রোনাকালে ঘরবন্দি জীবনে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠা দেশের ই-কমার্স খাত হঠাৎ করেই আস্থার সংকটে পড়েছে। বিশেষ করে খুব অল্প সময়ে পরিচিতি পাওয়া ইভ্যালিসহ বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎসহ গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পর প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করার ঘটনাও ঘটেছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।
দেশের ৬০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরমধ্যে ব্যবসার আড়ালে মানুষের অর্থ আত্মসাৎ, অনুমোদন ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা ও পণ্য না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এমন ৩০টি সন্দেহভাজন প্রতিষ্ঠানকে নজরদারিতে রেখেছে সংস্থাটি।
সোমবার (১১ অক্টোবর) সিআইডির সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ইমাম হোসেন এই তথ্য জানান।
সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা আমরা করেছি। সেখানে ৬০টির মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে আমরা ৩০ বা ৩২টির মতো প্রতিষ্ঠানকে নজরদারিতে রেখেছি। যারা বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মূলত গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতেই এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ইমাম হোসেন বলেন, ‘অনেকে অগ্রিম টাকা দিয়ে পণ্য কিনেছেন। কিন্তু তারা দিনের পর দিন ঘুরেছেন, পণ্য পাননি। এসব মানুষ থানায় গিয়ে মামলা করেছেন। ক্রেতাদের অভিযোগের ভিত্তিতেই এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে।’
এর আগে গত ৩০ জুন ধামাকা শপিং এর ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়। পরবর্তীতে কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়। সেসময় শুধু ধামাকা শপিংই নয়, আলিশা মার্ট, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, আদিয়ান মার্ট, নিডস, কিউকম, দালাল প্লাস, ই-অরেঞ্জ এবং বাজাজ কালেকশনসহ ১১টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব করে বিএফআইইউ।
সম্প্রতি সিআইডি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের হিসাব জব্দ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। বিভিন্ন ই-কমার্স কোম্পানি নিয়ে চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে সিআইডিএ উদ্যোগ নেয়। সিআইডির চিঠির ভিত্তিতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও (বিএফআইইউ) অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব তলব করেছে।
জানা গেছে, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো শুরুতে গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে ‘অস্বাভাবিক’ সব অফার দেয়। পরে দেখা যায় যে, অগ্রিম অর্থ নিলেও প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তারা সময়মতো পণ্য সরবরাহ করছে না। ভোক্তাদের অভিযোগ— পণ্যের টাকা পরিশোধ করা সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ে তারা পণ্য পাচ্ছেন না। অপরদিকে প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য সরবরাহকারী বা মার্চেন্টরা বলছেন, দিনের পর দিন তাদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে না।