বেশি লাভের আশায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্ট থেকে মোটরসাইকেল কিনতে ২২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এখন সর্বস্বান্ত রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা শামীম। পরিচিতজনদের থেকে বন্ড সই দিয়ে ধারে আনা টাকা ফেরত দিতে না পেরে পাওনাদারদের মামলার ভয়ে গত ৯ মাস ধরে তিনি ঘর ছাড়া।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আলেশা মার্টের প্রতারণার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা মানববন্ধন করে।
মানববন্ধন শেষে ভুক্তভোগী শামীম জানান, অল্প দামে মোটরসাইকেল কিনে অধিক দামে বিক্রির আশায় ২০২১ সালের শুরুর দিকে পরিবার এবং পরিচিতজনদের থেকে ধারদেনা করে এক মাসের মধ্যে ৩২ লাখ টাকার বাইক অর্ডার দেই। কিন্তু আমার বাইক ডেলিভারি দেওয়ার সময় আসলে দেশে ই-কমার্স ব্যবসায় অস্থিরতা শুরু হয়। আমার বাইক আর তারা দেয়নি। এখন পর্যন্ত আমি বাইক বা টাকা কোনটাই পাইনি।
এক সঙ্গে এতোগুলো টাকার বাইক অর্ডার দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমে আমি দুইটা বাইকের অর্ডার দিলে সেগুলো ঠিকমতো ডেলিভারি পাই। পরে লোভে পড়ে আমি আমার পরিচিত লোকদের বোঝাই। তারা বিশ্বাস করে আমার থেকে বন্ড সই নিয়ে টাকা ধার দেয়। আমারও বিশ্বাস ছিলো ৪৫ দিনের মধ্যে বাইক পাবো। কিন্তু এমন হবে সেটা বুঝতে পারিনি।
টাকাগুলো আলেশা মার্টকে কীভাবে দেওয়া হয়েছে জিজ্ঞাস করলে শামীম জানান, ‘ধাপে ধাপে দিয়েছি। ধারের টাকা যখন যত পেয়েছি, আলেশা মার্টের ওয়েবসাইটে গিয়ে বাইক অর্ডার করেছি। ভেবেছিলাম দ্রুত বাইক পেয়ে বিক্রি করে দিলে লাভের পাশাপাশি পাওনা টাকাও পরিশোধ করে দিতে পারবো।’
বর্তমান অবস্থার কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, এখন এই বাড়ি, ওই বাড়ি থাকি। নিজের বাড়িতে যেতে পারি না, সবাই খোঁজে। মারার হুমকি দেয়, মামলার ভয় দেখায়। এখন আমি এই অবস্থা থেকে মুক্তি চাই।’
আরেক ভুক্তভোগী গ্রাহক আল-আমিন জানান, আলেশা মার্ট গত বছরের জুন মাসে একটি ক্যাম্পেইন শুরু করে যেখানে বাইকের উপর ৩৫% ছাড় দিয়ে ৪৫ দিনের মধ্যে ডেলিভারি দেওয়ার কথা বলে। আমি প্রায় ৭ লাখ টাকা বাইক কেনার জন্য দেই। অর্ডার দেওয়ার কিছুদিন পর দেশে ই-কমার্স প্লাটফর্ম নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। আলেশা মার্টও ডেলিভারি দিতে দেরি করা শুরু করলো। পরে টাকা ফেরত দিতে চেক দেয় তারা। কিন্তু ব্যাংকগুলোতে গেলে তারা বলে এই অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা নেই। এইভাবেই আমি ৯ মাস ঘুরছি।
মোহম্মদ শাহিন মিয়া বলেন, আমার দুই লাখ টাকার প্রোডাক্টের অর্ডার ছিল। এক লাখ ৫০ হাজার টাকার চেক ফেরত দিয়েছে। বাকিগুলোর কোনও খবর নেই। কিন্তু সেই চেকের মেয়াদও এখন শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় চেকের বিপরীতে আমি কোনও টাকা তুলতে পারিনি।
মানববন্ধনে আসা অন্যান্য ভুক্তভোগীরা তাদের সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানায়।