঃ
শেরপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ৯-১০ কিলোমিটার দূরের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের গ্রাম চরশেরপুর ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে জামদানী তৈরীর তাঁতশিল্প। ‘আর যাবো না দুবাই ঢাকা, ঘরে বসেই আনবো টাকা’- এই শ্লোগানে উৎসাহিত হয়ে শেরপুরের প্রত্যন্ত পল্লীর বেকার যুবক-যুবতীরা প্রত্যন্ত এলাকায় গড়ে উঠা জামদানী পল্লীর সুফল দেখায় অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে এ পেশায়। এর মাধ্যমে আশপাশের অনেক বেকার জনগোষ্ঠী গ্রামেই প্রশিক্ষণ নিয়ে জামদানী তৈরির তাঁত গড়ে তুলেছেন। ফলে এখন শেরপুরের চরাঞ্চলের ওই গ্রামটি জেলার মধ্যে জামদানি পল্লী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
শুরুর কথাঃ
উক্ত গ্রামটির যাতায়াত ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষি ফসলের ওপর নির্ভরশীল। অনুন্নত হতদরিদ্র ওই গ্রামেরই ছেলে কামরুল ইসলাম। তিনি জীবিকার তাগিদে প্রথমে ঢাকার নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁও জামদানি পল্লীতে কাজে যোগ দেন। সেখানে প্রথম কিছুদিন কাজ শিখে সেখানেই কারিগর হিসাবে কাজ করেন। এরপর তিনি গ্রামে এসে তার নিজের এলাকার বেকার ও হতদরিদ্র যুবকদের কথা চিন্তা করে ২০০৬ সালে মাত্র ৯ হাজার টাকা পুঁজি ও দুইজন সহযোগী নিয়ে নিজেই একটি তাঁতের মাধ্যমে শুরু করেন জামদানি তৈরি। তার তাঁতঘরের নাম ‘সুমন জামদানি’।
সেই তাঁতঘরের মাধ্যমে গ্রামের অনেক বেকার যুবককে কাজ শিখিয়ে কারিগর হিসেবে তৈরি করেছেন কামরুল। সেই সঙ্গে তার তাঁতের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে, বেড়েছে শ্রমিক সংখ্যা। এই শিল্প লাভজনক হওয়ায় এলাকার আশপাশের লোকজন জামদানি তৈরির তাঁতশিল্প গড়ে তুলছেন। গ্রামের অনেক বেকার যুবক নিজ উদ্যোগেই গ্রামে গড়ে তুলেছে বেশ অনেকগুলো তাঁতশিল্প। তাঁতশিল্পের শ্রমিকরা জানান, তাদের এখন কাজের সন্ধানে শহরে বা ঢাকায় যেতে হয় না। নিজের এলাকাতেই কাজ শিখে প্রতি মাসে ১০-১২ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারছে বেকার যুবকরা।
কারখানার উৎপাদিত শাড়ীর সর্বনিন্ম মূল্য ৪ হাজার টাকা। তবে অর্ডার অনুযায়ী উচ্চ দামের শাড়ীও তৈরি করা হয়। ঘরে বসে থাকা বেকার মহিলারাও জামাদানীর কাজ করে সংসারে এনেছে স্বচ্ছলতা । পুরনো কারখানায় কাজ শিখে আরো অনেকগুলো বাড়ীতে তৈরি হয়েছে নতুন কারখানা । কাজ করছে আরো প্রায় শতাধিক বেকার যুবক যুবতী । গ্রামের মহিলারা জামদানী তাঁতে কাজ করে বেশ আয় করতে পারছে আর তা দিয়ে সংসারও ভাল চলছে, এ নিয়ে তারা বেশ খুশি।
তবে জানা যায়, তারা তাঁতশিল্প গড়ে তুললেও পণ্য বাজারজাতকরণে পড়ছেন সমস্যায়। পুঁজির অভাব এবং গ্রামের ভালো রাস্তা না থাকায় শহর থেকে অনেক মানুষ ওই প্রত্যন্ত পল্লীতে গিয়ে শাড়ী কিনতে এবং অর্ডার দিতে ভোগান্তিতে পড়ে তাই উদ্যোক্তাদের এগুতে হচ্ছে অনেক কষ্ট করে।
তারপরও শেরপুর জেলা শহর ও অন্যান্য এলাকা থেকে খুচরা ও পাইকারি ক্রেতারা এসে জামদানি কাপড়ের অর্ডার দিয়ে শাড়ি তৈরি করে নিচ্ছেন। এছাড়া তাঁতঘরের মালিকরা প্রতি সপ্তাহে শেরপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শাড়ি সরবরাহ করেন। তবে ভালো ও বিশ্বস্ত কোনো বিক্রির স্থান না থাকায় তাদের নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েই টিকে থাকতে হচ্ছে। সরকারি বা কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকও তাদের ব্যাপারে এগিয়ে আসেনি বলে জানান জামদানি পল্লীর মালিকেরা।
শেরপুর বিসিক থেকে সহায়তা পেয়েছে কিছু জামদানি তাঁতশিল্পের মালিক। যদি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগীতা ওই গ্রামের আরও তাঁতশিল্প মালিকদের দেওয়া হয় তাহলে এলাকার অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের পথ যেমন উন্মুক্ত হবে, তেমনি প্রসার ঘটবে জামদানি শিল্পের। এ বিষয় গুলোতে সরকার নজর দিলে আরও ভালো করবে তারা।
আসলে শেরপুরের এই জামদানী পল্লীর কথা জানেই বা কজন! এই এলাকার জামদানী তাঁতের সম্প্রসারনে প্রয়োজন আরও এর প্রচার করা, তবেই উদ্যোক্তারা এই এলাকার তাঁতকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলতে পারবে সম্ভাবনাময় উদ্যোগ এবং ই-কমার্সের, মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পারবে শেরপুরের পল্লীগায়ের জামদানীর আভিজাত্য সারা দেশে এবং বিশ্বে।
জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জের জামদানী তাঁতপল্লীঃ
জামালপুর মূলত হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত, ইসলামপুরের কাঁসাশিল্পের জন্যও এই অঞ্চল বেশ পরিচিত। তবে এই জেলায় যে জামদানী তাঁতপল্লীও গড়ে উঠেছে, এটা নিয়ে তেমন কোনো প্রচার নেই বললেই চলে। তাই খুব কম মানুষই অবগত এই ব্যাপারে।
এই অঞ্চলের পরিশ্রমী সঞ্জু মিয়া ও তাহমিনার সফলতার কারণেই পাল্টে গেছে জামাল্পুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার পাখিমারা গ্রামের নাম। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাখিমারা গ্রাম ‘জামদানি গ্রাম’ বা ‘জামদানি পল্লি’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে পাখিমারার মানুষের অতীত পেশা।
শুরুর কথাঃ
অভাবের তাড়নায় খুব ছোট্টবেলায় মায়ের হাত ধরে গ্রাম ছেড়ে ডেমরায় পাড়ি জমিয়েছিলেন সঞ্জু মিয়া। সেখানে জামদানীর সাহায্যকারী হিসেবে খুব স্বল্প বেতনে কাজ শুরু করেন তিনি, আর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হয়ে উঠেন দক্ষ একজন জামদানী কারিগর। শুরু থেকেই জামদানীর সম্ভাবনা বুঝতে পেরে যান তিনি, তাই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন এই শিল্পকে ঘিরে। আর এই স্বপ্নপূরণের জন্য ঢাকার ডেমরা থেকে চাকরি ছেড়ে ২০০৪ সালে সঞ্জু মিয়া ছুটে আসেন পৈত্রিক নিবাস পাখিমারা গ্রামে। কারিগর, হেলপার, সুতা ও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা প্রতিকূল পরিবেশে মাত্র একটি তাঁত নিয়ে জামদানি তৈরির কাজ শুরু করেন সঞ্জু মিয়া। এরপর দক্ষ জামদানী কারিগর স্ত্রী তাহমিনা বেগমের সহযোগিতায় তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এ দম্পতি তাদের হাত আর পায়ের নিপুণতায় মনের মাধুরী মিশিয়ে নতুনত্বের ছোঁয়ায় নজরকাড়া কারুকার্যে বৈচিত্র্যময় ডিজাইনে বাহারি রঙের জামদানি শাড়ি তৈরি করতে শুরু করেন। মান ভালো থাকায় পাইকারি ও খুচরা উভয় শ্রেণির ক্রেতার নজড় কাড়ে তাতের তৈরি জামদানি শাড়ি। এতে প্রসারিত হয় জামদানি শাড়ির বাণিজ্যিক বাজার। দেশের মানচিত্র পেরিয়ে ভারতসহ বিদেশের বাজারেও কদর বাড়ে সঞ্জু-তাহমিনার জামদানি। দেশ-বিদেশে বেড়ে যায় জামদানির চাহিদা। আর চাহিদার যোগান দিতে গিয়ে ব্যবসার প্রসার ঘটাতে হয় সঞ্জু মিয়াকে।
স্বামী-স্ত্রী মিলে মাত্র একটি তাঁত দিয়ে কাজ শুরু করলেও বর্তমান চিত্র ভিন্ন। সঞ্জু-তাহমিনার জামদানি কারখানায় এখন তাঁতের সংখ্যা ২০টি। বর্তমানে ৫০ জন শ্রমিক তার অধীনে জামদানি তৈরির কাজ করছেন। ৫০ জন শ্রমিককে তিনি প্রতিমাসে বেতন দেন প্রায় তিন লাখ টাকা। প্রতিমাসে কারখানায় তৈরি হয় পর্যাপ্ত জামদানি শাড়ি। প্রতিটি শাড়ির দাম সাত হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। তবে অর্ডার পেলে এর চেয়েও বেশি দামের শাড়ি তৈরি হয় তাদের জামদানি কারখানায়।
পাখিমাড়া গ্রামের মানুষের প্রধান পেশা পূর্বে ছিল দিনমুজুরি আর বাঁশশিল্প, আর সেই গ্রাম এখন তাঁতের খটখট শব্দে মুখর থাকে। কয়েক শতাধিক মানুষ বেকারের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছে সঞ্জু ও তাহমিনার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে এবং প্রতিষ্ঠা করেছে আরও শতাধিক তাঁত। প্রতিটি তাঁতেই তৈরি হচ্ছে উন্নতমানের জামদানি শাড়ি। সবার ব্যবসাও বেশ জমজমাট।
সততা এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নে একাগ্র থাকার কারণে আমি সফল হয়েছেন সঞ্জু মিয়া, তার পরিবারের কষ্ট দূর হয়েছে এবং আরও কয়েক শতাধিক পরিবারের কষ্ট দূর করেছেন এই শিল্পের মাধ্যমে। আর তাই বদলে গিয়েছে এখন পাখিমাড়া গ্রামের চিত্র।
এক সময় পুঁজির জন্য বিভিন্ন ব্যাংক এবং এনজিও’র এর কাছে ধরনা দিতে হত তাদের। কিন্তু এখন বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও ঋণ দেওয়ার জন্য তাদের পেছনে ঘোরে। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান সহ এর আরও প্রচার বাড়ানো গেলে শুধু তাদের না আরও অনেক গ্রামের পরিবারগুলোর জীবনযাত্রার মান পাল্টে যাবে।
জামদানি পল্লি নিয়ে তারা গর্ববোধ করেন। ঐতিহ্যবাহী এ জামদানি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহযোগিতার প্রয়োজন। সরকারি সহযোগিতা পেলে জামদানি শিল্পের প্রসার হবে। আর এর প্রকৃত প্রচার প্রসার সম্ভব বর্তমানে ই-কমার্সের মাধ্যমে একে ছড়িয়ে দিতে পারলে।
বর্তমানে ই-কমার্স সেক্টরে যারা জামদানী নিয়ে কাজ করছেন, তাদের সবাই জামদানী বলতেই নারায়নগঞ্জের জামদানী বোঝেন। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও যে জামদানী শিল্পের প্রসার ঘটছে, এটা কেউ জানেন না বললেই চলে। তবে জামদানীর উপরোক্ত এলাকাগুলোকে ই-কমার্সের মাধ্যমে তুলে আনলে স্থানীয় উদ্যোক্তারা এই অঞ্চলগুলোকে কেন্দ্র করে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবে, জামদানীর জন্য তবে আর সুদূর নারায়নগঞ্জে পাড়ি জমাতে হবে না। আর এখন জামদানীতে আসছে অনেক নতুন নকশা, ডিজাইন আর ফিউশন। অঞ্চলভিত্তিক এই তাঁতগুলোকে কেন্দ্র করে, এসব তাঁতিদের সচেতন করে জামদানীর আরও ফিউশন ক্রিয়েশন করা সহজ হবে বলেই মনে হয়। এভাবেই আমাদের ঐতিহ্যবাহী জামদানী শিল্প দেশ-বিদেশের বাজার আরও বড় পরিসরে দখল করবে তাই প্রত্যাশা করি।