যুগ যুগ ধরেই গয়না নারীদের কাছে সৌন্দর্য এবং বিলাসিতার আকর্ষণীয় বস্তু।গয়নার প্রতি দূর্বলতা নেই, এমন নারীর সংখ্যা কিন্তু আসলেই খুব কম। বর্তমান বাজারে হাতে তৈরি গয়নার অবস্থান বেশ পাকাপোক্ত বলা যায়।কারন দেশিয় পণ্যের চাহিদা বাড়ার পর থেকেই হাতে তৈরি গয়নার জনপ্রিয়তা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে এফ কমার্স এবং ই-কমার্স এর ভূমিকা অপরিসীম। ই-কমার্স সেক্টর থেকেই মূলত হাতে তৈরি গয়নার প্রচার শুরু। হাতে তৈরি গয়নার মধ্যে পুতি,কাপড়, ধাতু, সুতা,কড়ি,কাঠ,শেল, আর্টিফিশিয়াল ফুল,মুক্তার গয়নাগুলো বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
মূলত এই গয়নাগুলোর বেশিরভাগ কাচামাল সংগ্রহ করা হয় চায়না,ভারত থেকে, কিছু কাঁচামাল দেশেও পাওয়া যায়। এই সকল কাঁচামালের সংমিশ্রণ এবং আমাদের দেশের কারিগরের হাতের জাদু মিলিয়ে তৈরি হয় সুন্দর সুন্দর গয়না।
যেহেতু এই সকল গয়নাগুলো উৎপাদন হয় আমাদের দেশেই , তাই নিঃসন্দেহে এগুলো দেশিয় গয়না। বর্তমানে এই দেশিয় গয়নাগুলোর তালিকায় এক অন্য মাত্রা যোগ করেছে পাটের গয়না। হ্যা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, পাটের গয়নার চাহিদাও এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই গয়নার চাহিদা শীর্ষে। যেহেতু বাংলাদেশ পাট উৎপাদন এ ২য় স্থান এবং পাট রপ্তানিতে ১ম স্থান অধিকারী একটি দেশ। তাই পাটের গয়না এই দেশের “দেশিয় পণ্যের” তালিকায় সুন্দর একটি উপস্থিতি প্রকাশ করে।
মূলত পাটের সুতার সাথে বিভিন্ন কড়ি,সুতা,ধাতু,কাপড়,কাঠ ইত্যাদি কাঁচামালের সংমিশ্রণে হাতে তৈরি হয় এই সুন্দর সুন্দর গয়নাগুলো। যা একই সাথে ব্যাক্তির সৃজনশীলতা প্রকাশ করে।
পাটের গয়নার সবচেয়ে সুন্দর একটি দিক হচ্ছে,এই গয়নার মূল কাঁচামাল পাটের সুতা, যা পাওয়া একেবারেই সহজলভ্য ব্যাপার। এবং পাটের এই সুতাটি একদম ফ্রেশ ভাবেই হাতে পাওয়া যায়। কোনরকম প্রসেসিং ছাড়াই এই সুতা প্যাচিয়ে তৈরি করা যায় চমৎকার সব গয়না।
হাতের নাগালেই কাঁচামাল পাওয়া যাওয়ার কারনে গয়না তৈরিতে খরচ অনেকাংশেই কম থাকে অন্যান্য গয়নার তুলনায়।ফলে এই গয়না বিক্রি করা যায় সাধ্যের মধ্যেই দাম রেখে।
পাট কে আমাদের দেশের সোনালি আঁশ বলা হয়। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে এর অবদান অনেক। পাটশিল্পের এই অবস্থান আমাদের দেশের অর্থনীতি সহ ঐতিহ্য ও বহন করে অনেকাংশে। তাই পাটের তৈরি গয়নাগুলো অন্যান্য দেশের কাছে নিজেদের ঐতিহ্য তুলে ধরতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
পাট পরিবেশ বান্ধব একটি পণ্য। বর্তমান বিশ্ব, পরিবেশ বান্ধব পণ্যগুলোর দিকে বিশেষভাবে নজর দিচ্ছে। যেহেতু পাটের সুতাকে সরাসরিই গয়নার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাই এই গয়না একই সাথে রিসাইকেলিং এবং পরিবেশ বান্ধব পণ্যের চমৎকার একটি উদাহরণ।
তবে এই পাটের গয়নাকে আকর্ষনীয় এবং বাজারে এর চাহিদা জমজমাট করতে চাইলে কয়েকটি বিষয়ে বিশেষ জোর দেয়া উচিত। বিষয় গুলো হলো___ গয়নার কারূকাজ, নিখুঁত ফিনিশিং, টেকসই কিনা গয়নাগুলো ইত্যাদি।
এছাড়াও গয়নার প্রচারের বিশেষ মনযোগ দিতে হবে। আর প্রচারের ক্ষেত্রে বর্তমানে ফেসবুকই হচ্ছে সবচেয়ে সেরা মাধ্যম।
গয়নার সৌন্দর্যের পাশাপাশি গয়নার ভেতরে অন্তর্ভুক্ত থাকা দেশিয় গুনগুলো ও সবার সামনে আনতে হবে। তাহলেই এই গয়নার ব্যবহার বাড়বে।
প্রতিবছর প্রচুর পরিমান গয়নার কাঁচামাল আসে চায়না থেকে। আমরা যদি দেশিয় কাঁচামালে তৈরি এই গয়নাগুলোর দিকে বিশেষ নজর দেই, তাহলে একই সাথে আমাদের কাঁচামাল আমদানির পরিমান কমে যায়, এবং দেশিয় গয়না রপ্তানির পরিমান বেড়ে যায়।
যেহেতু পাটের পাশাপাশি পাট সুতার তৈরি বিভিন্ন শৌখিন জিনিসপত্রের চাহিদাও দেশের বাইরে অনেক, তাই আমার বিশ্বাস একটা সময়ে এই পাটের তৈরি গয়নাগুলো ও আন্তর্জাতিক ভাবে নিজেদের স্থান তৈরি করে নিবে।
তাই পাটের সুতা সহ নানা রকন দেশিয় কাঁচামালে তৈরি গয়নাগুলোর দিকে বিশেষ মনযোগ দেয়া এখন সময়ের দাবি।
ফারিয়া ওমর ঝুমুর
ওনার অফ কারূঘর জুয়েলারি
মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি, টেকজুম. টিভি