আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি পুনরায় চালু করার বিষয়ে নতুন বোর্ডে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন, তার মা ও বোনের জামাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) শামীমা নাসরিনের আইনজীবী আহসানুল করিম এ সংক্রান্ত আদালতের নির্দেশনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, গত ১০ আগস্ট ইভ্যালি পুনরায় চালু করার বিষয়ে আদালতের নির্দেশে গঠিত বোর্ডের কাছে আবেদন করেন কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। একই আবেদনে শামীমা এবং তার মা ও বোনের স্বামীকে পরিচালনা বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়।
ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ আগস্ট বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে আদেশ দেন। সম্প্রতি আদেশের লিখিত অনুলিপি গণমাধ্যমে হাতে আসে।
হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, আদালত নিযুক্ত বোর্ড ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেয়ার হোল্ডার হিসেবে আবেদনকারীদের নাম কোম্পানির রেজিস্টারে নিবন্ধন করতে সব প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবে। বোর্ড নিযুক্ত অডিট ফার্মকে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইভ্যালির অডিট সম্পন্ন করতে হবে। অডিট ফার্ম থেকে অডিট রিপোর্ট পাওয়ার পর আদালত নিযুক্ত বোর্ড ইভ্যালি বন্ধ হওয়ার কারণ সম্পর্কে নিজস্ব অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ দেবেন। আগামী ২২ সেপ্টেম্বরের বোর্ড সভায় শামীমা নাসরিন, তার মা ও বোনের জামাইকে ইভ্যালি পরিচালনার বোর্ড সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করবেন। এই পরিচালনা পর্ষদে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের নিচে নয় এমন কর্মকর্তাকে স্বাধীন পরিচালক হিসাবে রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া নতুন বোর্ডে ই-ক্যাবের একজন প্রতিনিধি থাকবেন। তারপর আদালতের নিযুক্ত পরিচালনা বোর্ড চাইলে পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারবেন। আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এফিডেভিট আকারে হাইকোর্টকে জানাতেও বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর ইভ্যালি পরিচালনার জন্য আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দেয় হাইকোর্ট। বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান, ওএসডিতে থাকা আলোচিত অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন, চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ, কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।
আদেশে বোর্ডের কাজ কি সেটিও বলে দেওয়া হয়। কোম্পানির কোথায় কী আছে, সবকিছু বুঝে নেবে বোর্ড। কোম্পানি যেভাবে চলে, সেভাবে প্রথমে বোর্ড মিটিং বসবে। এরপর সবকিছু করার পর বোর্ড যদি দেখে কোম্পানিটি চলার যোগ্যতা নেই, তখন অবসায়নের জন্য প্রসিড (প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া) করবে। আর যদি চালানো সম্ভব, তাহলে কোম্পানিটি চলবে।
এদিকে ইভ্যালির ম্যানেজিং ডিরেক্টরের শ্বশুর-শাশুড়ি, ভাই-বোন আদালতে সশরীরে হাজির হন। তারা আদালতকে জানান, ইভ্যালি পুনর্গঠনের জন্য কাজ করছেন। যারা ইভ্যালির কাছে টাকা-পয়সা ও পণ্য পাবেন সেগুলো ফেরত দেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে চান তারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট একটা ডিরেকশন দেন, যাতে ইভ্যালির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চেয়ারম্যানের যে শেয়ারগুলো আছে সেগুলোর মধ্যে কিছু সংখ্যক শেয়ার যেন তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করতে পারেন। তিন মাস ধরে ইভ্যালির কেনা-বেচা এবং পণ্য সরবরাহের কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির আয়ের সংস্থান নেই। কিন্তু ব্যয় যথারীতি রয়েছে। ইভ্যালির ওয়েবসাইট ও অ্যাপ বন্ধ রয়েছে।
পরে রাসেল ও শামীমার আত্মীয়-স্বজনদের মৌখিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইভ্যালির এমডি মো. রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের কিছু সংখ্যক শেয়ার তার আত্মীয়-স্বজনের নামে হস্তান্তরে সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ইভ্যালির অন্তর্বর্তীকালীন পরিচালনা বোর্ডকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেন আদালত।
এরপর গত ২৭ এপ্রিল ইভ্যালির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিকাশ, নগদ ও চেকের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে কত টাকা প্রদান করেছেন সেই তথ্য দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, বিকাশ ও নগদের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিও-কে এ তথ্য আদালতে দাখিল করতে বলা হয়।