ফেনীর উদ্যোক্তা মেহজাবীন রাখীর উদ্যোগের নাম ‘রূপ’স হ্যাভেন’। তিনি মূলত হাতের গয়না নিয়ে কাজ করেন। মাত্র ২০০ টাকা দিয়ে উদ্যোগ শুরু করে বর্তমানে নিজের লেখাপড়া সহ সকল খরচ চালান নিজের আয় থেকে এবং পরিবারের জন্যও কেনাকাটা করেন নিজের আয় থেকে। রাখীর উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প নিয়ে টেকজুমের এবারের আয়োজন। মেহজাবীন রাখীর এর সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানাচ্ছেন মোঃ দেলোয়ার হোসেন।
টেকজুমঃ আপনার সম্পর্কে জানতে চাই।
মেহজাবীন রাখীঃ আমি মেহজাবীন রাখী, ফেনীর মেয়ে। ফেনী সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক শেষ বর্ষে পড়ছি। কর্মজীবী বাবা-মা আর আমরা দুই বোন মিলেই পরিবার। দুই বোনের মধ্যে আমি বড়। তবে ২০১৭ থেকে আমার পেশাদারিত্বের একমাত্র পরিচয় একজন দেশীয়পণ্যের উদ্যোক্তা। এছাড়া সাংস্কৃতিক এবং সাংগঠনিক কর্মী হিসেবেও কাজ করছি আমার জেলাতেই।
টেকজুমঃ কেন উদ্যোক্তা হলেন?
মেহজাবীন রাখীঃ সাধারণ কারণ অনেক থাকলেও প্রধান কারণ নিজস্ব পরিচয়। এছাড়া ফেনীর জন্য কিছু করতে চাওয়া, চাকরীর সুযোগ না থাকা, ইন্টারনেটকে ভালো কাজে লাগানো, স্বাধীনচেতা মন, সৃষ্টি এবং চ্যালেঞ্জিং কাজের আনন্দ, সময়ের সমন্বয় সহ বিভিন্ন কারণে উদ্যোক্তা জীবনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলাম।
টেকজুমঃ উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুর গল্পটা কেমন ছিলো?
মেহজাবীন রাখীঃ ২০১৭ সালে অতিরিক্ত ফেসবুকিং এর কারণে মায়ের শাসন থেকে এই জেদ তৈরি হয় যে, ফেসবুক দিয়ে ভালো কিছু করে দেখাবো। এরপর সেই বছরের জুলাইতে “রূপ’স হ্যাভেন” নামে আমার অনলাইন ভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। মায়ের অনুপ্রেরণায় প্রিয় জিনিস দেশীয় ঘরানার হাতে তৈরী গয়না নিয়ে কাজ শুরু করি। মাত্র দুইশ টাকার বিনিয়োগ দিয়ে। আমার প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কোর্স নেই। কাজ করতে করতে শিখেছি গয়নার খুঁটিনাটি। শুরুটা এভাবেই হয়েছিলো।
টেকজুমঃ কোন ধরণের পণ্য পাওয়া যায় আপনার প্রতিষ্ঠানে?
মেহজাবীন রাখীঃ প্রধান পণ্য নিজস্ব নকশায় হাতে তৈরী গয়না, যেগুলোর কারিগর আমি নিজেই। কানের, গলার, হাতের, পায়ের সহ বিভিন্ন অনুষঙ্গ নকশা করে থাকি। এছাড়া কাঠের ব্র্যান্ডিং চাবির রিং, দেশীয় শাড়ী নিয়ে কাজ করছি। শাড়ীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুতিকোটা, মণিপুরী জুম, তাঁত ইত্যাদি।
টেকজুমঃ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
মেহজাবীন রাখীঃ আজ থেকে তিন বছর আগে স্বপ্ন দেখতাম সবাই আমার নাম এবং কাজ জানবে। আমার জেলার নামের সাথেই উচ্চারিত হবে আমার নাম। সেই স্বপ্ন অনেকটা পূরণ হয়েছে। এখন একই স্বপ্ন দেখি সারাবিশ্ব জুড়ে। ফেনীর দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তাদের উঠে আসায় অবদান রাখতে চাই। আমার হাতে তৈরী গয়নাকে সারাদেশে এবং সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চাই।
টেকজুমঃ উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) থেকে আপনার প্রাপ্তি প্রসঙ্গে কি বলতে চান?
মেহজাবীন রাখীঃ আড়াই বছরের উদ্যোক্তা জীবনে উদ্যোক্তা শব্দের মানেও শিখিনি। উইতে এসে গত সাত মাসে উদ্যোক্তা শব্দের আসল অর্থ/মানে আমার মস্তিষ্কের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গিয়েছে। ই-কমার্সের সঠিক শিক্ষা, সারাদেশের মানুষের সমর্থন, অন্তত পঞ্চাশ জেলার আনাচে কানাচে পরিচিতি, নিজ জেলা প্রতিনিধি, মিডিয়া কাভারেজ, লেখার জন্য সম্মাননা স্মারক, শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ এর মতো ব্যক্তিত্বের দিক- নির্দেশনা, তাঁর ছাত্রী এবং স্নেহভাজন হতে পারা, হাইটেক পার্কের ট্রেনিং এ প্রথম ব্যাচে ফেনী থেকে সুযোগ পাওয়া। শূণ্য থেকে শুরু করে বর্তমানে উই এর মতো জাতীয় পর্যায়ের দেশীয়পণ্যের ই-কমার্স ফোরামের মিডিয়া সাপোর্ট টিম মেম্বার এবং মডারেটর প্যানেলে আছি। সাত মাস শুধু সময় দিয়েছি আর উই আমাকে তার সাত হাজার গুণ সুফল রিটার্ন দিয়েছে এবং দিয়েই চলেছে। প্রাপ্তি আসলে এতো কম বাক্যে বলা অসম্ভব। আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে চাই উইয়ের মাননীয় প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপুর এবং উইয়ের সম্মানিত উপদেষ্টা, ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং সার্চ ইংলিশের প্রতিষ্ঠাতা রাজিব আহমেদ ভাইয়ার প্রতি। কৃতজ্ঞতা কাকলী আপুর প্রতি এবং উই এর দেড় লাখ সদস্যের প্রতি।
টেকজুমঃ সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ রাখী আপনাকে।
মেহজাবীন রাখীঃ টেকজুমকে ধন্যবাদ।