পুরনো ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটারের বদলে নতুন ল্যাপটপ-ডেস্কটপ দিচ্ছে দেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্যের ব্র্যান্ড ওয়ালটন। যে কোনো ব্র্যান্ডের সচল বা অচল ল্যাপটপ-ডেস্কটপ জমা দিয়ে সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ ছাড়ে কেনা যাচ্ছে ওয়ালটনের নতুন ল্যাপটপ-ডেস্কটপ। যার মূল্য ৩ মাসে পরিশোধ করার সুযোগ থাকছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে জিরো ইন্টারেস্টে ১২ মাসের ইএমআই সুবিধা।
জানা গেছে, ‘ওয়ালটন ল্যাপটপ এক্সচেঞ্জ অফার’-এর মূল প্রতিপাদ্য ‘নতুন সময়ের নয়া প্রযুক্তি, নবপ্রজন্মের সবুজ পৃথিবী’। প্রধানত দুটি উদ্দেশ্যে এমন উদ্যোগ নিয়েছে ওয়ালটন। সাশ্রয়ী মূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বাংলাদেশে তৈরি বিশ্বমানের ডিজিটাল ডিভাইস তুলে দেয়া এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ই-বর্জ্য’র ক্ষতি থেকে পরিবেশ রক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশকে সবুজে সুশোভিত রাখা।
এ উপলক্ষ্যে সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর ২০২০) বিকেলে রাজধানীর বসুন্ধরায় ওয়ালটন করপোরেট অফিসে আয়োজিত হয় লঞ্চিং প্রোগ্রামের। অনলাইনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। আরো ছিলেন ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম রেজাউল আলম এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস এম মঞ্জুরুল আলম।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটনের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর নজরুল ইসলাম সরকার, বিপণন বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক ইভা রিজওয়ানা নিলু, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এমদাদুল হক সরকার, এস এম জাহিদ হাসান, মো. হুমায়ূন কবীর, উদয় হাকিম, মো. রায়হান ও আমিন খান, ওয়ালটন কম্পিউটার বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী লিয়াকত আলী, হেড অব আইটি গালিব বিন কিবরিয়াসহ প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ওয়ালটনের সিনিয়র ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. ফিরোজ আলম।
এতে জানানো হয়, ‘ল্যাপটপ এক্সচেঞ্জ অফার’-এর আওতায় দেশের যে কোনো ওয়ালটন প্লাজা, ডিস্ট্রিবিউটর শোরুম, আইটি ডিলার এবং মোবাইল ডিলার শোরুমে যে কোনো পুরনো সচল ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ জমা দিলে নতুন ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ কেনায় ২২ শতাংশ ডিসকাউন্ট পাবেন ক্রেতারা। আর পুরনো অচল ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ জমা দিলে মিলবে ১৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট। ডিসকাউন্টের পর পরিশোধযোগ্য মূল্যের ৩০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে নতুন পণ্যটি নেয়া যাবে। বাকি মূল্য কোনো ইন্টারেস্ট ছাড়াই তিন মাসের সহজ কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে।
অনুষ্ঠানে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আইটি খাত থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ এক্সপোর্ট হচ্ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এ খাত থেকে আরো ৫ বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার। লক্ষ্য অর্জনে বেসরকারি খাতে যে সমস্ত কোম্পানি কাজ করছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ওয়ালটন গ্রুপ। ওয়ালটন দেশকে প্রযুক্তিপণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। ওয়ালটনের জন্য আমরা গর্বিত।
তিনি আরো বলেন, মাত্র আড়াই থেকে তিন দশকের মধ্যে ওয়ালটন একটি বিশ্বমানের কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়েছে। ২০১৫ সালের মধ্যেই বিশ্বের অন্যতম সেরা রেফ্রিজারেটর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওয়ালটন আবির্ভূত হয়েছে। সততা, দায়িত্বশীলতা এবং দেশপ্রেম এই তিনটি বিষয়ের কারণে ওয়ালটন খুব অল্পসময়ের মধ্যে স্থানীয় কোম্পানি থেকে বিশ্বের নামকরা ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। আমার বিশ্বাস ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে ওয়ালটন অবদান রাখবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাবের জন্য আমরা ১৩ হাজার ওয়ালটন ল্যাপটপ কিনেছিলাম। আড়াই বছর ধরে সেগুলো চমৎকার সার্ভিস দিচ্ছে। গুণগত মানের দিক থেকে ওয়ালটনের কাছ থেকে আমরা টেকসই ল্যাপটপ পেয়েছি। এছাড়া ‘ওয়ান স্টুডেন্ট, ওয়ান ল্যাপটপ’ প্রজেক্টের জন্য আমরা আরো ২ হাজার ওয়ালটন ল্যাপটপ কিনেছি, ভালো সার্ভিস পাচ্ছি।
সবাইকে দেশে তৈরি পণ্য ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, গত ছয় মাস ধরে আমি ওয়ালটনের একটি ল্যাপটপ ব্যবহার করছি। ওয়ালটন বিশ্বমানের ল্যাপটপ তৈরি করছে। ওয়ালটন ল্যাপটপের মান বিশ্বের কোনো ল্যাপটপের চেয়ে কম না। আমরা যদি নিজেদের তৈরি পণ্য নিজেরা ব্যবহার করি, তবে আমাদের দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। আমরা আত্মনির্ভরশীল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে পারবো। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। লাখ লাখ তরুণ তরুণীর কর্মস্থান হবে।
এস এম রেজাউল আলম বলেন, ই-বর্জ্য যাতে যত্র-তত্র পড়ে পরিবেশ নষ্ট না করে বা ক্ষতির কারণ না হয়, সেজন্য আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি। কারণ প্রতি বছর দেশে প্রায় ১০ লাখ ল্যাপটপ-কম্পিউটার বিক্রি হচ্ছে। এগুলো নষ্ট হয়ে গেলে মানুষ যেখানে সেখানে ফেলছে। যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। এগুলো সংগ্রহ করে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিয়ম অনুযায়ী পরিশোধনের ব্যবস্থা নেয়ার উদ্দেশ্যে ক্রেতাদের এই সুযোগ দেয়া হয়েছে। ওয়ালটনের মূল লক্ষ্য ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় অবদান রাখার পাশাপাশি একটি ই-বর্জ্য দূষণমুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সবুজে সুশোভিত রাখা।
তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাস দুর্যোগের মাঝে শিক্ষার্থীরা যাতে ঘরে বসেই তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারেন এবং অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারেন, তাই তাদের হাতে ডিজিটাল ডিভাইস তুলে দেয়ার জন্য এ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। ফ্রিলান্সারসহ বিভিন্ন স্বাধীন পেশাজীবিরা তাদের পুরনো ডিভাইসটি পাল্টে নতুন অত্যাধুনিক ডিভাইস নিতে পারবেন।
এস এম মঞ্জুরুল আলম বলেন, এর আগে এয়ার কন্ডিশনার এবং টেলিভিশন পণ্যে এক্সচেঞ্জ সুবিধা দেয়া হয়েছে। যা ইতোমধ্যেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এবার ল্যাপটপ-কম্পিউটার পণ্যে এই সুযোগ দেয়া হচ্ছে। আগামিতে ওয়ালটনের অন্যান্য পণ্যেও ক্রেতারা এ ধরনের সুবিধা পাবেন।