পাবনার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস মহুয়া, বর্তমানে পড়াশোনা এবং নিজস্ব উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন নিজ শহর বগুড়ায়। সরকারী শাহ সুলতান কলেজ, বগুড়া থেকে ইংরেজি বিভাগে স্নাতকোত্তর করছেন। তিন ভাইবোনের মধ্যে মহুয়া সবার ছোট। শারীরিক প্রতিবন্ধী মহুয়ার সারা দিন কাটে হুইলচেয়ারে। চমৎকার ছবি আঁকেন, সেলাইয়ের হাতও পাকা মহুয়ার। এছাড়া বাকি সব কাজে মহুয়ার একমাত্র সহায়ক তার মা। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মহুয়া হয়ে উঠেছেন উদ্যোক্তা। কাজ করছেন হাতের কাজের পোশাক নিয়ে, উদ্যোগের নাম “রংধনু”। মহুয়ার উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প নিয়ে টেকজুমের এবারের আয়োজন। জান্নাতুল ফেরদৌস মহুয়ার সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানাচ্ছেন মেহজাবীন রাখী।
টেকজুমঃ আপনার উদ্যোক্তা জীবনের শুরু কিভাবে?
মহুয়াঃ পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় বাবা স্বপ্ন দেখতেন আমি বিসিএস ক্যাডার হবো এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি চলছিলো। কিন্তু ছোট বেলা থেকেই ভীষণ জেদি আর স্বাধীনচেতা আমি। সবসময় নিজের পরিচয় গড়া কে প্রাধান্য দিয়েছি। ২০১৭ স্নাতক ২য় বর্ষের পরীক্ষা দেওয়ার পর আমার মনে হলো শুধু চাকরি করে হয়তো টাকা উপার্জন করতে পারবো কিন্তু নিজের অস্তিত্ব গড়ে তুলতে পারবো না। দেশীয় পণ্যের প্রতি অতিরিক্ত নেশা ছিল আমার এবং এটা নিয়ে কিছু করতে চেয়েছি। আমার মতো যারা প্রতিবন্ধী, যাদেরকে পরিবার ও সমাজ অবহেলা করে তাদের জন্য কিছু করতে চেয়েছি। সেলাই শিখেছি মায়ের কাছে এবং সেই থেকেই উদ্যোক্তা জীবনের শুরু। প্রথম এ কিছু কাপড় কিনে এনে বিক্রি করতাম। এখন কর্মী দিয়ে করাই। বর্তমানে আমার অধীনে ত্রিশ জন কর্মী কাজ করছে বিভিন্ন পর্যায়ে।
টেকজুমঃ ক্যারিয়ারে ই-কমার্স বিজনেসকেই কেন বেচে নিলেন?
মহুয়াঃ উদ্যোক্তা জীবনের প্রথম বছর অফলাইনে ব্যবসা করেছি। কিন্তু দেখলাম এতে আমার পোশাক শুধু নিজ এলাকায়, আত্মীয় স্বজন, কলেজ এর মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছি শুধু। কিন্তু আমি তো চাই পুরো বিশ্ব আমার পণ্য গুলো দেখুক। ই-কমার্স বিজনেস ছাড়া সেটা অসম্ভব।
টেকজুমঃ আপনার উদ্যোগ “রংধনু” কে ভবিষ্যতে কোথায় দেখতে চান?
মহুয়াঃ আমি চাই আমার “রংধনু” আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। এটা এখন শুধু আমার স্বপ্ন না। আমার পরিবার, আমার আত্মীয় স্বজন এবং আমার ত্রিশ জন কর্মীদের স্বপ্ন, যাদের ছাড়া আমার “রংধনু” অসম্পূর্ণ। এর জন্য আমি সর্বোচ্চ পরিশ্রম করতে প্রস্তুত।
টেকজুমঃ মহুয়ার ‘মহুয়া’ হয়ে ওঠায় উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) এর কৃতিত্ব কতটা?
মহুয়াঃ আমি এটা শুনলেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি, উই আমাকে বিনামূল্যে ব্যবসা শিখিয়েছে যা আগে কোথাও টাকা দিয়েও পাইনি। অর্ডার ছিলোই না প্রায়। গতবছর বাবার মৃত্যুর পর একদম ভেঙ্গে পড়ি। উদ্যোগে ধস নামে, আর্থিক অসচ্ছলতা দেখা দেয়। ঠিক এ সময় দেখা পাই উই এর। পাঁচ মাস উইতে শেখার জন্য সময় দেই। মে মাসের ৭ তারিখে প্রথম অর্ডার আসে উই থেকে। বর্তমানে আমার বিক্রি দুই লক্ষ টাকার বেশি। মাত্র ৫৮ দিনে উই এর মাধ্যমে প্রবাসীরাও অর্ডার দিচ্ছেন। বর্তমানে আমার নকশা করা দেশীয় হাতের কাজের পোশাক লন্ডন, কুয়েত, মালেশিয়া এবং ইংল্যান্ডেও যাচ্ছে। শুধু উই এর জন্যই আজ আমি মহুয়া সকলের কাছে “রংধনু আপু” নামে পরিচিত। আমার স্বপ্নও সত্যিই হচ্ছে একটু একটু করে।
টেকজুমঃ ধন্যবাদ মহুয়া,আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।
মহুয়াঃ টেকজুমকেও ধন্যবাদ।